পাহাড়ে পরিস্থিতি ‘অত্যন্ত নাজুক’: সন্তু লারমা

সরকার শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ‘বন্ধ রাখায়’ পার্বত্য অঞ্চলের সামগ্রিক পরিস্থিতি ‘অত্যন্ত নাজুক’ হয়ে পড়েছে বলে দাবি করেছেন জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2015, 08:00 AM
Updated : 28 Nov 2015, 08:00 AM

চুক্তির অষ্টাদশ বার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার রাজধানীর সুন্দরবন হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন সরকারের সঙ্গে চুক্তিকারী সংগঠনটির এই সভাপতি।

চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়নের দাবিতে আগামী ২ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় রাঙামাটি জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণে এক গণসমাবেশের কর্মসূচির ঘোষণাও দেওয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে।

চুক্তির দুই-তৃতীয়াংশ ধারা বাস্তবায়িত হয়নি দাবি করে সন্তু লারমা বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা একটি জাতীয় ও রাজনৈতিক সমস্যা। বস্তুত দেশের সামগ্রিক স্বার্থেই পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে রাজনৈতিক ও জাতীয়ভাবে সমাধানের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তাই দেশ ও জাতির স্বার্থে অনতিবিলম্বে এ চুক্তি বাস্তবায়ন অপরিহার্য।

“কিন্তু সরকার চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রেখেছে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় সেখানকার সামগ্রিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক।”

১৯৯৭ সালে সরকারের সঙ্গে শান্তি চুক্তি সই করে স্বাধিকারের দাবিতে পাহাড়ে সশস্ত্র সংগ্রামের ইতি ঘটান সন্তু লারমা।

তারপর থেকে চুক্তি বাস্তবায়নের গতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন তিনি। পুনরায় অস্ত্র হাতে নেওয়ার হুমকিও কয়েকবার দিয়েছিলেন তিনি।    

সংবাদ সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ‘যথাযথ’ বাস্তবায়নের জন্য রোডম্যাপ তৈরিসহ ছয়টি দাবি জানানো হয়।

এর মধ্যে রয়েছে- আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের সব বিষয় ও কার্যাবলি কার্যকর করা, অপারেশন উত্তরণ বন্ধসহ সব অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন সংশোধন করে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করা, জুম্ম শরণার্থী ও আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের যথাযথ পুনর্বাসন, ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি ও বাংলাদেশ পুলিশ আইন এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধনসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সব অবাস্তবায়িত বিষয় দ্রুত বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।

অন্য দাবিগুলো হচ্ছে- পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণের জন্য আইনি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ,সেটেলার বাঙালিদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সম্মানজনকভাবে পুনর্বাসন,পার্বত্য চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থি কার্যক্রম অচিরেই বন্ধ করা এবং.পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ও মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম স্থগিত রাখা ও এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে ভর্তির পদক্ষেপ গ্রহণ।

সংবাদ সম্মেলনে সন্তু লারমার পাশে ছিলেন জনসংহতি সমিতির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মঙ্গল কুমার চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং।

কলামনিস্ট  সৈয়দ আবুল মকসুদ, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেসবাহ কামালও সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন।