যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনারের বিবৃতির প্রতিবাদ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) বিচার প্রক্রিয়ার ‘স্বচ্ছতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের দপ্তরের বিবৃতির কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2015, 02:40 PM
Updated : 26 Nov 2015, 02:40 PM

ট্রাইব্যুনাল নিয়ে সব ধরনের অভিযোগ নাকচ করে মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের কার্যালয়ে (ওএইচসিএইচআর) একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বাস্তবতা সম্পর্কে ‘ভুল ধারণা বা ভুল উপলব্ধি’ থেকে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে ওএইচসিএইচআর যে সিদ্ধান্ত টেনেছে তাতে বাংলাদেশ সরকার ‘ক্ষুব্ধ’ হয়েছে।

চিঠিতে ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া, রায়ের বিরুদ্ধে উভয়পক্ষের আপিল এবং তারপরে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের শুনানির বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

একাত্তরে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে ট্রাইব্যুনালে শুধু তাদের বিচার হচ্ছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই বিচারের ক্ষেত্রে কারও বর্তমান রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা করা হচ্ছে না বলে এতে বলা হয়।

“এসব মামলার ক্ষেত্রে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় বা সম্পৃক্ততার বিষয় নেই এবং তারা যে কয়েকটি বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য তা ওই অপরাধের বিচার শুরু হওয়ায় ঘটনা সংশ্লিষ্টতার কারণে হয়েছে।”

এছাড়া যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত বা ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত কয়েকজন ক্ষমতাসীন দল বা তাদের জোট শরিক দলের সদস্য বলেও চিঠিতে জানানো হয়েছে।

যুদ্ধাপরাধী বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর মঙ্গলবার জাতিসংঘের এই মানবাধিকার সংস্থা এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দেয়।

এতে ট্রাইব্যুনালের বিচার  প্রক্রিয়ার ‘স্বচ্ছতা ও আন্তর্জাতিক মান' নিয়ে প্রশ্ন তুলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান বিলোপের আহ্বান জানানো হয়।

তাদের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে পাঠানো চিঠিতে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিভ্রান্তি নিরসনে যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের মামলার রায় ও মৃত্যদণ্ড কার্যকর সংক্রান্ত পূর্ণ বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে চিঠিতে।

নাগরিক অধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক চুক্তি (আইসিসিপিআর) স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিচার প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বলেও চিঠিতে বলা হয়।

আইসিসিপিআর'র ১৪ নম্বর ধারায় অভিযুক্তদের জন্য সংরক্ষিত অধিকারের সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ১৯৭৩ সালের আইসিটি আইনের কোনো ধারা সাংঘর্ষিক নয় বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

আইসিটি আইন-১৯৭৩ বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদের মাধ্যমে প্রণীত বলে জানানো হয়।

আদালতের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরই কেবল দোষী ব্যক্তিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই বিচার কার্যক্রমের মাধ্যমে বহু বছরের বিচারহীনতার সংস্কৃতি, ভুক্তভোগীদের বিচার পাওয়া নিশ্চিত করার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলেও এতে বলা হয়েছে।

২০১৪ সালের ১৬ জানুয়ারি ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে গৃহীত এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবেও বিষয়টি উঠে এসেছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

এতে আরও বলা হয়, এটি ‘দুর্ভাগ্যজনক’ যে কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠী এখনও অভিযুক্ত ও দোষীদের কথা আওড়িয়ে ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে ‘পক্ষপাতমূলক ও ভিত্তিহীন’ মন্তব্য করে যাচ্ছে।

বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে এমন বিবৃতি দিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনারের দপ্তর যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাদের পক্ষ নিয়েছে কি না সেই প্রশ্নও তোলা হয়েছে চিঠিতে।