কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার দাশিয়ারছড়া ছিটমহলের (সদ্য বিলুপ্ত) সত্তোরর্ধ্ব এই নারী স্বামীর কবরের কাছে থাকতে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বাংলাদেশের ভেতরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহলের একটি দাশিয়ারছড়া, গত ১ অগাস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে ছিটমহল বিনিময়ের পর যা এখন বাংলাদেশের অংশ।
দুই দেশের ভেতরে থাকা ছিটমহলগুলো মূল ভূখণ্ডের অংশ হয়ে যাওয়ায় এগুলোর বাসিন্দাদের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, পছন্দের দেশের নাগরিকত্ব বেছে নেওয়ার।
শামসুন্নাহাররা এতদিন বাংলাদেশের ভেতরে থাকলেও তারা ছিলেন কাগজে-কলমে ভারতের নাগরিক, যদিও নাগরিক কোনো সুবিধা ছিল না তাদের।
এখন তাদের সামনে বাংলাদেশি হয়ে আগের ভূমিতে থেকে যাওয়ার সুযোগ যেমন রয়েছে, তেমনি ভারতের নাগরিকত্ব বেছে নিয়ে বাস্তুভিটা ছেড়ে চলে যাওয়ার দরজাও খোলা।
ছিটমহল বিনিময়ের সময় জনগণনা শুরু হলে শামসুন্নাহারের পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়েসহ পরিবারের ১১ জন সদস্যই নাম লিখিয়েছেন ভারতে যাওয়ার তালিকায়। কিন্তু ব্যতিক্রম এই বৃদ্ধা।
তার স্বামী মুক্তিযোদ্ধা আলী উল্লাহ পাটোয়ারী চার বছর আগে মারা গেলে বসতভিটার কাছে তাকে কবর দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের আগে তাদের বিয়ে হয়েছিল।
শামসুন্নাহারের বড় ছেলে শাহজামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বসত ভিটার ১২ শতাংশ জমি ছাড়া আর কোনো সম্পদ না থাকায় আমাদের পাঁচ ভাই ও দুই বোনকে নিয়ে মার নিদারুণ অভাবে দিন কেটেছে। ছিটের বাসিন্দা হওয়ায় সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধাও মেলেনি।”
বন্দিজীবনের কষ্ট সইতে না পেরে শাহজামান তার অন্য তিন ভাই শাহজাদা, শামসুল, রবিউলকে নিয়ে আগেই পাড়ি জমিয়েছেন দিল্লিতে।
“সেখানে কখনও কৃষিকাজ, কখনও ইট ভাটায় কাজ করে আমাদের দিন চলে।”
গত জুলাইয়ে ছিটমহল বিনিময় বাস্তবায়নে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ জনগণনা শুরু হলে তিন ভাই ফিরে আসেন।
পরিবারের ১১ সদস্যেকে ভারতে যাওয়ার জন্য নাম লিখালেও রাজি করাতে পারলেও মা শামসুন্নাহারকে মানাতে পারেননি তার সন্তানরা।
“আমরা তাকে (শামসুন্নাহার) নানাভাবে বুঝিয়েছি, কিন্তু তিনি যেতে রাজি নন, তিনি বাংলাদেশে থাকার মত দিয়েছেন,” বলেন শাহজামান।
তিনি বলেন, “বাবা বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। এ কারণে এই দেশকেই তিনি নিজের দেশ মনে করেন। এমনকি তিনি মারা গেলে যেন বাবার পাশে কবর দেওয়া হয়, এই ইচ্ছার কথাও আমাদের বলেছেন তিনি।”
মাকে ভারতে নিয়ে যেতে না পারার আক্ষেপ থাকলেও তার সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান রয়েছে শাহজামানের।
তিনি বলেন, “মা এদেশ ছেড়ে কখনোই ভারতে যাবেন না। ভিক্ষা করে খেলেও এদেশেই থাকবেন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত স্বামীর স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে চান তিনি।”