নজরুল পরিবারের বিরুদ্ধে ‘আসামি’ ইয়াছিনের মামলা

নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার আসামির তালিকা থেকে বাদ পড়ে এবার নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের শ্বশুর, শ্যালক, ভাই ও ভাগ্নেসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা ইয়াছিন মিয়া।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 July 2015, 06:11 PM
Updated : 30 July 2015, 06:12 PM

গত বছরের ২৭ এপ্রিল নজরুলসহ সাতজন অপহৃত হওয়ার পর তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি যে মামলা করেছিলেন, তাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়াকে আসামি করা হয়েছিল।

নজরুলের স্ত্রীর এজাহার থেকে তৎকালীন কাউন্সিলর নূর হোসেনকে রেখে ইয়াছিনসহ অন্য পাঁচজনকে বাদ দিয়ে তিন মাস আগে পুলিশ অভিযোগপত্র দেয়।

তবে তার বিরুদ্ধে সেলিনার আদালতের দ্বারস্ত হওয়ার মধ্যে তার স্বজনদের ইয়াছিন মিয়ার মামলার আসামি করা হল। 

পুলিশের অভিযোগপত্রের পর জনসম্মুখে আসা ইয়াছিন মিয়া গত ২৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা দুটি করেন। বৃহস্পতিবার খবরটি জানাজানি হয়।

দুই মামলায়ই বাদী ইয়াছিন মিয়া নিজেকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উল্লেখ করেছেন, যদিও সাত খুনের ঘটনা জানাজানির পর তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।

দুটি মামলায়ই নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম, ভাই আবদুস সালাম, দুই শ্যালক সাইদুল ও মামুন, ভাগ্নে রনি ও শহীদুল ইসলামের স্বজন রফিকুল ইসলাম মিন্টুকে আসামি করা হয়েছে।

একটি মামলায় তিনি অভিযোগ করেছেন,  ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল বিকেল ৫টায় আসামিরা তার অংশীদারিত্বে পরিচালিত মেসার্স শামস ফিলিং স্টেশনে গিয়ে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় তারা ফিলিং স্টেশনের ক্যাশ বাক্স ও লোহার সিন্দুক ভেঙে নগদ ২০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেন এবং পাঁচ লরি অকটেন, পেট্রোল ও ডিজেলে আগুন ধরিয়ে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নষ্ট করেন, যার আনুমানিক মূল্য ৫০ লাখ টাকা।

অন্য মামলায় ইয়াছিনের অভিযোগ, ২০১৪ সালের ১ মে রাত ৮টায় আসামিরা তার মিজমিজি পশ্চিমপাড়ার বাসায় হামলা চালিয়ে ১৫ লাখ টাকার স্বর্ণলঙ্কার এবং নগদ সাড়ে ৩ লাখ টাকা চুরি করে নেওয়ার পাশাপাশি দরজা-জানালা আসবাবপত্র ভাংচুর করে দুটি কক্ষে আগুন লাগিয়ে দেয়।

নজরুল অপহরণের পর জনতা নুর হোসেনের পাশাপাশি ইয়াছিন মিয়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়েছিল।

সাত খুনের তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্য দিতে হাজির নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম, পাশে দাঁড়িয়ে (পাঞ্জাবি পরা) নজরুলের ভাই আব্দুস সালাম। (ফাইল ছবি)

ইয়াছিনের দ্বিতীয় মামলায় নজরুলের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে তার সমর্থক হিসেবে পরিচিত কবির হোসেন, বাবুল মিয়া, মো. আলী ও রফিকুল ইসলাম মিন্টুকে আসামি করা হয়েছে।

আদালত নালিশি মামলা দুটি গ্রহণ করে অভিযোগ তদন্ত করে আগামী ৩০ অগাস্টের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে বলে ইয়াছিনের আইনজীবী মহসিন আলী জানিয়েছেন।

মামলায় ইয়াছিন মিয়া বলেছেন গত ৮ জুলাই সাত খুনের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়ে এলাকায় ফিরেছেন তিনি।  

ইয়াছিন মিয়ার মামলার প্রতিক্রিয়ায় স্বামীর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর বিউটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইয়াছিনের সহযোগিতা পেয়েই নুর হোসেন সাতজনকে অপহরণ, খুন ও লাশ গুমের দুঃসাহস দেখিয়েছে।

“সাত খুনের পর নূর হোসেন ও ইয়াছিনের সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ নানা অপকর্মের শিকার বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী তাদের যাত্রা প্যান্ডেল, জুয়া-মাদকের আস্তানায় হামলা চালিয়েছে, যা বিভিন্ন গণমাধ্যম সরাসরি সম্প্রচার করেছে।”

সম্প্রতি ইয়াছিন এলাকায় ফিরে আসার পর থেকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছিল বলেও অভিযোগ করেন নজরুলের স্ত্রী।

“হাজার হাজার মানুষ সেদিন ইয়াছিন, নুর হোসেনদের অপকর্মের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামলেও এক বছর পরে আসামি করা হয়েছে শুধু আমাদের পরিবারের সদস্যদের। মিথ্যা অভিযোগে হয়রানিমূলক মামলা করে ইয়াছিন আবারও প্রমাণ করলেন নূর হোসেনের সঙ্গে তিনিও সাত খুনে জড়িত।”

ইয়াছিন ছাড়াও পুলিশের অভিযোগপত্রে অব্যাহতি পাওয়া আমিনুল ইসলাম রাজু ও ইকবাল হোসেন এলাকায় ফিরে এসে তাদের হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিউটি।

“অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সাত খুনের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার,  প্রতিবাদকারীরাই এখন মিথ্যা অভিযোগে বিভিন্ন মামলায় আসামি হচ্ছেন।”

গত বছরের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে ছয় জনের লাশ পাওয়া যায়। পরদিন ভেসে উঠে অন্যজনের লাশও।

এই হত্যাকাণ্ডে র‌্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর তা নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় ওঠে। পরে তদন্তেও র‌্যাব কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলে।

র‌্যাব-১১ এর তৎকালীন অধিনায়ক তারেক সাইদ মোহাম্মদ, আরিফ হোসেন, এসএম রানাসহ মোট ৩৫ জনকে এই মামলার আসামি করেছে পুলিশ।