উহানের ল্যাব নিয়ে ‘সন্দেহ’, চীনা গণমাধ্যমে ফাউচির কড়া সমালোচনা

সপ্তাহের পর সপ্তাহ রিপাবলিকানদের আক্রমণাত্মক কথাবার্তার মুখোমুখি হওয়া অ্যান্থনি ফাউচির সমালোচক তালিকায় এবার নতুন যুক্ত হয়েছে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের নাম।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2021, 12:39 PM
Updated : 26 May 2021, 12:39 PM

কমিউনিস্ট পার্টিশাসিত দেশটির রাষ্ট্র-পরিচালিত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসে যুক্তরাষ্ট্রের এ শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞের কড়া সমালোচনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিএনএন।

চলতি সপ্তাহে চীনের ওই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রধান সম্পাদক হু জিজিনের এক নিবন্ধের শিরোনামই ছিল ‘যুক্তরাষ্ট্রের অভিজাতদের নৈতিকতায় আরও অধঃপতন, এদের মধ্যে আছেন ফাউচিও’।

এ নিবন্ধে মার্কিন শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞের বিরুদ্ধে করোনাভাইরাস উহানের একটি ল্যাব থেকে ছড়িয়েছে এ সংক্রান্ত ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্বে হাওয়া দিয়ে’ চীনের বিরুদ্ধে ‘বড় ধরনের মিথ্যাকে উসকে’ দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন হু।

গ্লোবাল টাইমসে প্রকাশিত আরেকটি নিবন্ধে বলা হয়েছে, ফাউচি ‘চীনা বিজ্ঞানীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন’।

মার্কিন এ বিশেষজ্ঞের প্রতি চীনাদের ক্ষোভের কেন্দ্রে রয়েছে চলতি মাসে তার করা এক মন্তব্য; যেখানে ফাউচি ‘কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট’ এমন ধারণায় আর আস্থা রাখতে পারছেন না বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

“চীনে কী হয়েছিল সে বিষয়ক তদন্ত অব্যাহত রাখা উচিত বলে মনে করি আমি, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা আমাদের সর্বোচ্চ সক্ষমতা দিয়ে কী হয়েছিল তা বের করতে পারি,” গত ১১ মে তথ্যের সত্যতা যাচাই সংক্রান্ত এক সভায় এমনটাই বলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের এ পরিচালক। 

এ মন্তব্যকে করোনাভাইরাসের উদ্ভব নিয়ে তার আগের অবস্থান থেকে অনেকখানি সরে আসা হিসেবেই দেখছেন পর্যবেক্ষকরা।

ফাউচি আগে একাধিকবার কোভিড-১৯ ‘সম্ভবত অন্য কোনো প্রাণীদেহ থেকে মানবদেহে এসেছে’ এ ধারণার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করেছিলেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের নভেম্বরে উহানের ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির তিন গবেষক এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে তারা হাসপাতালে ভর্তি হতে চেয়েছিলেন।

প্রতিবেদনের এ তথ্য সত্য হলে চীনের ল্যাব থেকেই করোনাভাইরাসের উদ্ভব কিনা তা জানতে বিস্তারিত তদন্তের আহ্বান আরও জোরদার হবে, বলছে সিএনএন।

চীন অবশ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ওই প্রতিবেদনকে উড়িয়ে দিয়েছে। এর আগেও তারা চীনা ল্যাবের সঙ্গে করোনাভাইরাসের উৎসের যোগসাজশের সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনের সঙ্গে ‘তথ্যপ্রমাণের কোনো সামঞ্জস্য নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান।

উহানের ল্যাবের পরিচালক বলেছেন, ওই প্রতিবেদন ‘পুরোপুরি মনগড়া’।

প্রায় একই সময়ে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ফাউচির পেছনে লাগে; তাদের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞও ‘চীনের বিরুদ্ধে কথার যুদ্ধে’ যোগ দিয়েছেন।

অথচ কিছুদিন আগেও চীনা গণমাধ্যমে ফাউচির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা দেখা গেছে।

গত বছর মার্কিন এ বিশেষজ্ঞ যখন ধারাবাহিকভাবে মহামারী মোকাবেলায় ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপের সমালোচনা করেছিলেন, চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম তখন তার ‘পেশাদারিত্ব ও সত্য বলার সাহসের’ তারিফ করেছিল।

গ্লোবাল টাইমসে হু’র নিবন্ধ প্রকাশিত হওয়ার পর ফাউচি ১১ মে’র সভায় করা তার মন্তব্য নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করারও চেষ্টা করে যাচ্ছেন। 

মঙ্গলবার তিনি সিবিএস নিউজের উইজিয়া জিয়াংকে বলেছেন, করোনাভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে তার অবস্থানের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি; ভাইরাসটি যে ‘প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট’ এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা ‘সবচেয়ে বেশি’ বলে এখনও মনে করেন তিনি।

টুইটারে দেওয়া পোস্টে জিয়াং লিখেছেন, “যেহেতু কেউই শতভাগ নিশ্চিত নয়, এ কারণেই তিনি (ফাউচি) বিস্তারিত তদন্তের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এর অর্থ এমন নয় যে তিনি মনে করেন ভাইরাস ল্যাব থেকেই প্রথমে এসেছে, যেমনটা অন্যরা ইঙ্গিত দিচ্ছে- বলেছেন ড. ফাউচি।”

তার এই ব্যাখ্যা চীনাদের সন্তুষ্ট করেছে কিনা, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।