কোভিড-১৯: লাতিন আমেরিকায় অবনতি, মৃত্যু ১০ লাখ ছাড়াল

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে প্রাণহানির সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে রয়টার্স।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2021, 04:53 AM
Updated : 22 May 2021, 04:53 AM

মহামারী পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে বিশ্বের এই প্রান্তে, যেখানে মাথাপিছু মৃত্যুর হারও সবচেয়ে বেশি।

গবেষণা সংস্থা আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডেটার তথ্যানুযায়ী, ইউরোপ, এশিয়া ও উত্তর আমেরিকায় সংক্রমণের হার কমে এসেছে, আফ্রিকায় অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলে মাথাপিছু সংক্রমণ দ্রুত বেড়ে চলেছে।

অবশ্য একক দেশ হিসেবে এ মুহূর্তে মহামারীতে সবচেয়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে ভারত।

মে মাসে বিশ্বে কোভিডে মৃত্যুর ৩১ শতাংশই ছিল লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে, যেখানে পৃথিবীর মাত্র আট দশমিক চার শতাংশ লোকের বসবাস।

গত এক সপ্তাহ ধরে কোভিড-১৯ এ মাথাপিছু সবচেয়ে বেশি মৃত্যুহার রয়েছে যে আটটি দেশে, সেগুলোর সবই লাতিন আমেরিকার।

বলিভিয়ার ধূলি ধুসরিত মালভূমি থেকে ব্রাজিলের সাও পাওলোর মতো মহানগরী, মহামারী ভাসিয়ে নিয়ে গেছে ওই অঞ্চলের রুগ্ন স্বাস্থ্যসেবা খাতকে। এই অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশই ‘দিন আনি দিন খাই’ পরিস্থিতিতে থাকায় লকডাউনেও তারা ঘরে বসে থাকতে পারেনি। ফলে ওই অঞ্চলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পরে।

মহামারীতে সবচেয়ে বিপর্যস্ত পেরুর পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। রাজধানী লিমার হাসপাতালে রোগী উপচে পড়ছে, করিডোরে রোগী মারা যাচ্ছে।

এ বছর ব্রাজিলের অ্যামাজন জঙ্গলের কাছের শহর মানয়সে রোগীরা অক্সিজেনের অভাবে বাড়িতেই মারা যাচ্ছে, কারণ সেখানে অক্সিজেনের সরবরাহ শেষ হয়ে গেছে।

চিকিৎসক ও মহামারীবিদরা বলছেন, গত বছর করোনাভাইরাস মহামারী ওই অঞ্চলে অপ্রস্তুত সরকারগুলোর জন্য একটি বিস্ময়ের ধাক্কা হয়ে আসে এবং যেসব রাষ্ট্র নেতারা এর গুরুত্বকে খাটো করার চেষ্টা করেছেন তারা পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। তারা একইসঙ্গে সময়মতো টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতেও ব্যর্থ হয়েছেন।

মেক্সিকোর অন্যতম শীর্ষস্থানীয় হাসপাতালের কোভিড-১৯ প্রতিরোধ কার্যক্রমের প্রধান ড. ফ্রানসিসকো মোরেনো সানচেজ বলেন, “মহামারী মোকাবেলার প্রস্তুতি না নিয়ে, আমরা রোগটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছি এটা বলে যে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উষ্ণতা ভাইরাসকে নিষ্ক্রীয় করে দেবে।” সরকারের টিকাদান কর্মসূচিরও সমালোচনা করেন তিনি।

রয়টার্সকে তিনি বলেন, “দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের অংশ, যেখানে মহামারীর মোকাবেলা করা হচ্ছে সবচেয়ে ভুল ভাবে, এবং এখন আমরা প্রতিফল ভোগ করছি।”

বিপর্যস্ত ব্রাজিল

মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলায়, অনেক দেশে গোড় খোদকরা বাধ্য হয়েছেন সমাধীক্ষেত্রের সীমানা বাড়াতে, সারির পর সারি নতুন সমাধি গড়ে উঠছে। ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মানুসারী অধ্যুসিত অঞ্চলটিতে প্রচলিত সংস্কৃতি উপেক্ষা করে হাতেগোণা স্বজনের উপস্থিতিতে বা কারো উপস্থিতি ছাড়াই মৃতদের সমাধিস্থ করা হচ্ছে।

প্রাণহানির বড় একটি অংশ- প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে ব্রাজিলে। যুক্তরাষ্ট্রের পর সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ নিয়ে দক্ষিণ অ্যামেরিকার বৃহত্তম দেশটি মহামারীর কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে এ বছরের শুরুতে, যদিও দ্রুতই ভারত সেই স্থান দখল করে নেয়।

ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সেদেশে কোভিডে মারা গেছে দুই হাজার ২১৫ জন। এর মধ্যদিয়ে দক্ষিণ অ্যামেরিকায় এই মহামারীতে মৃতের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছ।

কোভিড-১৯ মোকাবেলায় একটি জাতীয় কর্মসূচির পরিকল্পনা করতে এবং সময়মতো টিকা কিনতে না পারার ব্যর্থতার অভিযোগে দেশটির একটি পার্লামেন্টারি কমিশন কট্টর-ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট জেইর বোলসোনারোর সরকারের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে।

কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হিসেবে নিশ্চিতভাবে সনাক্ত হয়েছে এমন জনগোষ্ঠীর হিসাবে শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের পর তৃতীয় অবস্থানে আছে ব্রাজিল। দক্ষিণ অ্যামেরিকা অঞ্চলে সেদেশে প্রাণহানি সবচেয়ে বেশি। পরের দুটি অবস্থানে আছে মেক্সিকো ও কলম্বিয়া - এই তিন দেশের মোট মৃত্যুর সংখ্যা পুরো মহাদেশের মৃত্যুর সংখ্যার ৭৪ শতাংশ।

রয়টার্সের বিশ্লেষণ থেকে দেখা যাচ্ছে, গড় মৃত্যুর বিবেচনায় পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে। দক্ষিণ অ্যামেরিকায় দৈনিক গড় প্রাণহানির সংখ্যা এপ্রিলের চার হাজার ৫৫৮ থেকে মে মাসে তিন হাজার ৮৭২ জনে নেমে এসেছে। তবে সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে এবং মৃত্যুর সংখ্যা সাধারণত সংক্রমণ বাড়ার কয়েক সপ্তাহ পর বাড়তে শুরু করে।

আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডেটার ১৯ মে পর্যন্ত তথ্যানুযায়ী, দক্ষিণ অ্যামেরিকায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকাদান কার্যক্রমও বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের তুলনায় পিছিয়ে। সেখানে মাত্র ১৫ শতাংশ জনগণ এক ডোজ টিকা পেয়েছে। এই হার ইউরোপে ২৮ এবং উত্তর অ্যামেরিকায় ৩৪ শতাংশ। শুধু এশিয়া এবং আফ্রিকা এক্ষেত্রে পিছিয়ে, দুই মহাদেশে এই হার যথাক্রমে ৫ ও ১ শতাংশ।

প্যান অ্যামেরিকান হেলথ অরগানাইজেশন (পিএএইচও) টিকাপ্রাপ্তিতে বৈষম্যের সমালোচনা করেছে। পিএএইচওর পরিচালক কারিসা এতিয়েনে এ সপ্তাহে রয়টার্সকে বলেন, পুরো অ্যামেরিকা জুড়ে এ পর্যন্ত যে ৪০ কোটি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে তার সিংহভাগই পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ। “দক্ষিণ অ্যামেরিকার মাত্র তিন শতাংশ মানুষ পুরোপুরি টিকা পেয়েছে। আমাদের দ্রুত আরও টিকা দরকার।”

এর পাশাপাশি ওই অঞ্চলের দেশগুলোতে টিকা সরবরাহে ধীর গতি এবং টিকাদান কর্মসূচির বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার স্বাস্থ্যকর্মীরা।