বাগদাদির সন্ধান মেলে ‘তার সহযোগীর মাধ্যমে’

বেশ কয়েক বছর ধরে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নেতা আবু বকর আল বাগদাদির সন্ধান পেতে হন্যে হয়ে ছিল বেশ কয়েকটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থা, পরে বাগদাদির শীর্ষ সহযোগীদের কাছে পাওয়া তথ্যেই তার অবস্থান চিহ্নিত করা গেছে বলে জানিয়েছেন ইরাকি গোয়েন্দারা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Oct 2019, 06:38 AM
Updated : 28 Oct 2019, 06:52 AM

সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দুই ইরাকি নিরাপত্তা কর্মকর্তার বরাতে এমনটিই জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

ইরাকি ওই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কীভাবে এতো বছর ধরে বাগদাদি ধরা না পড়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন সে বিষয়ে আইএস নেতার এক শীর্ষ সহযোগী তথ্য দেওয়ার পর ২০১৮-র ফেব্রুয়ারিতে ইরাকি গোয়েন্দারা প্রথম একটি সূত্রের সন্ধান পান।

তুরস্কের কর্তৃপক্ষ বাগাদাদির সহযোগী ইসমায়েল আল ইথাবিকে গ্রেপ্তার করার পর তাকে ইরাকের হাতে তুলে দিয়েছিল। এই ইথাবিই ইরাকি কর্মকর্তাদের জানান, শানাক্তকরণ এড়াতে বাগদাদি অনেক সময় শাকসবজি ভরা চলন্ত মিনিবাসে বসে তার কমান্ডারদের সঙ্গে কৌশল নিয়ে আলোচনায় বসতেন।

“বাগাদাদির চলাফেরা ও লুকিয়ে থাকার জন্য যেসব জায়গা সে ব্যবহার করে সে ধাঁধার নিখোঁজ অংশগুলো পূরণ করতে ইথাবি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়, এসব তথ্যই ইরাকের বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত টিমকে ধাঁধার সমাধান পেতে সাহায্য করে,” বলেছেন এক ইরাকি নিরাপত্তা কর্মকর্তা।

“ইথাবি তার নিজের কথাসহ পাঁচ জন লোকের বিস্তারিত তথ্য আমাদের জানায়, এরা সবাই বাগদাদির সঙ্গে সিরিয়া ও বিভিন্ন স্থানে (যেগুলো তারা ব্যবহার করেছে) বৈঠক করেছিল,” রয়টার্সকে বলেন ওই কর্মকর্তা।

বাগদাদিকে অনুসরণ করার প্রচেষ্টায় থাকা গোয়েন্দাদের কাছে ইথাবির মতো জঙ্গিবাদ থেকে ফিরে আসা ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

ইসলামিক সায়েন্সে পিএইচডিধারী ইথাবিকে আইএস নেতার শীর্ষ পাঁচ জন সহযোগীর একজন বলে বিবেচনা করেন ইরাকি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। ইথাবি ২০০৬ সালে আল কায়েদায় যোগ দেওয়ার পর ২০০৮ সালে মার্কিন বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়ে চার বছর জেলে কাটায় বলে জানিয়েছেন ইরাকি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা।

পরে বাগদাদি ইথাবিকে ধর্মীয় নির্দেশনা ও আইএসের কমান্ডার বেছে নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়। ২০১৭ সালে আইএস ব্যাপক বিপর্যয়ের শিকার হলে ইথাবি তার সিরীয় স্ত্রীকে নিয়ে ইরাক থেকে সিরিয়ায় পালিয়ে যান।

চলতি বছরের প্রথমদিকে মার্কিন, তুর্কি ও ইরাকি গোয়েন্দাদের যৌথ অভিযানে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইএস নেতা ধরা পরার পর আরেকটি মোড় ঘুরানো পরিস্থিতি তৈরি হয়। এই নেতাদের মধ্যে চার জন ইরাকি ও একজন সিরিয়ান ছিলেন বলে জানিয়েছেন ইরাকি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা।

“সিরিয়ার কোথায় কোথায় তারা বাগদাদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন সবগুলোর তথ্য আমাদের জানায় তারা, ওই এলাকাগুলোর ভিতরে আরও সূত্র মোতায়েনের জন্য সিআইএ-র সঙ্গে সমন্বয় করার সিদ্ধান্ত নেই আমরা,” বলেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা এক ইরাকি কর্মকর্তা।

“২০১৯-র মাঝামাঝি আমরা ইদলিবকে শনাক্ত করি যেখানে বাগদাদি তার পরিবার ও তিন ঘনিষ্ঠ সহযোগীসহ অনবরত এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে চলে যাচ্ছিলেন,” বলেন তিনি।    

আইএস নেতা আবু বকর আল বাগদাদি শেষ বাসস্থান বলে কথিত ব্রিশা গ্রামের স্যাটেলাইট ছবি। ছবি: রয়টার্স

এই সময় সিরিয়ায় থাকা গুপ্তচররা ইদলিবের বাজারে চেক স্কার্ফে মাথা ঢাকা এক ইরাকিকে দেখতে পায় এবং একটি ছবির সঙ্গে মিলিয়ে তাকে শনাক্ত করে, এই ব্যক্তিটি ইথাবি ছিলেন বলে জানিয়েছেন ইরাকি কর্মকর্তারা। চররা ইথাবিকে অনুসরণ করে বাগদাদি যে বাড়িতে অবস্থান করছিল তার খোঁজ পায়।

“আমরা বিস্তারিত এসব তথ্য সিআইএকে দেই, আর তারা স্যাটেলাইট ও ড্রোন ব্যবহার করে পাঁচ মাস ধরে ওই এলাকার ওপর নজরদারি করে,” বলেন ওই কর্মকর্তা।

দুই দিন আগে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একটি মিনিবাস যোগে বাগদাদি ওই এলাকা ছেড়ে নিকটবর্তী একটি গ্রামে চলে যান।

“জীবনের শেষ মূহুর্তে এখানেই ছিলেন তিনি,” বলেন ওই কর্মকর্তা।

সিরিয়ায় স্থানীয় শত্রুদের থেকেও বাগদাদিকে পালিয়ে থাকতে হচ্ছিল।

ইদলিবে এক সময় নুসরা ফ্রন্ট নামে পরিচিত হায়াত তাহরির আল শাম জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রাধান্য আছে। এই গোষ্ঠীটির এক কমান্ডার জানিয়েছেন, বাগদাদি ইদলিবে আছেন এমন তথ্য পাওয়ার পর তারা নিজেরাও বাগদাদিকে খোঁজা শুরু করেন।

নুসরা ফ্রন্ট ও আইএস পরস্পরের বিরোধী গোষ্ঠী ও তারা সিরিয়ার যুদ্ধ চলাকালে বিভিন্ন সময় পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী লড়াইয়ে জড়িয়েছে।

ইদলিবের ওই কমান্ডারের ভাষ্য অনুযায়ী, আবু সুলেইমান আল খালিদি নামে বাগদাদির আরেক সহযোগীকে আটক করে তাহরির আল শাম, শেষ ভিডিও বার্তায় বাগদাদির পাশে যে তিন সহযোগী বসে ছিলেন এই খালিদি তাদের একজন।

খালিদির আটক হওয়া বাগদাদির খোঁজে প্রধান ‘চাবি’ হিসেবে কাজ করেছে বলে দাবি করেছেন ওই কমান্ডার।

তার মন্তব্যে এমন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে যে, তাহরির আল শাম হয়তো তারা যে খবর পেয়েছে তা অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে জানিয়েছিল। এই গোষ্ঠীটির সঙ্গে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে অবস্থানরত তুরস্কের বাহিনীর যোগাযোগ আছে বলে মনে করেন ইদলিবের স্থানীয়রা।