রুশ কূটনীতিক বহিষ্কার: যুক্তরাজ্যকে সমর্থন যুক্তরাষ্ট্রের

পক্ষত্যাগী সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার মেয়ে ইউলিয়ার ওপর নার্ভ গ্যাস হামলার প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার ২৩ কূটনীতিককে বহিষ্কারের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্য, তাতে সমর্থন জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2018, 08:47 AM
Updated : 15 March 2018, 08:47 AM

বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেস সেক্রেটারি সারাহ স্যান্ডার্স বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তার ‘সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র’ যুক্তরাজ্যের সিদ্ধান্তের ‘সঙ্গে আছে’।

যুক্তরাজ্যের মাটিতে সাবেক গুপ্তচরের ওপর হামলায় কীভাবে রাশিয়ার বানানো নার্ভ এজেন্ট ব্যবহৃত হল, মস্কো সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর মে কূটনীতিক বহিষ্কারের ঘোষণা দেন বলে খবর বিবিসির।

স্ক্রিপাল ও তার মেয়ের ওপর হামলার ঘটনায় কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাশিয়া।

গত ৪ মার্চ যুক্তরাজ্যের সলসবারির উইল্টশায়ার এলাকার একটি পার্কের বেঞ্চ থেকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল (৬৬) ও তার মেয়ে ইউলিয়াকে (৩৩) উদ্ধার করা হয়।

পক্ষত্যাগের পর সাবেক রুশ গুপ্তচর স্ক্রিপাল যুক্তরাজ্যে বসাবাস করছেন। স্ক্রিপাল ও তার মেয়েকে নোভিচক গ্রুপের একটি নার্ভ এজেন্ট দেওয়া হয়েছিল বলে মেডিক্যাল পরীক্ষায় জানা গেছে।

৭০ ও ৮০’র দশকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এ সিরিজের নার্ভ এজেন্টগুলো তৈরি করেছে। যেগুলো সবচেয়ে মারাত্মক নার্ভ এজেন্ট (উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক) হিসাবে বিবেচিত।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মে তার দেশে এ নার্ভ এজেন্ট ব্যবহারের ‘ধৃষ্টতা দেখানোর’ ব্যাখ্যা দিতে রাশিয়াকে মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। হত্যাচেষ্টায় সোভিয়েত যুগের নার্ভ এজেন্ট কিভাবে ব্যবহৃত হল সে ব্যাখ্যাই দাবি করেছিলেন তিনি।

ট্রাম্পের মুখপাত্র সারাহও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে অবজ্ঞা করার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেছেন।

‘এ ধরনের জঘন্য হামলা যেন আর না হয়, যুক্তরাষ্ট্র তা নিশ্চিত করতে চায়’ বলেও এক বিবৃতিতে বলেছেন তিনি।

যুক্তরাজ্য থেকে রাশিয়ার কূটনীতিক বহিষ্কারের সিদ্ধান্তকে ‘তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া’ হিসেবেও বর্ণনা করেছেন সারাহ স্যান্ডার্স।

হোয়াইট হাউসের এ বিবৃতির আগে জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালিও কূটনীতিক বহিষ্কারে যুক্তরাজ্যের সিদ্ধান্তে পাশে থাকার কথা জানিয়েছিলেন।

দুইদেশের মধ্যকার সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ অভিহিত করে হ্যালি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই যুক্তরাজ্যের পাশে থাকবে।

নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাজ্যের উপরাষ্ট্রদূত জনাথন অ্যালেন রাশিয়াকে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার বিধান ভঙ্গ করার দায়েও অভিযুক্ত করেছেন।

জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভেসিলি নেবেনজিয়া পক্ষত্যাগী গুপ্তচরের ওপর হামলায় মস্কোর জড়িত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে ব্রিটেনকে তার অভিযোগের ব্যাপারে ‘বস্তুগত প্রমাণ’ হাজির করার আহ্বান জানিয়েছেন।

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, রাসায়নিক অস্ত্র কনভেনশনের নিয়ম অনুযায়ী ১০ দিনের সময় দিয়ে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করলে মস্কো নার্ভ এজেন্ট ও গুপ্তচরের ওপর হামলা বিষয়ে যুক্তরাজ্যকে সহায়তা করতে রাজি আছে।

যুক্তরাজ্য অবশ্য এ পথে হাঁটেনি; তারা নোভিচক নার্ভ এজেন্ট কি করে যুক্তরাজ্যে এল, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে মস্কোকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছিল। ওই সময়সীমার মধ্যে মস্কো কোনো ব্যাখ্যা না দেওয়ায় যুক্তরাজ্য কূটনীতিক বহিষ্কারসহ বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ঘোষণা করে।

বুধবার পার্লামেন্টে মে বলেন, “ভিয়েনা কনভেশনের আওতায় যুক্তরাজ্য রাশিয়ার ২৩ কূটনীতিককে বরখাস্ত করবে। যারা আসলে অঘোষিত গোয়েন্দা কর্মকর্তা। এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের যুক্তরাজ্য ছাড়তে হবে।”

গত ৩০ বছরের মধ্যে এটিই লন্ডনের কূটনীতিক বহিস্কারের সবচেয়ে বড় ঘটনা। এর মাধ্যমে আগামীতে যুক্তরাজ্যে রাশিয়ার গোয়েন্দাগিরি অনেকটাই কমে আসবে বলেও মনে করেন মে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রাশিয়ার মালিকানাধীন কোনো সম্পদ ব্যবহার করে যুক্তরাজ্যের নাগরিক বা এখানে বসবাসকারী কারো জীবন বা সম্পদ হুমকিতে ফেলার চেষ্টার প্রমাণ পেলে আমরা সেগুলোও জব্দ করবো।”

মঙ্গলবারের মধ্যে এ ঘটনার কোনো কৈফিয়ত না দেওয়ায় তাদেরকে ‘পরিষ্কার বার্তা’ দিতেই কয়েকদফা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন মে।

এসব পদক্ষেপের মধ্যে আরও আছে- বেসরকারি বিমান, শুল্ক ও মালবাহী যানবাহনে নজরদারি বাড়ানো, রাজপরিবার ও ব্রিটিশ মন্ত্রীদের চলতি বছর রাশিয়ায় হতে যাওয়া ফুটবল বিশ্বকাপ বয়কট, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়ার মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সব দ্বিপাক্ষিক বৈঠক বাতিল এবং ‘শত্রু রাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডের’ পাল্টায় সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে নতুন আইন প্রণয়ন।

এর প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, মে-র বিবৃতি ‘অভূতপূর্ব নির্মম উসকানি’। বিভিন্ন ধরনের শত্রুতামূলক পদক্ষেপ নিয়ে যুক্তরাজ্যের সরকার দুই দেশের সম্পর্কের ‘গুরুতর অবনতি’ ঘটিয়েছে বলেও দাবি তাদের।

যুক্তরাজ্যের পদক্ষেপ নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ প্রতিক্রিয়া এসেছে লন্ডনের রাশিয়ার দূতাবাসের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকেও। তাপমাত্রা মাইনাস ২৩ ডিগ্রিতে আছে, এমন একটি থার্মোমিটারের ছবি পোস্ট করে তারা লিখেছে- “আমরা ঠাণ্ডা আবহাওয়াকে ভয় পাই না।”