হারিরিকে ‘আটকে রেখেছে সৌদি’, ধারণা লেবাননের

সৌদি আরব সাদ আল-হারিরিকে গৃহবন্দি করে রেখেছে বলে ধারণা লেবানন সরকারের।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Nov 2017, 05:14 AM
Updated : 10 Nov 2017, 05:14 AM

দেশটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, তাদের ধারণা আটক অবস্থায় জোর করেই লেবাননের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা আদায় করা হয়েছে। 

‘প্রাণনাশের আশঙ্কার’ কথা জানিয়ে গত সপ্তাহের শুরুতে পদত্যাগের ঘোষণা দেন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ। এজন্য ইরান ও হিজবুল্লাহকেও দায়ী করেন তিনি।

তেহরান এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের সঙ্গে মিলে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়ানোর ষড়যন্ত্রেই সাদ পদ ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

সোমবার সৌদি আরবের গাল্ফ অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রী থামের আল সাবহান এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে লেবানন তার দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে বলেও অভিযোগ করেন।

সাদ আগে থেকেই সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার আগেও তিনি ২০০৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত এক দফা লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকদফা সৌদি আরব সফর করা হারিরির পদত্যাগের ঘোষণাটিও রিয়াদে রেকর্ড করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দুই বছরের রাজনৈতিক অচলাবস্থার পর গত বছর ক্ষমতা কাঠামো নিয়ে সুন্নি ও শিয়া সমর্থিত প্রধান দলগুলোর সমঝোতায় লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হন সাদ হারিরি।

সমঝোতায় অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে হিজবুল্লাহও আছে, ২০০৫ সালে গাড়ি বোমা হামলায় হারিরির বাবা রফিক আল-হারিরির মৃত্যুর পেছনে শিয়া এই গোষ্ঠীটির হাত আছে বলে সন্দেহ করা হয়।

হারিরি প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেয়ায় লেবানন নতুন করে রাজনৈতিক সঙ্কটে পড়তে পারে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। তার পদত্যাগ দেশটির ইরান সমর্থিত শিয়া ও সৌদি আরব সমর্থিত সুন্নি গোষ্ঠীগুলোকে মুখোমুখি অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে বলেও ধারণা তাদের।

লেবাননের হিজবুল্লাহপন্থি সংবাদ মাধ্যম আল আখবারের এক প্রতিবেদনে প্রথম সাদকে সৌদি আরবে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে বলে দাবি করা হয়। এবার দেশটির দুই শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তার মুখেও এই অভিযোগ শোনা গেল।

“হারিরির চলাফেরায় সীমিত স্বাধীনতা দিয়ে রিয়াদ লেবাননের সার্বভৌমত্বে আঘাত করেছে। তার (প্রধানমন্ত্রী) মর্যাদাই, আমাদের মর্যাদা। আমরা অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে হারিরিকে বৈরুতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি,” বলেন লেবাননের এক সরকারি কর্মকর্তা।

‘প্রধানমন্ত্রীকে সৌদি আরবে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে’ লেবানন আনুষ্ঠানিকভাবে এই অভিযোগ না আনায় ওই কর্মকর্তা নাম বলতে চাননি।

অন্য এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, “লেবানন বিদেশি ও অন্যান্য আরব দেশকে সৌদি আরবের ওপর চাপ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সাদ আল-হারিরির মুক্ত করার কথা বলবে।”

প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করায় সাদ এখনো লেবাননের প্রধানমন্ত্রী পদে আছেন বলেও জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।

আউনের দপ্তর এর আগে জানিয়েছিল, সাদ দেশে না আসা পর্যন্ত তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করবেন না প্রেসিডেন্ট।

লেবাননের সুন্নি রাজনৈতিক দলগুলো প্রধানমন্ত্রীকে ‘সৌদি আরব গৃহবন্দি’ করে রেখেছে এমন কথা উড়িয়ে দিলেও বৃহস্পতিবার বিকালে বৈরুতে সাদের বাসভবনে তার দল ফিউচার মুভমেন্টের উদ্যোগে এক বৈঠকের পর সে অবস্থান থেকে সরে আসে।

পরে এক বিবৃতিতে লেবাননের স্বার্থেই সাদের দেশে ফিরে আসার প্রয়োজনীয়তার কথা বলে তারা। 

“তার ফিরে আসা লেবাননের অভ্যন্তরীণ ও বাইরের ভারসাম্য ঠিক রাখা ও লেবাননের বৈধতার কাঠামোর প্রতি পরিপূর্ণ শ্রদ্ধার জন্য প্রয়োজনীয়,” বিবৃতিতে বলেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সাদের মিত্র হিসেবে পরিচিত ফুয়াদ সিনিয়োরা। ফুয়াদের পাশে এসময় সাদের ফুফু বাহিয়া বসে ছিলেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

ফিউচার মুভমেন্ট জানিয়েছে, সাদকে এখনো তারা লেবাননের বৈধ প্রধানমন্ত্রী মনে করে এবং দল তার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল।

সাদের ঘনিষ্ঠ এক রাজনীতিবিদ জানিয়েছেন, লেবাননের প্রধানমন্ত্রীকে জোর করে পদত্যাগ করিয়েছে রিয়াদ। অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, সৌদি আরবে সাদের চলাফেরা বেশ সীমিত।

সৌদি আরব এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, হিজবুল্লাহ বৈরুতের রাজনৈতিক ক্ষমতাকাঠামো দখলে নেওয়ার কারণেই লেবাননের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ। হিজবুল্লাহর প্রভাব কমাতে না পারায় সাদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের সমালোচনাও করে তারা।

অন্যদিকে হিজবুল্লাহ ঘনিষ্ঠ সংসদীয় ব্লক বলেছে, সৌদি আরবকে লেবাননের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।

বৃহস্পতিবার রিয়াদের বাসভবনে সাদ সৌদি আরবে ফরাসী রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করেন বলে এক বিবৃতিতে তার দপ্তর জানিয়েছে। আগের দুইদিন তিনি সৌদি আরবের ইইউ মিশনের প্রধান, ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ও যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বলেও জানিয়েছে তারা।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিদার নয়ের্ত সাদের সঙ্গে সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ক্রিস হেনজেলের দেখা করার কথা নিশ্চিত করেছেন। সাদ কি অবস্থায় আছেন কিংবা তার সঙ্গে কি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে তার বিস্তারিত জানাননি তিনি।

“এ আলোচনা ছিল স্পর্শকাতর, ব্যক্তিগত ও একেবারেই কূটনৈতিক,” বলেন নয়ের্ত।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর আগে এক বিবৃতিতে লেবানন সরকারের প্রতি তাদের সমর্থনের কথা ব্যক্ত করে।

বৃহস্পতিবার সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এক আকস্মিক সফরে গিয়ে ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে দেখা করেন বলে অন্য এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স।

দুজনের বৈঠকে সাদ ও ইয়েমেন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচন হয়েছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

সৌদি আরব বৃহস্পতিবার তার দেশের নাগরিকদের লেবানন ভ্রমণে সতর্কতা জারির পাশাপাশি যারা এখনো সেখানে আছে তাদেরকে দ্রুত দেশটি ত্যাগ করতে বলেছে।