ফাঁস হওয়া প্যারাডাইস পেপার্সের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে বিবিসি লিখেছে, প্রিন্স চার্লসের ওই অবস্থানের মধ্যে স্বার্থের সংঘাত দেখতে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
বারমুডার একটি ল’ ফার্মের ফাঁস হওয়া এক কোটি ৩৪ লাখ গোপন নথির মধ্যে চার্লসের মা ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথ, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রসসহ বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের গোপনে বিপুল পরিমাণ অর্থ করস্বর্গ হিসেবে পরিচিত দেশ ও অঞ্চলের অফশোর কোম্পানিতে বিনিয়োগের তথ্য উঠে আসে।
নথিগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই বারমুডাভিত্তিক আইনি সহায়তাদাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাপলবির, অফশোর ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষ পর্যায়ের সেবাদাতা এই প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের কর ফাঁকির পথ বাতলে দেয়।
গত বছর ফাঁস হওয়া পানামা পেপার্সের মতো এই ‘প্যারাডাইস পেপার্সের’ নথিও প্রথমে জার্মান দৈনিক জিদদয়চে সাইটুংয়ের হাতে আসে। সেসব নথি ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসকে (আইসিআইজে) দিয়েছে তারা।
বিবিসি জানায়, ২০০৭ সালে প্রিন্স অব ওয়েলসের বিনিয়োগ দেখভালকারী প্রতিষ্ঠান ডাচি অব কর্নওয়ালি এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ ডলারে সাসটেইনেবল ফরেস্ট্রি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের (এসএফএম) শেয়ার কেনে।
এসএফএম সেসময় রেইন ফরেস্টগুলোর ক্ষেত্রেও কার্বন ক্রেডিটের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিভিন্ন দেশের রাজনীতিকদের মধ্যে লবি করছিল, ইউরোপীয় ইউনিয়নের এমিশন ট্রেডিং স্কিম (ইইউ ইটিএস) ও কিয়োটো চুক্তিতে যা বাদ পড়েছিল।
কোম্পানিটির অন্যতম পরিচালক ছিলেন ধনী ব্যাংকার হিউ ভ্যান কুটসেম, যাকে চার্লসের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন ধরা হয়।
প্যারাডাইস পেপার্সের তথ্য অনুযায়ী, এসএফএমের লবিং সংক্রান্ত কাগজপত্র আসার কয়েক সপ্তাহ পর থেকেই চার্লসের দপ্তর ‘গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও উপকূলীয় বনের’ ক্ষেত্রে জলবায়ু নীতিতে বাদ দেওয়া কার্বন ক্রেডিট ফের যুক্ত করার প্রচার শুরু করে।
এক বছর পর কোম্পানিটির শেয়ার বেচে ডাচি অব কর্নওয়ালের তিনগুণ আয় হয়; যদিও কেন শেয়ারের মূল্য বেড়ে গিয়েছিল, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ওই সময়ই বেশ কয়েকটি ভাষণে কার্বন ক্রেডিট ব্যবস্থাপনা অনুমোদনে নিজের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন প্রিন্স চার্লস। অবশ্য তার মতো প্রভাবশালী ব্যক্তির সমালোচনা সত্ত্বেও ইইউ ইটিএস ও কিয়োটো প্রটোকলের ধারা বদলায়নি।
যুক্তরাজ্যের আইনে অফশোর কোম্পানিতে বিনিয়োগ অবৈধ নয়। চার্লস নিয়মমতো কর পরিশোধ করেছেন বলেও জানিয়েছে ডাচি অব কর্নওয়াল।
প্রতিষ্ঠানটি ২০০৭ সালে কেইমেন আইল্যান্ডের অন্য একটি অফশোর কোম্পানিতে আরও ৩৯ লাখ ডলার বিনিয়োগ করেছিল বলে ফাঁস হওয়া ‘প্যারাডাইস পেপার্স’ থেকে জানা গেছে।
ডাচি অব কর্নওয়াল বলছে, সাসটেইনেবল ফরেস্ট্রি লিমিটেডে বিনিয়োগের সিদ্ধান্তের সঙ্গে প্রিন্স সরাসরি জড়িত ছিলেন না।
এ ব্যাপারে চার্লস কোনো মন্তব্য করবেন না বলেও ক্লিয়ারেন্স হাউজের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন।
“জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে তার অবস্থান সবাই জানে, ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি বৈশ্বিক উষ্ণতার হুমকি নিয়ে সতর্ক করে আসছেন। প্রিন্স দৃঢভাবে যেসব বিষয়ে সমর্থন করে আসছেন তার মধ্যে একটি হচ্ছে কার্বন মার্কেট, নব্বই দশক থেকে আজ পর্যন্ত তিনি এই বিষয়কে সবার সামনে তুলে ধরার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন,” বলেন মুখপাত্র।