পাকিস্তানজুড়ে টান টান উত্তেজনা আর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনার মধ্যে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয় বলে রয়টার্সের খবর।
দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফের বরাত দিয়ে ডনের খবরে বলা হয়, পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে এই আদেশ দেয়।
খাজা আসিফ আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের জানান, “আদালত বলেছে, এ বিষয়ে তদন্তের জন্য একটি কমিশন করতে হবে।”
গত বছর পানামা পেপার্সে প্রকাশিত লাখ লাখ গোপন নথিতে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক নেতা ও শীর্ষ ব্যবসায়ীদের গোপন সম্পদের তথ্য ফাঁস হয়ে যায়।
ধনী আর ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা কোন কৌশলে কর ফাঁকি দিয়ে গোপন সম্পদের পাহাড় গড়েছেন- সে তথ্য বেরিয়ে আসে পানামার ল ফার্ম মোসাক ফনসেকার ফাঁস হওয়া ওই সাড়ে ১১ লাখ নথিতে।
ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লিগের (পিএমএল-এন) পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, পাকিস্তান ও উপসাগরীয় অঞ্চলে বৈধ ব্যবসা থেকেই তাদের নেতার সম্পদ অর্জিত হয়েছে।
অন্যদিকে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই), জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধীদলগুলো নওয়াজের পদত্যাগের দাবিতে মাঠে নামে।
নওয়াজের সম্ভাব্য রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী মরিয়ম নওয়াজ ফাঁস হওয়া নথির তথ্য প্রত্যাখ্যান করে সেগুলো জাল বলে দাবি করেন। পাকিস্তানের অন্যতম শীর্ষ ধনী নওয়াজ নিজেও পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলেন, অন্যায় কিছু তিনি করেননি।
তারপরও গত বছরের শেষ দিকে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেয়।
সেই তদন্তের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আদেশের দিন থাকায় গত কয়েক দিন ধরেই পাকিস্তানের নানামুখী আলোচনা চলছিল। বলা হচ্ছিল অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে নওয়াজ শরিফকে সরে যেতে হতে পারে।
এ নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে সুপ্রিম কোর্ট ঘিরে দেড় হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তার মধ্যেও বিরোধী দলের কর্মীরা বাইরে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন- ‘নওয়াজ তুমি সরে যাও’।
ডন জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারকের মধ্যে দুইজন নওয়াজ শরিফের ক্ষমতায় থাকা অবৈধ ঘোষণার পক্ষে মত দিলেও বাকি তিনজন আরও তদন্তের পক্ষে মত দেন। সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের বিরুদ্ধে নতুন তদন্তের সিদ্ধান্ত দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
আদেশে বলা হয়, একটি যৌথ তদন্ত কমিশন গঠন করা হবে, যারা তদন্ত করে দেখবে কীভাবে নওয়াজ শরিফের পরিবার পাকিস্তান থেকে কাতারে অর্থ স্থানান্তর করেছিল। দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে হবে ওই কমিশনকে।
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা, ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং সেনা গোয়েন্দা বিভাগের প্রতিনিধিরা থাকবেন ওই তদন্ত দলে। নওয়াজ শরিফ ও তার দুই ছেলেকে ওই তদন্ত দলের মুখোমুখি হতে হবে।
নওয়াজ প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার অযোগ্য ঘোষিত হননি, এটা তার সমর্থকদের জন্য বড় স্বস্তি নিয়ে এসেছে। নতুন তদন্তের আদেশ হলেও তারা এই রায়কে উদযাপনের উপলক্ষ হিসেবে নিয়ে মিষ্টিমুখ করেছেন।
নওয়াজের মেয়ে এক টুইটে তার বাবা ও পরিবারের আনন্দ উদযাপনের ছবি শেয়ার করেছেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, যে কোনো ধরনের তদন্তের জন্য তারা প্রস্তুত।
অন্যদিকে ইমরানের দল মনে করছে, এই আদেশে নওয়াজ শরিফের গ্রহণযোগ্যতা হুমকির মুখে পড়বে এবং আগামী বছর নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার অবস্থানকে দুর্বল করবে।