বর্ষবরণের রাতে ইস্তাম্বুলে নাইট ক্লাবে হামলা, নিহত ৩৯

নতুন বছরের প্রথম প্রহরে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে একটি নাইট ক্লাবে এক বন্দুকধারী বিদেশি পর্যটকসহ ৩৯ জন কে হত্যা করে পালিয়ে গেছে। পুলিশ ওই এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Jan 2017, 02:43 AM
Updated : 1 Jan 2017, 02:54 PM

ইস্তাম্বুলের গভর্নরের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় শনিবার রাত দেড়টায় শহরের ওরতাকোয় এলাকার জনপ্রিয় রেইনা নাইটক্লাবে এই হামলায় আরও অন্তত ৬৯ জন আহত হয়েছে।

থার্টি ফার্স্ট উদযাপানের মধ‌্যে নতুন করে জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় ইউরোপ আমেরিকার বড় শহুরগুলোর মত ইস্তাম্বুলেও নেওয়া হয়েছিল কড়া নিরাপত্তার ব‌্যবস্থা। এশিয়া ও ইউরোপের মিলনস্থলে ঐতিহ‌্যবাহী এই শহরের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন ১৭ হাজার পুলিশ।

এর মধ্যেই বসফরাসের তীরে ইস্তাম্বুলের ইউরোপীয় অংশে ওই নাইট ক্লাবে এই ঘটনা ঘটল, যাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলেছেন গভর্নর ভাসিপ শাহিন।

তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেমান সওলু জানিয়েছেন, নিহতদের মধ‌্যে ১৫-১৬ জন বিদেশি নাগরিক এবং একজন পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। এখন পর্যন্ত ২১টি মৃতদেহের পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।

কর্মকর্তারা জানান, নিহতদের মধ্যে সৌদি আরব, মরক্কো, লেবানন, লিবিয়া, ইসরায়েল ও বেলজিয়ামের নাগরিকরা রয়েছেন।

এ ঘটনায় তাদের তিন নাগরিক আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফ্রান্স।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে তুরস্ক কর্তৃপক্ষ সিএনএন’কে জানায়, হামলাকারী ছিল একজন। তার পরনে ছিল সান্তা ক্লজের পোশাক। হাতে ছিল লম্বা ব‌্যারেলের আগ্নেয়াস্ত্র।

প্রথমে এক পুলিশসহ দুইজনকে গুলি করে ক্লাবে ঢোকে ওই ব‌্যক্তি। এরপর শুরু হয় নির্বিচারে গুলি। সেখানে তখন প্রায় ৭০০ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন নতুন বছরকে বরণের উৎসবে। গুলি শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে অনেকেই ঝাঁপিয়ে পড়েন বসফরাস প্রণালীতে।

প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে তুরস্কের দৈনিক হুরিয়াতের খবরে বলা হয়, রেইনা নাইটক্লাবে গুলি চালানোর সময় হামলাকারী আরবি ভাষায় চিৎকার করে কথা বলেছে।

হামলার সময় ক্লাবের ভেতরে থাকা সিনেম ইউয়ানিক বলেন, “আমরা আনন্দ করছিলাম। হঠাৎ করেই লোকজন দৌড়াতে শুরু করে। আমার স্বামী আমাকে ভয় পেতে নিষেধ করে এবং আমাকে জড়িয়ে ধরে মাটিতে শুয়ে পড়ে। লোকজন আমাদের উপর দিয়ে দৌড়ে যায়। আমার স্বামী শরীরের তিন জায়গায় ব্যথা পেয়েছেন।”

“আমি কোনো রকমে ভিড় ঠেলে বাইরে বেরিয়ে আসি, ওটা ভয়াবহ ছিল।”

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী তুরস্কের ফুটবল খেলোয়াড় সেফা বয়দাস টুইটারে বলেন, “কে গুলি করছে সেটা আমি দেখতে পাইনি। আমি শুধু গুলির শব্দ শুনতে পাই এবং লোকজনকে দৌড়াতে দেখি। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।”

তুর্কি কর্মকর্তারা একজন হামলাকারীর কথা জানালেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে একাধিক হামলাকারী থাকার কথা বলছে।

জুলাইয়ে ব্যর্থ সেনা অভ্যূত্থানের পর নেটো সদস্যভূক্ত তুরস্কে কয়েকটি ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে।

বসফরাসের তীরে রেইনা নাইটক্লাব। ছবি: ক্লাবের ফেইসবুক

রাজধানী আঙ্কারা ও সবচেয়ে বড় শহর ইস্তাম্বুলসহ ওই সব হামলার দায় হয় ইসলামিক স্টেট নয়ত কুর্দি মিলিশিয়ারা স্বীকার করেছে।

এ হামলার পর তুরস্কের প্রেসেডন্ট রিজেপ তায়েপ এরদোয়ান এক লিখিত বিবৃতিতে বলেন, “জাতি হিসেবে আমরা শুধু অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধেই নয় বরং তাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক হামলার বিরুদ্ধেও শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব।”

“তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইছে, আমাদের জনগণকে নীতিভ্রষ্ট করতে চাইছে এবং আমাদের দেশকে পঙ্গু করে দিতে চাইছে। জাতি হিসেবে আমরা ধৈর্যধারণ অব্যাহত রাখব, আরও ঘনিষ্ঠভাবে জোট বাঁধব এবং এ ধরণের নোংরা খেলায় কখনওই আমাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেব না।”

এখন পর্যন্ত এ হামলার দায় কেউ স্বীকার করেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা হামলায় হতাহতদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।

সেইসঙ্গে তার দলকে তুরস্ক কর্তৃপক্ষের প্রতি সব ধরনের সহযোগিতার প্রস্তাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিভাগের কাছ থেকে নববর্ষ উৎসবে হামলা হওয়ার সতর্ক বার্তা পাওয়ার পর ১০ দিন আগে থেকেই কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন রেইনা ক্লাবের মালিক মেহমেত কোকারসলান।