আকাশের ছবি তুলবে বিশ্বের বৃহত্তম ডিজিটাল ক্যামেরা

টানা এক দশক ধরে দক্ষিণের আকাশের মানচিত্র আঁকবে আকারে ছোট-খাটো একটা গাড়ির সমান এবং তিন হাজার দুইশ মেগাপিক্সেলের প্রায় তিন টন ওজনের ক্যামেরাটি।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Oct 2022, 10:44 AM
Updated : 25 Oct 2022, 10:44 AM

পৃথিবী থেকে দেখা আকাশের একাংশের মানচিত্র আঁকার প্রস্তুতি নিচ্ছে এলএসএসটি ক্যামেরা; ২০২৩ সালে থেকে টানা এক দশকের জন্য মানচিত্র আঁকার কাজ শুরু করবে টেলিস্কোপটি।

চিলিতে নির্মাণাধীন ‘ভেরা সি. রুবিন অবজার্ভেটরি’ থেকে টেলিস্কোপটি এক হাজার সাতশ কোটি নতুন নক্ষত্র আবিষ্কারে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা; এ ছাড়াও পৃথিবীর সৌরজগতেই আরও ৬০ লাখ নতুন মহাজাগতিক বস্তুর সন্ধান পাওয়ার আশা করছেন তারা।

টানা সাত বছর সময় নিয়ে ‘লেগেসি সার্ভে অফ স্পেস অ্যান্ড টাইম’ বা এলএসএসটি ক্যামেরা বানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ‘এসএলএসি ন্যাশনাল অ্যাক্সেলেরেটর ল্যাবরেটরির’ গবেষকরা।

আকারে ছোট-খাটো একটা গাড়ির সমান এবং ওজনে প্রায় তিন টন এ ক্যামেরাটি। ‘গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে’ও জায়গা করে নিয়েছে এর পাঁচ ফিটের বেশি চওড়া লেন্স।

প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট সিনেট জানিয়েছে, ১৫ মাইল দূল থেকে একটি গলফ বল আকারের বস্তু চিহ্নিত করার সক্ষমতা রয়েছে তিন হাজার দুইশ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরার।

আলোচিত জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ যেখানে তীক্ষ্ণ কিন্তু সরু দৃষ্টিতে গহীন মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করে, এলএসএসটি ক্যামেরার কার্যক্রম হবে তার বিপরীতমুখী। পৃথিবীতে বসেই অতি দ্রুত আকাশের বড় একটা অংশের ছবি তুলতে থাকবে টেলিস্কোপটি।

সিনেট জানিয়েছে, চালু হওয়ার পর প্রতি ১৫ সেকেন্ডে যে অংশের ছবি তুলবে এলএসএসটি ক্যামেরা, সেখানে পূর্ণিমার সাতটি চাঁদ আঁটানো সম্ভব। এভাবে প্রতি রাতে আকাশের ছবি ধারণ করতে থাকবে এটি যা শেষ পর্যন্ত রূপ নেবে প্যানোরামায়।

আকাশের মানচিত্র আঁকার ভাবনায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মহাকাশ বিজ্ঞানীরাও বেশ উত্তেজিত বলে জানিয়েছে সিনেট।

এ প্রসঙ্গে এলএসএসটি ক্যামেরা প্রকল্পের প্রধান কারিগরি প্রকৌশলী ট্র্যাভিস ল্যাঞ্জ সিনেটকে বলেন, “আমরা যখনই নতুন কিছু দেখবো, শাটার বন্ধ হওয়ার ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে আগ্রহী সবাইকে সে বিষয়ে জানিয়ে দিতে পারবো।”

১০ বছরের প্রকল্প শেষে এলএসএসটি ক্যামেরা পুরো দক্ষিণের আকাশ নিয়ে একটি ত্রিমাত্রিক সিনেমা বানিয়ে ফেলবে বলে জানিয়েছে সাইটটি।

এলএসএসটির কার্যক্ষমতা ব্যাখ্যা করে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক রিসা ওয়েশলার বলেন, “এটা আমাদের তাৎক্ষণিকভাবে এমন কিছু জিনিস দেখার সুযোগ করে দেবে যা আগে সম্ভব ছিল না।”

“এটা আমাদের অনেক বড় বড় প্রশ্ন তোলার সুযোগ করে দেবে। মহাবিশ্ব আসলে কী দিয়ে তৈরি? ডার্ক ম্যাটার আর ডার্ক এনার্জির বৈশিষ্ট কী?”

বর্তমানে এলএসএসটি ক্যামেরার নিয়ে শেষ পর্যায়ের পরীক্ষা চালাচ্ছেন গবেষকরা। সব পরীক্ষায় পাশ করলে, ২০২৩ সালের মে মাসে বিশেষ বোয়িং ৭৪৭ প্লেনে চড়ে চিলির সান্টিয়াগোতে পৌঁছাবে বিশ্বের বৃহত্তম ডিজিটাল ক্যামেরা। তারপর ট্রেনে চড়ে সেরো পাঁচন পর্বতের চূড়ায় অবস্থিত অবজার্ভেটরিতে পৌঁছাবে এটি।