ফিলিস্তিনের বিপক্ষে হঠাৎ এলোমেলো হয়ে হারল বাংলাদেশ

প্রথমার্ধের শেষ দিকে ছন্দ হারিয়ে দুই গোল হজম করে কোণঠাসা হয়ে পড়া বাংলাদেশ পরে আর পারেনি ঘুরে দাঁড়াতে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2024, 07:38 PM
Updated : 21 March 2024, 07:38 PM

শক্তিশালী ফিলিস্তিনের বিপক্ষে চোখে চোখ রেখে খেলার লক্ষ্যে শুরুতে বেশ ভালোই খেলল বাংলাদেশ, এক-দুবার তাল কেটে গেলেও জাল অক্ষত রেখে এগিয়ে যাচ্ছিল তারা। পোস্টে মিতুল মারমাকেও দেখাচ্ছিল আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু বিরতির আগ মুহূর্তে হঠাৎ খেই হারিয়ে ফেলল হাভিয়ের কাবরেরার দল। পরপর হজম করে বসল দুটি গোল। দ্বিতীয়ার্ধে দুঃস্বপ্ন বাড়ল আরও। শেষ পর্যন্ত বড় হারের হতাশা সঙ্গী হলো জামাল-সোহেলদের।

২০২৬ বিশ্বকাপ ও ২০২৭ এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের দ্বিতীয় ধাপের ম্যাচের বৃহস্পতিবার ৫-০ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ। হ্যাটট্রিক করেছেন ওদেই দাবাঘ, জোড়া গোল করেছেন শেহাব কুম্বর।

এই প্রথম ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ৫ গোল হজম করল বাংলাদেশ। আগের ছয় ম্যাচে কখনই ২টির বেশি খায়নি তারা। চলতি বাছাইয়ে তিন ম্যাচে বাংলাদেশের জালে গোলের সংখ্যা দাঁড়াল ১৩টি।

গত সেপ্টেম্বরে বিমানবন্দরে আলোচিত সেই ‘মদকাণ্ডে’ ব্রাত্য হয়ে পড়া আনিসুর রহমান জিকো দলে ফিরলেও ফিলিস্তিন ম্যাচে পোস্ট সামলানোর দায়িত্ব পান মিতুল।

কুয়েতের জাবের আল-আহমাদ স্টেডিয়ামে বৃস্পতিবার ‘আই’ গ্রুপের ম্যাচে সপ্তম মিনিটে পাল্টা আক্রমণে সুযোগ আসে বাংলাদেশের সামনে। ডান দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠেন রাকিব, বক্সে জায়গা নিয়েছিলেন ফাহিম, কিন্তু রাকিবের কাটব্যাক খুঁজে পায়নি তাকে।

হাই-লাইন ডিফেন্স করার কারণে বারবার ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে পড়তে থাকে বাংলাদেশ। নবম মিনিটে লং পাস ক্লিয়ার করতে বিশ্বনাথ লাফিয়ে উঠলেও মাথা ছোঁয়াতে পারেননি। বল পেয়ে যান অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়া দাবাঘ। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে ক্রসবারের ওপর দিয়ে মারেন এই ফরোয়ার্ড। একটু পর বাংলাদেশের রাকিবের শট বাইরের জাল কাঁপায়।

১৯তম মিনিটে আবারও সেই একই দৃশ্যের মঞ্চায়ন। সতীর্থের লং বল অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে প্রথম ছোঁয়ায় নিয়ন্ত্রণে নেন ইসলাম বার্তান। পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে মিতুল পথ আগলে দাঁড়ান ফিলিস্তিনের এই ফরোয়ার্ডের। গোলরক্ষকের ওপর দিয়ে বার্তানের চিপ শটে বল ওপরের জালে গিয়ে পড়ে। আরেক দফা বেঁচে যায় বাংলাদেশ।

সেট পিস থেকে ২৩তম মিনিটে ‘হাফচান্স’ পায় বাংলাদেশ। কিন্তু ইসা ফয়সালের ক্রসে ফাহিমের হেডে ছিল না গোলরক্ষককে পরাস্ত করার মতো গতি।

চার মিনিট পর বাংলাদেশের সামনে আসে সুবর্ণ সুযোগ। বাঁ দিক থেকে একাধিক ডিফেন্ডারের প্রতিরোধ ভেঙে বক্সে বল বাড়ান রাকিব; ফাঁকায় থাকা সোহেল অকারণ তাড়াহুড়ো করে ক্রসবারের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারেন। দারুণ সুযোগ নষ্টের হতাশায় মাথায় হাত দিয়ে বসেন এই মিডফিল্ডার।

৩১তম মিনিটে দাবাঘের শট কোনোমতে পা দিয়ে ঠেকিয়ে বাংলাদেশের ত্রাতা মিতুল। কিন্তু ৪২তম মিনিটে আর পারেননি তিনি। বাঁ দিক থেকে মুসাব বাত্তার জোরাল শট গোলরক্ষক আটকালেও পুরোপুরি ক্লিয়ার করতে পারেননি; অরক্ষিত দাবাঘ সুযোগ কাজে লাগান। এরপর থেকে একের পর এক গোল হজম করতে থাকে বাংলাদেশ।

প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে আবারও বাংলাদেশের জালে বল জড়ায়। কর্নারে উড়ে আসা বল সোহেলের পায়ে লেগে চলে যায় কুম্বরের কাছে। গোলমুখ থেকে অনায়াসে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন তিনি।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ছোট কর্নারের পর সতীর্থের ক্রসে বল পেয়ে প্রথম ছোঁয়ায় একটু উপরে তুলে কোনাকুনি শটে মিতুলকে পরাস্ত করেন কুম্বর।

৫৩তম মিনিটে আবারও ফুটে ওঠে বাংলাদেশের রক্ষণের অসহায়ত্ব। মাহমুদ ঈদের ক্রসে বক্সে দাবাঘ দারুণ সাইড ভলিতে খুঁজে নেন জাল। এই ফরোয়ার্ডের পাহারায় তখন ছিলেন না কেউই! ম্যাচ থেকেও ছিটকে যায় বাংলাদেশ।

জয় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গেলেও ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ৮৬ ধাপ এগিয়ে থাকা ফিলিস্তিন অব্যাহত রাখে আক্রমণ। ৬৭তম মিনিটে কুম্বরের শট যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে। এরপর ওদেই খারুব ও মাহমুদ ধাধার শট অল্পের জন্য হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট।

একটু পরই তিনটি পরিবর্তন আনেন বাংলাদেশ কোচ। ফাহিম, সোহেল ও জনিকে তুলে রবিউল হাসান, সুমন রেজা ও চন্দন রায় নামান কাবরেরা। এ ম্যাচ দিয়েই লাল-সবুজের জার্সিতে অভিষেক হলো চন্দনের। 

৭৭তম মিনিটে রক্ষণের হাল ছাড়ার ভাব ফুটে ওঠে প্রকটভাবে। থ্রু পাস ধরে দাবাঘের প্রথম শট আটকালেও পুরোপুরি গ্লাভসে নিতে পারেননি মিতুল; দ্বিতীয় প্রচেষ্টাতেও বল জমাতে পারেননি তিনি; ফিরতি শটে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন দাবাঘ।

শেষ দিকে দূরপাল্লার শটে চেষ্টা করেছিলেন জামাল। কিন্তু বল ক্রসবারের উপর দিয়ে উড়ে গেলে সান্ত্বনার গোলের দেখাও পাওয়া হয়নি বাংলাদেশের।

চলতি বাছাইয়ে এটি দ্বিতীয় হার বাংলাদেশের। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭-০ গোলে হেরে শুরুর পর লেবাননের বিপক্ষে ১-১ ড্র করেছিল দল।

ফিলিস্তিনের বিপক্ষে এ নিয়ে ষষ্ঠ ম্যাচ হারল বাংলাদেশ। আগের ছয় ম্যাচের মধ্যে  ২০০৬ সালে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপে ১-১ ড্রই সেরা প্রাপ্তি হয়ে থাকল।

চলমান বাছাইয়ে প্রথম জয় পেল ফিলিস্তিন। লেবাননের বিপক্ষে গোলশুন্য ড্রয়ে বাছাই শুরুর পর অস্ট্রেলিয়ার কাছে ১-০ ব্যবধানে হেরেছিল তারা।

আগামী ২৬ মার্চ ফিরতি লেগের ম্যাচে বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় ফিলিস্তিনের মুখোমুখি হবে কাবরেরার দল।