যে জয়ের গহীনে বাজছে শিরোপার সুর

সাফের পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে জয় মেয়েদের করে তুলেছে আরও আত্মবিশ্বাসী।

কাঠমান্ডু থেকে মোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Sept 2022, 06:06 PM
Updated : 13 Sept 2022, 06:06 PM

শেষের বাঁশি বাজতেই শুরু হলো বাঁধনহারা উৎসব। সাবিনা-কৃষ্ণারা পরস্পরকে আলিঙ্গণে বাঁধতে ব্যস্ত। ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয়ের পর সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে হাঁটু গেড়ে মাঠে মাথাও ছোঁয়ালেন তারা। এরপর দল বেঁধে ছুটলেন ফ্রেমবন্দী হতে। টিম বাসে ওঠার সময়ও মেয়েদের হৈ-হুল্লোড় চলতে থাকল ক্লান্তিহীনভাবে। সবার চোখে-মুখে তখন টগবগে আত্মবিশ্বাসের ঝিলিক!

ভারতের বিপক্ষে এতদিনের অধরা জয়ের গল্পটা মঙ্গলবার কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামের আঙিনায় বাংলাদেশ লিখেছে ৩-০ গোলের ব্যবধানে। টানা তিন জয়ে গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হওয়া, সেমি-ফাইনালে নেপালকে এড়ানো-সব লক্ষ্যই পূরণে হয়েছে মেয়েদের। উৎসব তো বিরতিহীন হবেই।

শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মুগ্ধতা ছড়ানো ফুটবল খেলা মেয়েদের কাছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের একটা প্রশ্নই ছিল-এই জয়ের পর কি মনে হচ্ছে, এবার শিরোপা বাংলাদেশের? কেউ উচ্ছ্বাসভরা কণ্ঠে, কেউ সাবধানী সুরে দিয়েছেন উত্তর। কিন্তু মনের গহীনে যে আত্মবিশ্বাসের স্রোতস্বিনী বয়ে যাচ্ছে, তা আড়াল করেননি কৃষ্ণা-মনিকাদের কেউই।

মাঠের খেলায়ও ছিল একই আত্মবিশ্বাসের চাপ। দ্বাদশ মিনিটের প্রথম গোলে তা ফুটে উঠল দারুণভাবে। সাবিনার পাস কৃষ্ণার পা ঘুরে পাওয়ার পর নিখুঁত প্লেসিং শটে স্বপ্না লক্ষ্যভেদ করলেন। ৫৩তম মিনিটে আবারও কোনাকুনি শটে জাল খুঁজে নিলেন ২১ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। শিরোপা জয়ের সম্ভাবনার প্রশ্নে ছোট্ট উত্তরে স্বপ্না বুঝিয়ে দিলেন চাওয়াটা।

“ইনশাল্লাহ, ভালো একটা রেজাল্ট হবে।”

আরেক গোলদাতা কৃষ্ণার কণ্ঠেও বেজে উঠল শিরোপা খরা কাটানোর প্রত্যয়। ২২তম মিনিটে স্বপ্নার সঙ্গে বল দেওয়া নেওয়া করে নিখুঁত শটে কাছের পোস্ট দিয়ে জাল খুঁজে নেন এই ফরোয়ার্ড।

“এই জয়ে আত্মবিশ্বাস তো অবশ্যই বেড়েছে। দিনকে দিন আমরা উন্নতি করছি। সেমি-ফাইনালে যদি আমরা ভালো করতে পারি, তাহলে ফাইনাল…কনফার্ম।”

মাঝমাঠের সুর বেঁধে দেওয়া মারিয়া আপাতত ভাবতে চান ভুটানের বিপক্ষে আগামী শুক্রবারের সেমি-ফাইনাল নিয়ে।

“ইনশাল্লাহ, সবার দোয়ায় ভালো একটা ম্যাচ খেলতে পেরেছি আজ। ভালো ফুটবল উপহার দিয়েছি। সামনে সেমি-ফাইনাল আছে, সেখানে ভালো ফল করলে ফাইনালে যাব। ফাইনালে….(হাসি)।” 

মধ্যমাঠের আরেক নির্ভরতা মনিকা চাকমার ভাবনাও মারিয়ার মতো।

“এখন আমাদের সামনে সেমি-ফাইনালটা আছে। সেটা খেলে নেই। তারপর আমরা ফাইনাল নিয়ে ভাবব। এই জয়ে আত্মবিশ্বাস তো বেড়েছেই…ফাইনালে উঠলে আমরা সর্বোচ্চটা দিয়ে জয়ের চেষ্টা করব।”

পাকিস্তান ম্যাচে বদলি নেমে গোল পেয়েছিলেন ঋতুপর্ণা চাকমা। ভারত ম্যাচের শেষ দিকে নামা এই ফরোয়ার্ডও শোনালেন আশার কথা।

“আমরা ফাইনালে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এসেছি। আমরা যে ম্যাচগুলো খেলে এসেছি, সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে ফাইনালে ভালো করব, এই আত্মবিশ্বাস আমাদের আছে।”

রক্ষণের নির্ভরতা আঁখি খাতুন জানালেন ভারতের বিপক্ষে পাওয়া জয়ে সব ভয় কেঁটে যাওয়ার কথা।

“ইনশাল্লাহ..আমাদেরকে আগে ভয় দেখানো হয়েছিল যে, ওরা মালদ্বীপের জালে ৯টা গোল করেছিল-এই কথা বলে। আমাদের আত্মবিশ্বাস ছিল, আমরা যে কঠোর পরিশ্রম করে এসেছি….সেরা সাফল্য নিয়ে আমরা শেষ করতে চাই।”

ডিফেন্ডার মাসুরা পারভীন বললেন, ‘পরের ম্যাচগুলোতেও আমরা আমাদের সেরাটা খেলব।” মিডফিল্ডার সানজিদা খাতুন শিরোপা জয়ের আত্মবিশ্বাস কতটা বেড়েছে, তা জানালেন মজার সুরে, “বহত বহত (অনেক অনেক)…ইনশাল্লাহ আমরা চেষ্টা করব।”

কোচ বলেই হয়ত গোলাম রব্বানী ছোটন একটু বেশি সাবধানী। কপাল ছুঁয়ে মনে করিয়ে দিলেন ভাগ্যের ছোঁয়াও লাগে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছুতে।

“(শিরোপা জয়ের) চেষ্টা তো করবই, বাকিটা ইনশাল্লাহ। অনেক সময় ভাগ্যকেও পাশে পাওয়া লাগে।”

কথায় আছে, ভাগ্য সবসময় সাহসীদের সঙ্গী হয়। এই মেয়েরা যে সাহসী, তা নিয়ে প্রশ্ন নেই।