জাবিতে ২ হলের মাঝের দেয়াল নিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষ

সংঘর্ষে শহীদ রফিক-জব্বাব হলের পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর জানা গেছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2024, 06:04 AM
Updated : 6 March 2024, 06:04 AM

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক-জব্বার হল ও শেখ রাসেল হলের মধ্যবর্তী দেয়ালকে কেন্দ্র করে হল দু’টির শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

রাতভর দফায় দফায় চলা সংঘর্ষে উত্তপ্ত পরিস্থিতি প্রশাসন নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

সংঘর্ষে শহীদ রফিক-জব্বাব হলের পাঁচ জন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর জানা গেছে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

বুধবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, শহীদ রফিক-জব্বার হলের উত্তর পাশের প্রায় ২০টির অধিক কক্ষের জানালার কাচ ভাঙচুর করা হয়েছে। অপরদিকে শেখ রাসেল হলের মসজিদসহ কয়েকটি কক্ষে ঢিল ছুঁড়ে জানালার কাঁচ ভাঙচুর করার ঘটনাও ঘটেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, “খবর পাওয়ার পরই প্রক্টরিয়াল টিমসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরাও সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। সংঘর্ষের ঘটনায় সকালের পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক রয়েছে।”

গত বছরের জানুয়ারি মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ছয়টি হলের মধ্যে মেয়েদের একটি ও ছেলেদের একটি আবাসিক হল খুলে দেওয়া হয়।

এর মধ্যে ছেলেদের শেখ রাসেল হলটির অবস্থান পুরানো শহীদ রফিক-জব্বার হলের পাশেই।

নবনির্মিত হলগুলোর উদ্বোধনের পর শহীদ রফিক-জব্বার হলের কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী কিছু দাবির কথা তুলে প্রশাসনের তোয়াক্কা না করেই নতুন হলের সহজে যাতায়াতের রাস্তায় দেয়াল তৈরি করে ফেলেন।

ফলে শেখ রাসেল হল ও শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের অসুবিধা হচ্ছিল। এ নিয়ে হলগুলির শিক্ষার্থীদের মধ্যে মনোমালিন্যও তৈরি হয়৷

আর এ বিষয়ে প্রশাসনেরও কোনো ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়নি।

শহীদ রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থীদের দাবি, দেয়াল থাকতে হবে। তিনটি হলের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর নিয়মিত আসা যাওয়া কিংবা গাড়ি চলাচল তাদের জন্য হুমকিস্বরূপ।

অপরদিকে শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীদের দাবি- বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কোনো দেয়াল থাকতে পারে না তাও আবার দুই হলকে আলাদা করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও এই দেয়ালে অনুমতি নেই।

এরপর দেয়াল অপসারণের দাবিতে শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীরা সোমবার গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করেন। স্মারকলিপিসহ গণস্বাক্ষর হল প্রভোস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা।

এর মধ্যে মঙ্গলবার রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থীরা ওই দেয়ালে ৭ মার্চ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রাফিতি আঁকতে গেলে তাতে বাধা দেন শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীরা।

এসময় দু’পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এক পর্যায়ে রাত ৯টার দিকে শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীরা দেয়ালটি ভেঙে ফেলার চেষ্টা করলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষে রূপ নেয়।

খবর পেয়ে প্রক্টোরিয়াল টিম উপস্থিত হলেও প্রক্টরের উপস্থিতিতেই সংঘর্ষ চলতে থাকে। রাত ২টা পর্যন্ত সংঘর্ষ, ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি চলে।

পরিস্থিতির বিষয়ে শেখ রাসেল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক তাজউদ্দীন শিকদার বলেন, "আমার শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার জন্য বলেছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা চেষ্টা করছি।"

শহীদ রফিক জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা বলেন, "এ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে পারব না। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।"

রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও ঘটনাস্থলে আসেন। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় তিনি ঘটনাস্থল থেকে সরে যান। এরপরই ঘটনাস্থলে পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়।

শহীদ রফিক জব্বার হলের আবাসিক ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী শান্তি জাবালি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংঘর্ষের আশঙ্কা থেকেই, এই দেয়াল তৈরি করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে শহীদ রফিক জব্বার হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর, এমনকি তাদের কক্ষগুলোতে যে ন্যাক্কারজনক হামলা চালানো হয়েছে, সেই ঘটনা প্রমাণ করে, একটা নিরাপত্তা বেষ্টনী কতটা প্রয়োজন।

তিনি  আরও বলেন, “ভবিষ্যতেও এই স্থান দিয়ে যাতায়াত বৃদ্ধি পেলে সংঘর্ষের পরিমাণ আরও বাড়বে। প্রশাসনের অপরিকল্পিত উন্নয়নের খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের।”

শেখ রাসেল হলের আবাসিক ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোন একটা যাতায়াতের পথে দেয়াল তুলে দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে চলাচলের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ।

“কোনো কারণ ছাড়াই রফিক-জব্বার হল তাদের সীমানায় দেয়াল বসিয়ে শেখ রাসেল হলের যাতায়াতের পথে বাধা সৃষ্টি করেছে৷ এবং একই সাথে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই দ্বন্দ্বটি নিরসন করতে ব্যর্থ হওয়ায় আমাদের কাছে দেয়াল ভাঙা ব্যতীত আর কোনো অপশন ছিল না।"