‘জীবিতদের নামানো শেষ হলে কলিজা মোচড় দিয়ে উঠে’

“এ রকম মর্মান্তিক মৃত্যু আল্লাহ কি কারণে দিয়েছেন, সেটা আল্লাহই ভালো জানেন।”

কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2024, 03:19 PM
Updated : 1 March 2024, 03:19 PM

রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার তিন বোনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে আপন দুই বোনকে পাশাপাশি কবরে দাফন করা হয়েছে।

মৃতরা হলেন- লালমাই উপজেলার পেরুল উত্তর ইউনিয়নের চরবাড়িয়া গ্রামের ব্যবসায়ী কোরবান আলীর বড় মেয়ে ফৌজিয়া আফরিন রিয়া ও ছোট মেয়ে সাদিয়া আফরিন আলিসা এবং তাদের খালাতো বোন কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার কালিরবাজার ইউনিয়নের হাতিগাড়া গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের মেয়ে নুসরাত জাহান নিমু।

শুক্রবার বেলা ১১টায় তাদের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হলে স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে বাড়ির পরিবেশ। রিয়া ও আলিসাকে একনজর দেখতে চরবাড়িয়ায় ভিড় করে শত শত মানুষ।

পরে বাদ জুমা নিমুকে হাতিগাড়া গ্রামে এবং বিকাল ৪টায় রিয়া ও আলিসাকে চরবাড়িয়া গ্রামের বাড়িতে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে পাশাপাশি দাফন করা হয়।

রিয়া মালয়েশিয়াতে আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ শেষ পর্বের এবং আলিসা ঢাকার ভিকারুননিসা স্কুলের অষ্টাম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। আর নিমু ঢাকা সিটি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ত।

রিয়া ও আলিসার বাবা কোরবান আলী বলেন, “রিয়া মালেয়শিয়া ফিরে যাবে। তাই দুবোন এবং আমার ভায়রা ভাইয়ের মেয়েসহ প্রথমে তারা পিৎজা হাটে যায়; সেখানে কার্ডও পাঞ্চ করে। তাই আগুনের ঘটনা শুনে প্রথমে আমরা নিশ্চিত হই যে, আমার মেয়েরা ভালো আছে।

“পরে হঠাৎ ফোন আসে। মেয়েরা চিৎকার করতে করতে বলে বাবা আমরা বেইলি রোডে কাচ্চি ভাইয়ে আছি, এখানে আগুন লাগছে। আমাদের বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছিল। দৌড়ে সেখানে গিয়ে দেখি তিনজনের মরদেহ পড়ে আছে।”

তিনি বলেন, “আমার দুই সন্তান দুনিয়া থেকে চলে গেছেন। এ রকম মর্মান্তিক মৃত্যু আল্লাহ কি কারণে দিয়েছেন, সেটা আল্লাহই ভালো জানেন।

“আল্লাহ হয়তো আমাদের পরীক্ষা দিয়েছেন। শনিবার আমার রিয়াকে নিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল। এখন আমি এ শোক কেমনে সইবো।”

নিমুর বাবা আবদুল কুদ্দুস বলেন, “আগুন লাগার পর আমার মেয়ে ফোন করে বলে আব্বু আমাদের বাঁচাও। আমাদের এখান থেকে বের করে নিয়ে যাও। এরপর আমি আমার ভাইয়া কোরবান আলী ভাইকে জানাই।

“পরে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে থেকে আমরা তিনজনের লাশ গ্রহণ করি।”

রিয়া ও আলিসার চাচা লোকমান হোসেন বলেন, “আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি প্রথমে যারা বেঁচে ছিলেন তাদের বিল্ডিং থেকে নামানো হচ্ছে। জীবিতদের নামানো শেষ হলে কলিজা মোচড় দিয়ে উঠে।

“আমার ভাতিজিরা আর বেঁচে নেই।”