নিখোঁজের ১৭ বছর পর ফেইসবুকে মিলল পরিবারের সন্ধান

প্রায় ১৭ বছর আগে গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় বেড়াতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া এক নারী ফেইসবুকের মাধ্যমে পরিবারের সন্ধান পেয়ে নিজ বাড়ি ফিরেছেন।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Jan 2021, 08:14 AM
Updated : 19 Jan 2021, 01:13 PM

কোটালীপাড়া পৌরসভার মেয়র হাজী কামাল হোসেন শেখ জানান, তানিয়া আক্তার (২৫) নামের ওই নারী গত ১২ জানুয়ারি বাড়ি ফিরে আসেন।

তানিয়া গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার বাগান উত্তরপাড় গ্রামের সুন্দর আলী সিকদারের মেয়ে। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া পৌর শহরের শান্তিনগর এলাকার আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী।

বাবার বাড়িতে তানিয়া স্বামী, শ্বশুর, ছেলে, মেয়ে ও পরিবারের সদস্য নিয়ে এখন উৎসব মুখর দিন কাটাচ্ছেন। তাকে এক নজর দেখতে প্রতিদিন লোকজন ভিড় করছেন।

তানিয়ার বাবা মেয়ে ফিরে পাওয়ার আনন্দে প্রতিদিনই তার বাড়িতে আসা লোকজনকে মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করছেন; তাদের কাছে মেয়ের জন্য দোয়া চাইছেন তিনি।  

তানিয়ার বাবা বলেন, “২০০৪ সালে তানিয়ার বয়স ছিল ৮ বছর; তখন তাকে ঢাকা বেড়াতে নিয়ে যাই। আমার ফুফুর আগারগাঁওয়ের বাসায় তাকে রেখে আমি গ্রামে চলে আসি। সেখান থেকে তানিয়া নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় আমি তেজগাঁও ও কোটালীপাড়া থানায় জিডি করি এবং পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিই। পরে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও ওইসময় তানিয়াকে খুঁজে পাইনি।

গত ৮ জানুয়ারি ফেইসবুকে তানিয়ার ছোট বেলার ছবি ও সঙ্গে আমার, স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েদের নাম দেখে কোটালীপাড়ার ইমরান ঘরামীর স্ত্রী লাবণ্য ওরফে পলি আমাকে বিষয়টি জানায়। তিনি ফেইসবুক থেকে আমার জামাতার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করেন এবং ওইদিন রাতে মেয়ে জামাইয়ের সঙ্গে কথা বলে আমার মেয়ের সন্ধান পাই। পরের দিন আমরা ঢাকা যাই।”

সুন্দর আলী বলেন, জামাই কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে করে আমাদের আখাউড়া নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে মেয়েকে পেয়ে আমি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ি। দুজনের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে আনন্দ অশ্রু।

“পরে ১২ জানুয়ারি মেয়ে-জামাই, নাতি,নাতনি, বেয়াই ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোটালীপাড়ার গ্রামের বাড়িতে আসি। হারানো মেয়েকে এভাবে ফিরে পাব তা কোন দিনই ভাবিনি।”

তানিয়া আক্তার বলেন, “ঢাকায় বাবার ফুফুর মেয়ের মেয়ের সঙ্গে আমি স্কুলে যাই। স্কুলের দারোয়ান আমাকে স্কুলে ঢুকতে দেয়নি। বাসার রাস্তা না চেনায় আমি পথ হারিয়ে সংসদ ভবনের সামনে চলে যাই। সেখানে সারাদিন বড় পর্দায় টেলিভিশন দেখি। রাত হলে কান্নাকাটি শুরু করি। পরে এক লোক আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়।

“পরে তার বোনের বাড়ি ওয়ালার স্ত্রীর মা আরজুদা বেগম মিলন ও তার ছেলে রিপন আমাকে তাদের সঙ্গে কলাবাগানের বাড়িতে নিয়ে যায়। এরপর থেকে আমি রিপনকে বাবা ডাকি।”

২০১৫ সালে তানিয়াকে তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া পৌর শহরের শান্তিনগর এলাকার সুরুজ মিয়ার ছেলে কাঠ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে বিয়ে দেন।

রিপন কলাবাগান মসজিদের ইমাম ছিলেন, বর্তমানে তিনি জার্মানিতে থাকেন। তাদের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায় রায়তলা গ্রামে বলে জানান তানিয়া।  

তিনি বলেন, “আমার স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি সবাই খুবই ভাল মানুষ; তারা আমাকে খুব ভালবাসে। এ দিক দিয়ে আমি খুবই ভাল আছি। এখন মা-মাকে পেয়ে আমর মতো সুখী আর কেউ নেই।”

তানিয়ার স্বামী আনোয়ার হোসেন বলেন, “বিয়ের পর থেকে তানিয়া মা-বাবাকে খুঁজে পেতে অনেক চেষ্টা করছি। পরে ফেইসবুকে তানিয়ার ছোট বেলার ছবি পোস্ট করি। এ সূত্রধরে তানিয়ার বাবা-মা তার সন্ধান পায়।

“বাবা-মা ও ভাই বোনদের ফিরে পেয়ে তানিয়ার তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। প্রিয়তমার মুখের প্রথম হাসি দেখে আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে।”

কোটালীপাড়ার পৌর মেয়র হাজী কামাল হোসেন শেখ বলেন, “তানিয়ার বাবা সুন্দর আলী আমার খুবই আপনজন। তিনি ১৭ বছর পর তার মেয়েকে খুঁজে পেয়েছে। এতে আমি খুবই আনন্দিত।তাদের প্রতি সব সময় আমরা সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।”