ভেঙে ফেলা হবে রাজবাড়ী স্কুলের লাল ভবনটি

রাজার নামে জেলা রাজবাড়ীতে ‘রাজার বাড়ি’ এখন আর নেই। বহু আগে বিক্র করে দেওয়া হয়েছে সেই স্থাপনা। মুছে গেছে রাজবাড়ির স্মৃতিচিহ্ন। অন্য পুরাকীর্তিগুলোও যথাযথ সংরক্ষণ করা হয়নি। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাজবাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের পুরনো লাল ভবনটি। এখন এটাও ভেঙে ফেলা হবে।

রাজবাড়ী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2019, 08:57 AM
Updated : 22 May 2019, 12:30 PM

জেলা প্রশাসক মো. শওকত আলী বলেন, “পুরনো স্থাপনাটি ভেঙে সেখানে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে। নতুন ভবনের জন্য যথেষ্ট জায়গা নেই। এজন্য লাল ভবনটি ভেঙে ফেলতে হবে।”

কিন্তু এমন সিদ্ধান্ত মানতে পারছেন না বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।

এই ভবনের সঙ্গে অনেকেরই আবেগ-অনুভূতি জড়িয়ে আছে। তাই তারা একে যথাযথ সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছে। ইতোমধ্যে ভবনটি রক্ষার জন্য মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে এলাকাবাসী।

বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র রেজাউল করিম বর্তমানে শিক্ষকতা পেশায় রয়েছেন।

রেজাউল বলেন, “এই ভবনটিতে আমাদের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এটি রাজবাড়ী জেলার ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। এটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত আমরা কিছুতেই সমর্থন করি না। অবশ্যই এটিকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।”

রাজবাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে দুটি একাডেমিক ভবন ও একটি প্রশাসনিক ভবন রয়েছে। একটি একাডেমিক ভবনের পাশে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী এই লাল ভবনটি।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহবুবা আক্তার বলেন, গত ৯ মে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-২) মো. আমিনুল ইসলাম টুকু স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পেয়েছেন তারা।

“চিঠিতে ভবনটি অকেজো ঘোষণা করে তা নিলামে বিক্রি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিক্রির অর্থও ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে বলা হয়েছে।”

তবে এখনও প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।

এ বিষয়ে রাজবাড়ীর ৭৪ বছর বয়সী সাংবাদিক মোহাম্মদ সানাউল্লাহ বলেন, “আমরা ছেলেবেলা থেকে স্বতন্ত্র নকশার এই স্থাপনাটি দেখে আসছি। কালের সাক্ষীগুলো রক্ষা করা উচিত বলে মনে করি।

“২০১৩ সালে ঢাকা বিভাগের আঞ্চলিক পরিদর্শক আতাউর রহমান ভবনটি পরিদর্শন করে বলেছিলেন, ‘প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১০০ বছরের পুরনো স্থাপনা সংরক্ষণ করে থাকে। রাজবাড়ীর এই ভবনটি অসাধারণ একটি স্থাপনা। এর সঙ্গে অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে।’ তৎকালীন জেলা প্রশাসক হাসানুজ্জামান কল্লোলও ভবনটি সংরক্ষণে একমত পোষণ করে বলেছিলেন, ‘প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো ভবনটি প্রাচীন স্থাপনা যা পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণের দাবি রাখে।’ কিন্তু ভবনটি শেষ পর্যন্ত ভেঙেই ফেলতে চায় সরকার।”

এলাকাবাসী ভবনটি রক্ষার জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন।

রাজবাড়ী সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য কবি খোকন মাহমুদ বলেন, “লাল ভবনটি ভেঙে ফেলা হবে ঐতিহ্যে কুঠারাঘাত। এটি রক্ষার্থে রাজবাড়ীবাসীকে আন্দোলনে নামতে হবে।”

বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সাংবাদিক সৌমিত্র শীল বলেন, “এটি শুধু রাজবাড়ীর নয়, বরং সারা বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। সেকারণে ভবনটি রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।”