বরিশাল মেডিকেলে এখনও ঝুলছে ‘পাকিস্তানের’ সাইনবোর্ড

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর পরেও এমন সাইনবোর্ড কীভাবে থাকে সেই প্রশ্ন মুক্তিযোদ্ধাদের।

সাইদ মেমনবরিশাল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2022, 02:36 PM
Updated : 29 July 2022, 02:36 PM

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর পরেও বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিদ্যুৎ সরবরাহের কয়েকটি বোর্ডে ‘পূর্ব পাকিস্তান সরকার’ লেখা রয়েছে; যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।

বিদ্যুৎ সরবরাহ করার যে বাসবার ট্রাকিং সিস্টেম বোর্ড রয়েছে তাকে ‘বিপদজনক’ বুঝাতে এবং মানুষকে সতর্ক করতে একটি নির্দেশনা রয়েছে, সেখানেই ইংরেজিতে ‘গভ. অব ইস্ট পাকিস্তান’ লেখাটি রয়েছে।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন মানিক বীর প্রতীক বলেন, “সাইনবোর্ড অপসারণের জন্য সবাইকে বলেছি। এ পর্যন্ত চারবার হাসপাতালের পরিচালক পরিবর্তন হলেও ‘গভ. অব ইস্ট পাকিস্তান’ লেখা সাইনবোর্ডটি পরিবর্তন করা হয়নি।”

“আইনশৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি তোলা হয়েছে। কিন্তু কেউ কোনো কর্ণপাত করছেন না।”

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক এস এম সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি বিষয়টি দেখতেছি।”

সরজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের পাঁচতলা ভবনের চারটি সিঁড়ি রয়েছে। প্রত্যেকটি সিড়ির পাঁচতলা পর্যন্ত মোট ২১টি বাসবার ট্রাকিং সিস্টেম বোর্ড রয়েছে। এর মধ্যে ১১টি বোর্ডে ‘গভ. অব ইস্ট পাকিস্তান’ লেখা রয়েছে।

বাকি চারটি প্যানেল বোর্ডে কোনো সাইনবোর্ড বা সতর্কীকরণ নির্দেশনা নেই। ছয়টি বোর্ডে সাদা রং দিয়ে মুছে ফেলা হয়েছে।

একটি সাদা বোর্ডে লাল রং দিয়ে লেখা সাইনবোর্ডের নিচে স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদের ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন জাতীয় শিশু দিবস’ এবং ২৬ মার্চের স্বাধীনতা দিবসের পোস্টার লাগানো হলেও বিষয়টি কারও নজরে আসেনি। যদিও পোস্টার দুটির উপরেই ‘গভ. অব ইস্ট পাকিস্তান’ লেখা সতর্কীকরণ বোর্ডটি রয়েছে।

হাসপাতাল সংস্কার ও মেরামতসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে গণপূর্ত অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ফিরোজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাব-স্টেশন থেকে বিদ্যুৎ বাসবার ট্রাকিং সিষ্টেম বোর্ডে দেওয়া হয়। সেখান থেকে হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।

“এজন্য এটা বিপদজনক। তাই সাইনবোর্ড লাগানো রয়েছে।”

সাইনবোর্ডে ‘গভ. ইস্ট পাকিস্তান’ লেখা রয়েছে কি-না তা খেয়াল করেননি বলে জানান এই প্রকৌশলী।

হাসপাতালে আসা নগরীর বাঁধ রোডের বাসিন্দা সাগর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এ ধরনের সাইনবোর্ড এখনও থাকতে পারে বিশ্বাস হচ্ছে না। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আগেই খেয়াল করা উচিত ছিলো।”

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৪ সালের ৬ নভেম্বর থেকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১৯৬৮ সালে এতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। প্রথমে এর নাম ছিল বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে বরিশালের সন্তান শের-ই-বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হকের নামে তা নামকরণ করা হয়।

চিকিৎসা শাস্ত্রের জন্য দেশের অন্যতম এই বিদ্যাপীঠে এমবিবিএস এবং বিডিএস কোর্স চালু রয়েছে। প্রতিবছর ২২০ জন এমবিবিএস কোর্সে এবং ৫২ জন শিক্ষার্থী বিডিএস কোর্সে ভর্তি হয়ে থাকে।

এক হাজার শয্যার বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ৮০০ রোগী চিকিৎসাধীন থাকে। হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে চার হাজার রোগী চিকিৎসা নেয়।