তত্ত্বাবধায়ক মানার ঘোষণা এলে সংলাপে ‘রাজি’ বিএনপি

মির্জা ফখরুল বলেন, “তারা ভাবছে... একতরফা নির্বাচন, কোনো ভোটার উপস্থিত হবে না, তারা সেইভাবে নির্বাচিত হবে। কিন্তু এবার সেটা সম্ভব হবে না।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Oct 2023, 08:54 AM
Updated : 11 Oct 2023, 08:54 AM

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা এলে সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসার কথা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, সেই সরকার কীভাবে গঠন হবে, আলোচনা হতে পারে তা নিয়ে।

সরকার দেশকে সাংঘর্ষিক অবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে অভিযোগ করে বিরোধী দলটির নেতা সতর্ক করেন ‘২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো’ নির্বাচন দেশে আর হবে না।

দুই দিন আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে বুধবার দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপি নেতা।

‘বিএনপি সমঝোতার পথ বন্ধ করেছে’ বলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলকে যে বক্তব্য রেখেছেন, তাকে ‘মিথ্যা আখ্যা দেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “এটা বাজে কথা, এটা কত বড় মিথ্যা কথা আপনারা ভালো করেই জানেন। আমরা বরাবরই বলে এসেছি যে, একটা বিষয় আলোচনা হতে পারে, অন্য কোনো বিষয় না। সেটা হচ্ছে নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার।”

তবে এই সংলাপে বসার শর্তও দেন বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, “অবশ্যই সরকারকে আগে ঘোষণা দিতে হবে যে, আমরা মেনে নেব। এবার আসো নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের বিষয় কথা বলি কীভাবে হতে পারে।

“বাট সি মাস্ট রিজাইন।”

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, “আমরা যেটা তাদের বলেছি, যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, এই অবস্থায় কোনো নির্বাচন হতে পারে না। সি (শেখ হাসিনা) মাস্ট রিজাইন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা না দেয়া ছাড়া এখানে কোনো নির্বাচন হতে পারে না।”

‘আগের মতো নির্বাচন আর হবে না’

সরকার দেশকে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক অবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, “তাদের লক্ষ্যটাই হচ্ছে যে, আবার সেই আগের মতো ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন করা।

“তারা ভাবছে... একতরফা নির্বাচন, কোনো ভোটার উপস্থিত হবে না, তারা সেইভাবে নির্বাচিত হবে। কিন্তু এবার সেটা সম্ভব হবে না।

“আমরা খুব পরিস্কার করে বলে দিয়েছি যে, এভাবে শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। আমরা বলে দিয়েছি যে, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, এই সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।”

বিরোধী দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করে ‘কোনো লাভ নেই’ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “গত দুইটা নির্বাচন করেছে, এরপর সমগ্র পৃথিবী বলছে যে, তোমার নির্বাচন ঠিক হয় নাই। নট এক্সেকটেবল, ক্রেডিবল না।

“এই নির্বাচন করে কী হবে যে নির্বাচন কেউ গ্রহণ করে না? জোর করে তো কিছু হতে পারে না, এবারও কোনো লাভ হবে না, অসম্ভব।”

সরকার পতনের ‘এক দফা’ আন্দোলন নিয়ে এক প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই সংগ্রাম প্রতিদিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই সরকার জনগণের রুদ্ররোষের শিকার হয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হবে।”

‘ডাকাতের মতো হানা দিয়ে গ্রেপ্তারের কেন’

বিএনপির প্রচার সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তার মুক্তির দাবি জানান ফখরুল।

তিনি বলেন, “রাতে ডাকাত যেভাবে ডাকাতি করে সেভাবে তার বাড়ির দরজা-টরজা ভেঙে গতরাতে তাকে গ্রেপ্তার করেছে।

“গ্রেপ্তার করে তারা বলে যে, মামলার আসামি। ঠিক আছে, তাকে অন্যভাবেও তো নেওয়া যায় অথবা বলা যায় যে, ‘তুমি সারেন্ডার কর’।”

বিএনপি নেতা বলেন, “যে পদ্ধতিতে গ্রেপ্তার হয়েছে, এটাই প্রমাণ করে যে… এখন নির্বাচনের তফসিলই ঘোষণা হয়নি, তার আগেই বিশেষ করে বিএনপির অ্যাকটিভ নেতা যারা আছেন, তাদেরকে গ্রেপ্তার করে মিথ্যা মামলা দিয়ে তারা একতরফা নির্বাচনের দিকে ভালোভাবে এগিয়ে চলেছে।”

গত রাত তিনটায় এ্যানিকে ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

দলের বেশ কয়েকজন নেতার নাম উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তারা হাই কোর্ট থেকে জামিন পাওয়ার পর আবার নতুন মামলায় আসামি দেখিয়ে জেলগেট থেকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

কারাগারে বন্দি নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, স্বজন যারা সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছে, তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।