উইকেটে এমন বাউন্স তো বাংলাদেশে সচরাচর মেলে না। বোলিং তাই বেশ উপভোগ করলেন রেজাউর রহমান রাজা। পুরনো বলেও বাড়তি বাউন্স ও স্কিড করা বলে ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানদের বেশ ভোগালেন এই পেসার। ভালো বোলিংয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখলেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরিও। তবে ব্যাট হাতে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মোহাম্মদ নাঈম শেখ পারলেন না রানের পথে থাকতে। অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন ব্যর্থ শেষ ম্যাচেও।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দল ও বাংলাদেশ ‘এ’ দলের সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় আনঅফিসিয়াল ওয়ানডে ম্যাচটিতে অবশ্য কোনো ফয়সালা হয়নি। বৃষ্টির হানায় ম্যাচ হয়েছে পরিত্যক্ত। সিরিজ ১-১ ড্র।
সেন্ট লুসিয়ায় টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজ শুরুটা ভালো করলেও পরে দিশা হারিয়ে ৫০ ওভারে তোলে ২৩৮ রান।
আগের ম্যাচে দুই উইকেট শিকারি পেসার রাজা এবার নেন চার উইকেট। প্রথম ম্যাচে দুই উইকেটের পর দ্বিতীয় ম্যাচে বিশ্রামে থাকা বাঁহাতি পেসার মৃত্যুঞ্জয় তৃতীয় ম্যাচে ফিরে আবার উইকেট নেন দুটি।
রান তাড়ায় দ্বিতীয় ওভারেই দুই উইকেট হারানো বাংলাদেশ ‘এ’ পরে ১৫.৪ ওভারে ৩ উইকেটে ৬১ রান তোলার পর বৃষ্টিতে বন্ধ হয় খেলা। আর শুরু হতে পারেনি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আগের ম্যাচের মতোই ব্যাটিংয়ে ভালো শুরু এনে দেন তেজনারাইন চন্দরপল ও জশুয়া দা সিলভা। উদ্বোধনী জুটিতে দুজন তোলেন ৬৭ রান।
রাজার প্রথম ছোবলে ভাঙে এই জুটি। স্টাম্পের বাইরের বল গ্লাইড করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন জশুয়া (২৩)। বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল হাসান একটু পরে বিদায় করেন চন্দরপলকে। ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৪৩ রান করা ব্যাটসম্যানের সুইপ শটকে স্কয়ার লেগে দারুণ ক্যাচে পরিণত করেন সাব্বির রহমান।
তৃতীয় উইকেটেও ক্যারিবিয়ানরা পায় ভালো আরেকটি জুটি। টেডি বিশপ ও জাস্টিন গ্রিভস দারুণ ব্যাটিংয়ে এগিয়ে নেন দলকে। ৩৫ ওভার শেষে দলের রান দাঁড়ায় ২ উইকেটে ১৫৪। তাদের দৃষ্টি তখন ২৭০ রানের আশেপাশে কোনো স্কোরে।
কিন্তু তখন আবার দৃশ্যপটে রাজা। দ্রুতই ম্যাচের চিত্র বদলে দেন তিনি। গ্রিভসকে (৩৬) আউট করে ৭৪ রানের জুটি ভাঙেন তিনি। পরে তিনি বিদায় করেন আলিক আথানেজ ও টেডি বিশপকে। ৮৩ বলে ৬০ রান করে ফেরেন বিশপ।
এর মাঝেই সৌম্য সরকার নিজের বলে দারুণ ফিল্ডিংয়ে রান আউট কেরন টেভিন ইমলাককে। শেষ দিকে শামার স্প্রিঙ্গার ১৭ বলে ২৩ রান করে ক্যারিবিয়ানদের রান বাড়ান একটু। তার উইকেটসহ দুটি উইকেট নেন মৃত্যুঞ্জয়।
ভালো ভিত গড়ার পরও ক্যারিবিয়ানরা পারেনি ২৪০ ছুঁতে।
তবে সেই রান তাড়ায় আত্মঘাতী সব শটে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ ‘এ।’ দ্বিতীয় ওভারেই শার্মন লুইসের শরীর সোজা শর্ট বলে দৃষ্টিকটূভাবে ক্যাচ দেন নাঈম। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা ওপেনার এবার করেন স্রেফ ৩।
ওই ওভারেই বাজে শটের পালায় নাঈমকে ছাড়িয়ে যান সাইফ হাসান। বেশ বাইরের বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে ব্যাট চালিয়ে উইকেট বিলিয়ে ফেরেন তিনি।
জোড়া ধাক্কা সামলে দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন সৌম্য সরকার ও মোহাম্মদ মিঠুন। ব্যর্থতার বলয়ে থাকা সৌম্য অবশেষে একটু লড়াইয়ের তাগিদ দেখান। মিঠুনের সঙ্গে জুটি পঞ্চাশ পেরিয়ে যায়। এরপর আবার উইকেট উপহারের পালা। এবার মিঠুন পুল শটে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৪১ বলে ২০ রান করে।
একটু পরই বৃষ্টির আগমণ। সৌম্য তখন খেলছিলেন ৪২ বলে ৩০ রান করে। তার ইনিংসের পরিণতি আর দেখা যায়নি।
আনঅফিসিয়াল ওয়ানডে সিরিজ ড্র হওয়ার আগে বৃষ্টির কারণ দুই দলের আনঅফিসিয়াল টেস্ট সিরিজও হয়েছিল ড্র।
এই সফর দিয়ে দীর্ঘদিন পর মাঠে ফিরল বাংলাদেশ ‘এ’ দল। এবার তাদের দেশে ফেরার পালা। এই দল থেকে সাব্বির রহমান যাবেন জাতীয় দলের হয়ে এশিয়া কাপ খেলতে। সেখানে স্ট্যান্ড বাই তালিকায় আছেন এই দলের সৌম্য সরকার ও মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দল: ৫০ ওভারে ২৩৮/৯ (চন্দরপল ৪৩, জশুয়া ২৩, বিশপ ৬০, গ্রিভস ৩৬, ইমলাক ১৪, আথানেজ ৬, স্প্রিঙ্গার ২৩, চার্লস ৩, ফিলিপ ০, লুইস ৯*, মিন্ডলি ৭*; মুকিদুল ১০-১-৫১-১, খালেদ ১০-০-৪৩-২, সাইফ ৮-০-২৯-০, রাজা ১০-০-৫০-৪, রকিবুল ১০-০-৪৫-১, সৌম্য ২-০-১৪-০)।
বাংলাদেশ ‘এ’ দল : ১৫.৪ ওভারে ৬১/৩ (নাঈম শেখ ৩, সৌম্য ৩০*, সাইফ ২, মিঠুন ২০, শাহাদাত ১*: ফিলিপ ৩-০-৬-০, লুইস ৩-০-১৮-২, মিন্ডলি ৪-১-১৩-০, গ্রিভস ১.৪-০-৯-০, চার্লস ৩-০-১৩-০, স্প্রিঙ্গার ১-০-১-১)।
ফল: বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত।
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজ ১-১ ড্র্।