মলিন রেকর্ডকে সঙ্গী করে টেস্ট ক্রিকেট ছাড়লেন রুবেল

লাল বলের ক্রিকেটে আর দেখা যাবে না বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ফাস্ট বোলারকে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Sept 2022, 06:57 AM
Updated : 19 Sept 2022, 06:57 AM

২৭ টেস্ট খেলে উইকেট মোটে ৩৬টি। বোলিং গড় ৭৬.৭৭। টেস্ট ক্রিকেটে ২০টির বেশি উইকেট শিকারি বোলারদের মধ্যে ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে বোলিং গড়। এই পরিসংখ্যানকে ভদ্রস্থ করার উপায় আর নেই রুবেল হোসেনের। লাল বলের ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে দিলেন বাংলাদেশের অভিজ্ঞ এই পেসার।

নিজের সিদ্ধান্তের কথা নির্বাচকদের আগেই মৌখিকভাবে জানিয়েছিলেন রুবেল। ৩২ বছর বয়সী পেসার সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান, বিসিবিতে চিঠি দিয়ে এ দিন তিনি অবসরের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন আনুষ্ঠানিকভাবে।

২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে রুবেলের আবির্ভাব। অভিষেকে টেস্টে সেন্ট ভিনসেন্ট প্রথম ইনিংসে দারুণ বোলিংয়ে উইকেট নেন ৩টি। তবে সেই শুরুটা আর ধরে রাখতে পারেননি তিনি। পরের ৬ ইনিংস মিলিয়ে উইকেট ছিল স্রেফ ১টি!

ক্যারিয়ারের পঞ্চম টেস্টে ২০১০ সালে হ্যামিল্টনে স্বাদ পান তিনি ইনিংসে ৫ উইকেটের। তবে ২৯ ওভারে রান খরচ করেন ১৬৬! সেটিই প্রথম আর শেষ, আর কখনও ৫ উইকেট পাওয়া হয়নি তার।

২০১১-১২ সময়টায় কিছু টেস্টে দারুণ বোলিং করেন রুবেল। যদিও সেটির প্রতিফলন পড়েনি তার পরিসংখ্যানে। স্লিপ ফিল্ডিংয়ে দলের ব্যর্থতা, দেশের উইকেটে পেসারতের সহায়তার অভাব মিলিয়ে ওই সময় প্রাপ্য উইকেট তিনি পাননি। তবে এই কিছু ম্যাচ ব্যতিক্রম মাত্র। টেস্ট ক্রিকেটে রুবেলের সার্বিক গল্পটা ভোগান্তি ও ব্যর্থতার।

বেশির ভাগ সময়ই টেস্টে তিনি ধুঁকেছেন। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নিয়মিত মুখ হলেও ২০১৪ সালের পর টেস্টে আর নিয়মিত সুযোগ পাননি তিনি।

গত প্রায় ৮ বছরে টেস্ট খেলতে পেরেছে স্রেফ ৫টি। তাতে উইকেট মোটে ৪টি। এর মধ্যে ৩টিই নিয়েছেন ২০২০ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে, ওভারপ্রতি প্রায় সাড়ে চার করে রান দিয়ে। সেটিই হয়ে থাকল তার শেষ টেস্ট।

টেস্ট ক্রিকেটের মতো প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার সার্বিক পরিসংখ্যাও উজ্জ্বল নয়। ৬০ ম্যাচ খেলে উইকেট কেবল ৯৭টি। বোলিং গড় ৫৪.০৩। ইনিংসে ৫ উইকেট আছে ৪টি।

অবসরের কারণ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রুবেল বললেন তরুণদের সুযোগ করে দেওয়ার কথা।

“বাংলাদেশ জাতীয় দলের পাইপলাইন শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে লঙ্গার ভার্সন টুর্নামেন্টগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আমি মনে করি, এই টুর্নামেন্টগুলোতে তরুণ পেসাররা যত বেশি সুযোগ পাবে, আমাদের পাইপলাইন তত মজবুত হবে। তাই তরুণ ক্রিকেটারদের সুযোগ করে দেয়ার জন্য আমি লাল বলের ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

টেস্ট ক্রিকেটে পারফরম্যান্স ভালো না হলেও সাদা পোশাকে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারাকেও বড় প্রাপ্তি মানছেন তিনি।

“বাংলাদেশের ২৭টি টেস্ট ম্যাচ খেলার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। যা আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম অর্জন। আমি বিশ্বাস করি, লাল বলের ক্রিকেটে আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেটের এই পথচলায় আমাকে যারা সহযোগিতা করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আশা করছি, সামনের দিনগুলোতে আপনাদের পাশে পাব।”

গত বছরের মার্চ-এপ্রিলে নিউ জিল্যান্ড সফরের পর থেকে সাদা বলের ক্রিকেটেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর দেখা যায়নি রুবেলকে। জাতীয় দলে তার সুযোগ হয় না অনেক দিন ধরেই। তবে এখানে লড়াইটা চালিয়ে যাবেন বলে জানালেন তিনি।

“টেস্ট থেকে বিদায় নিয়েছি। তবে, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশ জাতীয় দলকে আমার আরও কিছু দেয়ার মত সামর্থ্য আছে। তাই ডিপিএল, বিপিএলসহ অন্যান্য সাদা বলের টুর্নামেন্টে আমি নিয়মিত খেলা চালিয়ে যাব।”