ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী আয়োজনে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছিলেন তামিম ইকবার। হঠাৎ পেছন ফিরে তাকিয়ে তিনি চিৎকার করে ডাকলেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহকে। দুজনকেই তিনি ডেকে নিলেন মঞ্চে। কারণটা খোলাসা হলো একটু পর। এবারের বিপিএলের শিরোপা ফরচুন বরিশাল অধিনায়ক উৎসর্গ করলেন তার দীর্ঘদিনের দুই সঙ্গী ও দেশের ক্রিকেটের অভিজ্ঞ এই দুই তারকাকে।
অধিনায়ক হিসেবে তামিমের এটিই প্রথম বিপিএল শিরোপা। এমনিতে বিপিএল জয়ের স্বাদ তিনি আগেও পেয়েছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে। কিন্তু এই সাফল্যই এতদিন অধরা ছিল মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর। দুজনই টুর্নামেন্টের সবসময়ের সেরা পারফরমারদের তালিকায় থাকেন। দুজনই নানা আসরে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ব্যক্তিগত নানা সাফল্যও তাদের আছে। কিন্তু ট্রফির ছোঁয়া তারা পাচ্ছিলেন না। দুজনই আগে দুইবার করে ফাইনাল খেলে হেরেছেন। অবশেষে এবার তারা সেই অনির্বচনীয় অনুভূতির ছোঁয়া পেলেন।
জয় নিশ্চিত হওয়ার একটু আগে আউট হয়ে যান মুশফিক। তবে শিরোপা জয়ের মুহূর্তটিতে ক্রিজেই ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। জয়ের পর বরিশালের উদযাপনের মধ্যমণি হয়ে ওঠেন এই দুজন।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তামিম বললেন, শিরোপা জিততে পারলে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহকে উৎসর্গ করার কথা তিনি আগেই ভেবে রেখেছিলেন।
"অবশ্যই যে কোনো ট্রফি দারুণ। কিন্তু এবার একটু ভিন্ন চ্যালেঞ্জ ছিল। কারণ আমাদের দলে এমন কয়েকজন ছিল, কিছু তরুণ খেলোয়াড় বা মিরাজ বলুন বা সৌম্য… দুইজন সিনিয়র ক্রিকেটার রিয়াদ ভাই, মুশফিক… তারা দেশকে অনেকদিন ধরে সেবা দিচ্ছে। কিন্তু ওরা এই ট্রফিটা এখনও পায়নি। আমার নিজেরই একটা ইচ্ছা ছিল যে, আল্লাহ যদি আমাদেরকে এই ট্রফি দেয় (ট্রফি), তাহলে এই ট্রফি তাদের উৎসর্গ করব।"
"আমি জানি মিরাজ, সৌম্য, তাইজুল… তাদের সামনে অনেক সময় আছে অনেক ট্রফি জেতার। আমি জানি না রিয়াদ ভাই ও মুশফিক ভাই (কতদিন খেলবে)…। যেভাবে তারা পারফর্ম করছন, হয়ত চালিয়ে যাবেন। অন্যদের মতো এতটা নয়। এই কারণেই প্রেজেন্টেশনের সময় ওদের নিয়ে গিয়েছি। আমি সত্যিই তাদেরকে উৎসর্গ করতে চেয়েছিলাম। কয়েকবার তারা খুব কাছাকাছি গিয়েছে, কিন্তু জিততে পারেনি। চ্যালেঞ্জিং ছিল, কিন্তু আমি খুশি।”
বরিশালের শিরোপা জয়ের পেছনে মুশফিককে বড় কৃতিত্বও দিলেন তামিম। মাঠেল ক্রিকেটে তার নেতৃত্বের কাজ অনেকটাই সহজ করে দিয়েছিলেন এই কিপার-ব্যাটসম্যান।
"আমরা অনেক সময় কৃতিত্ব সবাইকে ঠিকভাবে দেই না। যার যতটুকু প্রাপ্য, কৃতিত্ব দেওয়া উচিত। এই টুর্নামেন্ট যখন শুরু হয়, তখন আমি মুশফিককে গিয়ে বলি, 'তুই কি মাঠের ব্যাপারগুলি দেখতে পারি? বোলিং পরিবর্তন, ফিল্ডিং, এসব দেখবি।' এটা আমাকে দম ফেলার সুযোগ দিয়েছে, কারণ আমি বাইরের ব্যাপারগুলি দেখছিলাম- কোন ক্রিকেটার আসছে, কোন ক্রিকেটার যাচ্ছে, কী হচ্ছে না হচ্ছে , এসব।"
"মুশফিক অসাধারণ ছিল। ও এই কাজ করাতে আমার ওপর চাপ অনেক কমে গেছে। নিজের ক্রিকেট ও ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দিতে পেরেছি। আপনারা খেয়াল করে থাকলে দেখেছেন, ওর সম্পৃক্ততা অনেক ছিল। তাকে ধন্যবাদ জানাতেই হবে। এই ট্রফি আমার চেয়ে কারও বেশি প্রাপ্য থাকলে সেটা মুশফিক। কারণ অনেক ভালো কিছু সে করেছে।"
তামিমের মতে, দেশের তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হতে পারেন মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ।
"তারা দুর্দান্ত পেশাদার ক্রিকেটার। বাংলাদেশে কাউকে যদি আদর্শ মানতে চান ক্রিকেটার হিসেবে, সেটা শুধু মাঠের পারফরম্যান্সে নয়, পারফরম্যান্সের আগে একজন কীভাবে প্রস্তুত হয়, সেখানে মুশফিকের চেয়ে ভালো কেউ নেই।"
"এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তার নিবেদনও আমরা দেখেছি। আমরা দেখেছি, বিশ্বকাপে তিনি কেমন পারফর্ম করেছেন, বিশ্বকাপের আগে যতকিছুর মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, তার পরও সেখান থেকে ফিরে রান করেছেন। কোনো তরুণ ক্রিকেটারের যদি শেখার থাকে, ওরা নিজেরাই শিখে নেবে। কারণ তাদের সামনে উদাহরণ আছে।"
মাহমুদউল্লাহ এবার শ্রীলঙ্কা সিরিজের দল দিয়ে ফিরেছেন বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে। মুশফিক আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে। তবে এবারের বিপিএলের ফাইনালে ওঠার পর সংবাদ সম্মেলনে তিনি ইঙ্গিত দেন, সেই অবসর স্বেচ্ছায় ছিল না।
মুশফিক যদি অবসর ভেঙে ফেরেন এই সংস্করণে, তাতে বাংলাদেশ ক্রিকেটের উপকারই হবে বলে মনে করেন তামিম।
"সে নিজে যদি সিদ্ধান্ত নেয় ফেরার... এরকম অসংখ্য উদাহরণ আছে যে কিংবদন্তি ক্রিকেটাররাও অবসর থেকে ফিরে খেলেছে। যেভাবে সে ব্যাট করছে, সে যদি ফেরার সিদ্ধান্ত নেয়, বাংলাদেশের ক্রিকেটের তাতে উপকারই হবে। এর চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না।"