শূন্য রানে ফিরে ১৬ বছরের পথচলা থামল ফিঞ্চের

পেশাদার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শেষটা ব্যাট হাতে রাঙাতে না পারলেও জয়ীর বেশে বিদায় নিলেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2024, 03:46 PM
Updated : 13 Jan 2024, 03:46 PM

প্রতিপক্ষের ‘গার্ড অব অনার’ পাওয়ার মধ্য দিয়ে ব্যাটিংয়ে নামলেন অ্যারন ফিঞ্চ। তবে টিকতে পারলেন কেবল তিন বল। পেসার জোয়েল প্যারিসকে বেরিয়ে এসে খেলে বল তুলে দিলেন আকাশে। মিড-অফে সহজ ক্যাচ মুঠোয় জমালেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ফিঞ্চ একবার ব্যাটের দিকে তাকিয়ে হাঁটা দিলেন ড্রেসিং রুমের পথে। 

মেলবোর্নের ডকল্যান্ডস স্টেডিয়ামের গোটা গ্যালারি তখন দাঁড়িয়ে। ৪১ হাজারের বেশি দর্শকের করতালিতে প্রকম্পিত চারপাশ। হাঁটতে হাঁটতে ব্যাট ও হেলমেট উঁচিয়ে সবার অভিনন্দনের জবাব দিলেন ফিঞ্চ। মাঠ ছেড়ে চলে গেলেন ড্রেসিং রুমে। পেশাদার ক্রিকেটে শেষবারের মতো! 

বিগ ব্যাশের এই ম্যাচ দিয়েই ১৬ বছরের পেশাদার ক্যারিয়ারের ইতি টানেন ফিঞ্চ। শেষটা ব্যাট হাতে রাঙাতে পারেননি। আউট হন শূন্য রানে। ম্যাচ শেষে সেই হতাশা হয়তো আর থাকার কথা নয় তার। জিতেছে যে দল।

মেলবোর্ন স্টার্সের বিপক্ষে শনিবারের ম্যাচটি ৬ উইকেটে জিতেছে মেলবোর্ন রেনেগেডস। ১৩৮ রানের লক্ষ্য পেরিয়ে গেছে তারা ১৬ বল হাতে রেখে। 

বিদায়ের ঘোষণাটা এই মাসের শুরুতেই দিয়েছিলেন ফিঞ্চ। গত ২৩ ডিসেম্বরের পর থেকে রেনেগেডসের একাদশের বাইরে ছিলেন তিনি। মেলবোর্ন ডার্বি দিয়ে তাকে বিদায় দেওয়ার প্রস্তুতি নেয় দল। এই ম্যাচের আগে তার ৫ নম্বর জার্সি অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্তও জানানো হয়। 

বিগ ব্যাশের শুরু থেকে শুধু রেনেগেডসের হয়েই খেলেছেন ফিঞ্চ। ১৩ আসরের সবগুলোতে খেলেছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতাটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ৩৭ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। তার ৩ হাজার ৩১১ রানের চেয়ে বেশি আছে কেবল ক্রিস লিনের, ৩ হাজার ৭২৫ রান। 

রেনেগেডসের হয়ে ফিঞ্চ খেলেছেন ১০৭ ম্যাচ। বিগ ব্যাশে কোনো একটি দলের হয়ে তার চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন আর কেবল তিন জন।

বিগ ব্যাশ ছাড়াও আইপিএল, ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে ফিঞ্চ ছিলেন নিয়মিত মুখ। আইপিএলে ১১ আসরে খেলেছেন তিনি; ৯২ ম্যাচে ১৫ ফিফটিতে রান করেছেন ২ হাজার ৯১। টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে ৫৭ ম্যাচে তার রান ২ হাজার ৬৭। 

তিনটি বড় টি-টোয়েন্টি লিগে ২ হাজার করে রান করা একমাত্র ক্রিকেটার তিনিই। বিদেশি ক্রিকেটার হিসেবে দুটি লিগে ২ হাজার করে রান করার কীর্তিও শুধুই তার। 

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর শুধু বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি লিগগুলোতেই খেলছিলেন ফিঞ্চ। অস্ট্রেলিয়ার একমাত্র টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের সেই পথচলাও এবার থামল। 

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের গ্রেটদের কাতারে ফিঞ্চকে অনায়াসে রাখা যায়। এই সংস্করণে ১০ হাজার রান করা ১০ ক্রিকেটারের একজন তিনি। ৩৮৭ ম্যাচে ১১ হাজার ৪৫৮ রান করে তিনি সপ্তম সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। তার ৮টির চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি আছে কেবল ক্রিস গেইল (২২) ও বাবর আজমের (১০)।

ফিঞ্চের ১ হাজার ৯৫টি চার চতুর্থ সর্বোচ্চ। তার ৪৫২ ছক্কার চেয়ে বেশি আছে আর কেবল ১০ জনের। 

এই সংস্করণে একাধিক দেড়শ রানের ইনিংস খেলা তিন ব্যাটসম্যানের একজন তিনি। বাকি দুজন গেইল ও ব্রেন্ডন ম্যাকলালাম। তিন জনেরই ২টি করে। 

ফিঞ্চের ৯ হাজার ৬৯৭ রান এসেছে ওপেনিংয়ে নেমে, এই পজিশনে যা চতুর্থ সর্বোচ্চ। 

প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দেড়শ রানের ইনিংস খেলার কীর্তি গড়েন তিনিই, ২০১৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওই ম্যাচে করেছিলেন ১৫৬। পাঁচ বছর পর নিজের রেকর্ড ভেঙে জিম্বাবুয়ে বিপক্ষে করেন ১৭২, এখনও যা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড। 

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দুটি দেড়শ রানের ইনিংস নেই আর কারও। তিনি ছাড়া দেড়শ রানের ইনিংস আছেই আর কেবল একজনের। ২০১৯ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ১৬২ রান করেছিলেন আফগানিস্তানের হযরতউল্লাহ জাজাই। 

সব মিলিয়ে আলো ঝলমলে এক ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন অ্যারন জেমস ফিঞ্চ।