টানা পাঁচ পরাজয়ে শুরু করা সিলেট আসর শেষ করল পঞ্চম জয়ে

বিপিএলের প্রাথমিক পর্বের শেষ ম্যাচেও হেরে গেল খুলনা, টানা ৪ জয়ের আসর শুরু করা দল পরের ৭ ম্যাচে জিততে পারল কেবল ১টিতে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2024, 04:33 PM
Updated : 23 Feb 2024, 04:33 PM

শীর্ষ চারে জায়গা নিয়ে কৌতূহল যা কিছু ছিল, সব চুকেবুকে যায় দিনের প্রথম ম্যাচেই। প্রাথমিক পর্বের শেষ ম্যাচটি তাই আক্ষরিক অর্থেই রূপ নেয় নিয়ম রক্ষার ম্যাচে। সেখানে প্রাপ্তির উপকরণ কিছু খুঁজে নিল সিলেট। টুর্নামেন্ট শেষ করল তারা জয়ের স্বস্তিতে। 

বিপিএলের প্রাথমিক পর্বের শেষ ম্যাচে খুলনা টাইগার্সকে ৬ উইকেটে হারাল সিলেট স্ট্রাইকার্স। 

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের মন্থর উইকেটে দারুণ বোলিংয়ে খুলনার রান ১২৮ রানে আটকে রাখে সিলেট। রান তাড়ায় শুরুতে দুই ওভারে দুই উইকেট হারালেও তারা শেষ পর্যন্ত জিতে যায় দুই ওভার বাকি রেখেই। 

ব্যাটে-বলে দারুণ ফর্মে থাকা বেনি হাওয়েল এই ম্যাচের সিলেটের জয়ের নায়ক। দারুণ বোলিংয়ে ৪ ওভারে ১৫ রানে ৩ উইকেট নেন তিনি। এরপর ব্যাট হাতে ছোট্ট ক্যামিওতে দলকে পৌঁছে দেন জয়ের ঠিকানায়। 

টানা ৫ পরাজয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল যে দল, সেই সিলেট পরের ৭ ম্যাচে জয়ের দেখা পেল ৫টিতেই। টানা ৪ জয়ে আসর শুরু করে উড়তে থাকা খুলনা পরের ৭ ম্যাচে জয় পেল স্রেফ ১টিতে। শেষ পর্যন্ত এই দুই দলেরই পয়েন্ট সমান ১০। রান রেটে এগিয়ে থাকায় ওপরে থেক আসর শেষ করল খুলনা। 

সিলেটের রান তাড়ার শুরুটা ছিল যাচ্ছেতাই। প্রথম ওভারেই নাহিদুল ইসলামের স্টাম্প সোজা বল জায়গা বানিয়ে কাট করার চেষ্টায় শূন্য রানে বোল্ড হন জাকির হাসান। টুর্নামেন্টের শুরুটা আশা জাগানিয়া করলেও পরে আর একদমই কথা বলেনি তার ব্যাট। শেষ ৭ ম্যাচের ৬টিতেই তিনি আ্ইুট হলেন দুঅঙ্ক ছোঁয়ার আগে, আরেকটিতে রান ১৮। 

পরের ওভারে ওয়েইন পার্নেলকে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় কেনার লুইস ধরা পড়েন ৫ রানে। 

৬ রানে ২ উইকেট হারানো দলকে এগিয়ে নেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও ইয়াসির আলি চৌধুরি। শান্তর যদিও থিতু হতে সময় লাগে কিছুটা। প্রথম বাউন্ডারি পাওয়ার আগে তার রান ছিল ১৪ বলে ৮। ইয়াসির সেই সময়টায় কয়েকটি বাউন্ডারিতে সচল রাখেন রানের চাকা। পরে শান্তও রানের গতি বাড়ান কিছুটা। 

ঠাণ্ডা মাথায় দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল এই জুটি। তবে দুজনের কেউই কাজ শেষ করে ফিরতে পারেননি। জাকিরের মতোই জায়গা বানিয়ে খেলার চেষ্টায় শান্ত বোল্ড হয়ে যান ৩৭ বলে ৩৯ রান করে। 

গত বিপিএলের সর্বোচ্চ রান করা ব্যাটসম্যানের এবার আসরটি কাটল ভুলে যাওয়ার মতো। ১২ ইনিংসে কোনো ফিফটি নেই তার। ১৭৫ রান করেছেন তিনি ১৪.৫৮ গড় ও ৯৩.৫৮ স্ট্রাইক রেটে। 

নিয়ন্ত্রিত ব্যাটিংয়ে এগোতে থাকা ইয়াসিরও পরে নিজের উইকেট হারান ৪৩ বলে ৪৬ রান করে। সিলেটের জয় নিয়ে অবশ্য সংশয় জাগেনি। বাকি কাজ শেষ করেন মোহাম্মদ মিঠুন ও বেনি হাওয়েল। 

সিলেট অধিনায়ক মিঠুন অপরাজিত থাকেন ১৫ বলে ১৯ রান করে। একটি করে চার ও ছক্কায় ১২ রানে অপরাজিত থাকেন হাওয়েল।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা খুলনা টাইগার্সের শুরুতে দুই প্রান্তের চিত্র ছিল দুই রকম। এক প্রান্তে ঝড় তোলেন আফিফ হোসেন, আরেকপ্রান্তে ধুঁকতে থাকেন অন্যরা। 

আফিফ নিজেও যদিও প্রথম দুই ওভারে ৭ বল বল খেলে রান করেছিলেন কেবল ১। তৃতীয় ওভারে সানজামুল ইসলামকে দুই ছক্কায় উড়িয়ে তিনি ডানা মেলে দেন। পরে তানজিম হাসানের এক ওভারে মারেন এক ছক্কা দুই চার। 

তবে টপ অর্ডারের অন্য পান্ত মুখ থুবড়ে পড়ে। দারুণ বোলিংয়ে খুলনার ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরেন বাঁহাতি পেসার শফিকুল ইসলাম ও বাঁহাতি স্পিনার সামিত প্যাটেল। শফিকুলের ভেতরে ঢোকা বলে এনামুল হক বোল্ড হয়ে যান ৯ বলে ১০ রান করে। তিনে নেমে হাবিবুর রহমান সোহান অস্বস্তিময় উপস্থিতির পর বিদায় নেন ১৪ বলে ৩ রান করে। 

১০ ওভার শেষে খুলনার রান ছিল ৬৪, তাতে আফিফের রানই ৪২। তার সঙ্গে তাল মেলাতে পারেননি চারে নামা মাহমুদুল হাসান জয়ও (১২ বলে ১১)। 

নাজমুল হোসেন শান্তর বলে ছক্কায় আফিফ পঞ্চাশে পা রাখেন ৩১ বলে। এরপর থমকে যান তিনিও। সামিতের বলে সীমনায় ধরা পড়েন তিনি ৩৫ বলে ৫২ করে। 

সহায়ক উইকেটে দারুণ লাইন-লেংথের সঙ্গে স্লোয়ার ও কাটারের মিশেলে মাঝের ওভারগুলোয় খুলনার ব্যাটসম্যানদের নাকাল করে ছাড়েন বেনি হাওয়েল। 

আফিফের বিদায়ের পর জেসন হোল্ডার ও নাহিদুল ইসলাম তেমন কিছু করতে পারেননি। ওয়েইন পার্নেল ১৪ বলে ২১ রান করে কিছুটা বাড়ান রান। তার পরও ১৩০ ছুঁতে পারেনি দল। শেষ ৬ ওভারে কেবল ৩০ রান তুলতে পারে তারা। 

সেই পুঁজি নিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়াই জমাতে পারেনি তারা। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

খুলনা টাইগার্স: ২০ ওভারে ১২৮/৮ (এনামুল ১০, আফিফ ৫২, হাবিবুর ৩, জয় ১১, হোল্ডার ৬, পার্নেল ২১, নাহিদুল ১১, আরিফ ৪, রুবেল ৬*, জন-রাস জাগেসার ১*; সামিত ৪-১-১২-১, শফিকুল ৪-০-২০-২, সানজামুল ২-০-২৫-০, তানজিম ৪-০-৩৬-২, হাওয়েল ৪-০-১৫-৩, শান্ত ২-০-১৯-০)। 

সিলেট স্ট্রাইকার্স: ১৮ ওভারে ১৩০/৪ (লুইস ৫, জাকির ০, শান্ত ৩৭, ইয়াসির ৪৬, মিঠুন ১৯*, হাওয়েল ১২*; নাহিদুল ৪-০-১১-১, পার্নেল ২-০-২০-১, জন-রাস জাগেসার ২-০-১৮-০, টমাস ২-০-২২-০, হোল্ডার ৩-০-১৯-০, আরিফ ৩-০-১৯-১, রুবেল ২-০-২১-০)। 

ফল: সিলেট স্ট্রাইকার্স ৬ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: বেনি হাওয়েল।