নিভৃতে যারা কাজ করে, তাদের পুরস্কৃত করুন: প্রধানমন্ত্রী

“এই পুরস্কারপ্রাপ্তির ফলে মানুষের জন্য কাজ করা ও দেশের জন্য কাজ করার ক্ষেত্রে আরো অনেকে অনুপ্রাণিত হবেন এবং দেশের কল্যাণে কাজ করবেন, সেটাই আমরা আশা করি।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2024, 08:56 AM
Updated : 25 March 2024, 08:56 AM

নিভৃতে থেকে যারা মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন, সেইসব নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে সম্মানিত করার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন,“আমি আহ্বান জানাচ্ছি যারা বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে ও অন্যান্য এলাকায় নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করে চলেছেন, তাদের খুঁজে বের করে পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করার জন্য। তাদের জন্য নয়, বরং জনগণের কল্যাণের জন্য। কারণ, তারা কখনোই সামনে আসেন না বা আসতে চান না। নিজস্ব উদ্যোগে বা স্ব-প্রণোদিত হয়ে যারা মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন অবদান রেখে যাচ্ছেন তাদেরকে পুরস্কৃত করতে পারাটাই সবচেয়ে বড় কথা।”

সোমবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ২০২৪ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার বিরতণ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন সরকারপ্রধান। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এ অনুষ্ঠানে ১০ ব্যক্তি ও তাদের প্রতিনিধিদের হাতে দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় বেসামরিক পুরস্কার তুলে দেন তিনি।

যারা স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন, তাদের সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই পুরস্কারপ্রাপ্তির ফলে মানুষের জন্য কাজ করা ও দেশের জন্য কাজ করার ক্ষেত্রে আরো অনেকে অনুপ্রাণিত হবেন এবং দেশের কল্যাণে কাজ করবেন, সেটাই আমরা আশা করি।”

রোজার মাসে দেশের মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, সেজন্য খাদ্য বিতরণ করার কথা তুল ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা ইফতার পার্টি বাদ দিয়েছি, আমাদের নেতাকর্মী, প্রতিষ্ঠান সকলকে আহ্বান করেছি, ইফতার পার্টি না করে সাধারণ মানুষের মাঝে ইফতার বণ্টন করতে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে। ইফতার খাওয়াটা বড় কথা না, মানুষকে দেওয়াটাই বড় কথা। আমরা খাওয়ার বিষয়টা বাদ দিয়ে দেওয়ার দিকে মনোযোগ দিয়েছি। মানুষের যাতে কোনরকম কষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেছি।”

করোনাভাইরাস মহামারীর পর ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধ আর পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞায় বিশ্ব অর্থনীতির ওপর যে প্রভাব পড়ছে, সে কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আরো কঠিন অবস্থা করে দিয়েছে যে সমস্ত পণ্য আমাদের আমদানি করতে হয়। পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে, মূল্য বেড়ে গেছ, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সমস্যা শুধু আমাদের না, এটা বিশ্বব্যাপী সমস্যা।"

প্রধানমন্ত্রী বলেন, "জাতির পিতাকে হত্যা করার পর বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃতি করা হয়েছিল। ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ ছিল। যে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধরা এদেশে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, সেই জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ ছিল। জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার হবে না, সে আইন করে তাদেরকে পুরস্কৃত করা হয়েছিল বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে চাকরি দিয়ে, রাজনীতি করার অধিকার দিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী যারা মা-বোনদেরকে পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিয়েছিল, তাদেরকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল।

“মুক্তিযুদ্ধের চেতনা,  স্বাধীনতার যে লক্ষ্য, আদর্শ, তার থেকে উল্টো পথে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ। আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য, আমরা বিজয় অর্জন করেও বিজয়ের কথা বলতে পারিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু রাষ্ট্রটি দেননি, বাংলাদেশ কীভাবে চলবে, সেই পথরেখাও তিনি দেখিয়েছেন। আবার বঙ্গবন্ধুর কারণে স্বাধীন বাংলাদেশে ঘাঁটি গেড়ে বসেনি ভারত। যে উদ্দেশ্যে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, সেই উদ্দেশ্য ও হারানো গৌবর ফিরিয়ে এনেছে আওয়ামী লীগ।”

শেখ হাসিনা বলেন, "আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে, ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গঠনে আমার এগিয়ে যাব। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়, এটাই আমাদের নীতি। তারপরও দেশে কিছু মানুষ আছে, যারা আগুন সন্ত্রাস করে, তাদের সুমতি হোক সেটাই চাই আমরা।"

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে যে মিলিটারি ডিক্টেটর ক্ষমতায় এসেছিল, তারাও এ দেশে একাত্তরের মতই গণহত্যা চালিয়েছিল। আমাদের সেনা অফিসারদের একের পর এক হত্যা করা হয়েছে। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীর ওপর নির্যাতন চালিয়েছে এবং এরপরে নির্বাচনী প্রহসন, দল গঠন, দল ভাঙন। নানান ধরনের খেলা ২১টি বছর আমাদের ওপর চলেছে।"

সরকার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছে মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, "এই বাংলাদেশের একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না, ঠিকানাবিহীন থাকবে না। প্রতি ঘরে ঘরে আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। শিক্ষার হার বৃদ্ধি করেছি, দারিদ্র্যের হার কমিয়ে এনেছি, উৎপাদন বৃদ্ধি করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি, চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।

"জাতিসংঘের এসডিজি বাস্তবায়নের পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব লক্ষ্য স্থির করে আমরা আগাচ্ছি। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলে জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব। স্বাধীনতার মাসে এটাই আমাদের প্রত্যয়। স্বাধীনতার মাসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই, গণহত্যায় জড়িতদের প্রতি ঘৃণা জানাই। আর যেন এরকম না হয়। এখনও ফিলিস্তিনে গণহত্যা চলছে, আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। আমরা চাই এই গণহত্যা বন্ধ হোক। আমরা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আছি। আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। কারণ যুদ্ধের ভয়াবহতা কেমন আমরা জানি।"

শেখ হাসিনা বলেন, "জাতির পিতা চেয়েছিলেন, একটি স্বাধীন জাতি। যে জাতি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি সমৃদ্ধ ভুখণ্ড পাবে। তিনি এজন্য তার জীবন উৎসর্গ করেছেন। স্বাধীনতার পর তিনি অল্প সময় পেয়েছিলেন। এর মধ্যে তিনি একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলেছিলেন। এটা এত সহজ ছিল না। কিন্তু জাতির পিতা শেখ মুজিবের মত নেতৃত্ব ছিল বলে সম্ভব হয়েছে। তিনি মাত্র তিন বছরের মধ্যে দেশকে স্বল্পোন্নোত দেশের স্বীকৃতি এনে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই ঘুণে ধরা সমাজ তিনি ঢেলে সাজাবেন। তাই করেছেন। কিন্তু সেই সময়ই আসল আঘাত। সপরিবারে তাকে জীবন দিতে হল। দুর্ভাগ্য আমাদের।"

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের সঞ্চালনায় মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, বিচারপতি, জাতীয় সংসদ সদস্য, বিদেশি কূটনীতিক, সরকারের পদস্থ সামরিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ, কবি-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী এবং দেশবরেণ্য ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।