আলতাফকে স্থায়ী বিচারক নিয়োগে বিবেচনা করা যায়: আপিল বিভাগ

২০২৩ সালের ১৪ জুন দেওয়া এ রায় পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশিত হয়েছে মঙ্গলবার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2024, 12:09 PM
Updated : 28 Feb 2024, 12:09 PM

সাবেক অতিরিক্ত বিচারক এ বি এম আলতাফ হোসেনকে হাই কোর্টের স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগের বিষয়টি সরকার বিবেচনা করতে পারে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে আপিল বিভাগ। 

আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে ৭ বিচারকের বেঞ্চ ১৫৬ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। ২০২৩ সালের ১৪ জুন দেওয়া ওই রায় পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশিত হয়েছে মঙ্গলবার। 

বেঞ্চের অপর ছয় সদস্য হলেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি বোরহান উদ্দিন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন। 

আপিল বিভাগে এ মামলায় এ বি এম আলতাফ হোসেনের পক্ষে অ্যাডভোকেট প্রবীর নিয়োগী, মোমতাজ উদ্দিন ফকির, মোতাহার হোসেন, এম সাইদ আহমেদ, মাহবুব শফিকসহ ১১ জন আইনজীবী শুনানি করেন। 

রায় প্রকাশের পর অ্যাডভোকেট প্রবীর নিয়োগী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “৭ বিচারপতির মধ্যে ৬ জন এ বি এম আলতাফ হোসেনকে বিচারক হিসেবে নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করতে একমত পোষণ করেছেন। শুধু একজন ভিন্নমত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই রিট মামলা গ্রহণযোগ্য নয়।

“রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে – সরকার এ বি এম আলতাফ হোসেনকে বিচারক হিসেবে স্থায়ীভাবে নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।“ 

সরকার এটি মানতে বাধ্য কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এটা সেভাবে বলা উচিত নয়; সর্বোচ্চ আদালত ইচ্ছা প্রকাশ করেছে এটা। তবে পৃথিবীর বহু দেশে নজির আছে উচ্চ আদালতের ইচ্ছা মানে এটা ইম্প্লিমেন্ট করতে হবে।“ 

এটা না করলে আদালত অবমাননার মত কিছু হবে কিনা প্রশ্ন করা হলে এ আইনজীবী বলেন, “সেটা বলার সময় এখনও আসেনি। এখন কিছু বলা যাবে না।“ 

২০১২ সালের ১৪ জুন এবিএম আলতাফ হোসেনসহ মোট ছয়জনকে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে হাই কোর্টে নিয়োগ দেওয়া হয়। অতিরিক্ত বিচারপতি হিসাবে দুই বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আলতাফকে বাদ দিয়ে অন্য পাঁচ জনকে ২০১৪ সালের ৯ জুন স্থায়ী করা হয়। 

এরপর স্থায়ী নিয়োগ পেতে হাই কোর্টের নির্দেশনা চেয়ে ওই বছরের ১২ অগাস্ট রিট আবেদন করেন আলতাফ হোসেন। 

এদিকে তাকে স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে ওইবছর ২৩ জুলাই আলাদা রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ ইদ্রিসুর রহমান। 

ওই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর হাই কোর্ট দুটি আবেদনই খারিজ করে দেয়। এর বিরুদ্ধে আপিলের অনুমিতে চেয়ে আবেদন করেন আলতাফ। 

২০১৪ সালের ৬ নভেম্বর তার লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে (আপিলের অনুমতি) সাত আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দেয় আপিল বিভাগ। 

এই সাত আইনজীবী হলেন- ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, এম আমীর-উল ইসলাম, মাহমদুল ইসলাম (পরে প্রয়াত), আব্দুল ওয়াদুদ ভূইয়া, আজমালুল হোসেন কিউসি ও এএফ হাসান আরিফ। 

বিচারক পদে স্থায়ী না করায় ফরিদ আহমেদ শিবলীও আরেকটি রিট আবেদন করেছিলেন। 

ফরিদ আহমদ শিবলীসহ ১০ জন ২০১৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি দুই বছরের জন্য অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে হাই কোর্টে নিয়োগ পান। এরপর ওই বছর ৭ ফেব্রুয়ারি আটজনকে স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। 

ওই দশজনের মধ্যে বিচারপতি জে এন দেব চৌধুরী মারা মারা গেছেন। আর বাদ পড়েছেন ফরিদ আহমদ শিবলী।

স্থায়ী নিয়োগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন বিচারপতি শিবলী। 

তাকে আপিল বিভাগে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে ওইদিনই আবেদটির নিষ্পত্তি করে দেয় বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাই কোর্ট বেঞ্চ। 

সে অনুসারে ওই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগে আবেদন করেন বিচারপতি শিবলী। 

রায়ের পর্যবেক্ষণে সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, এ বি এম আলতাফ হোসেনকে কেন বিচারক হিসেবে স্থায়ী করা হল না, তার রেকর্ডে এর যথাযথ কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। যদিও তাকে স্থায়ী করার বিষয়ে সে সময়ের প্রধান বিচারপতি সুপারিশ করেছিলেন। 

আর সাবেক অতিরিক্ত বিচারক ফরিদ আহমেদ শিবলীর বিষয়ে বলা হয়, ৬৭ বছর পার হয়ে যাওয়ায় তার আপিল নিষ্পত্তি করে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন:

স্থায়ী নিয়োগ না পাওয়া দুই বিচারকের আপিল শুনানি একসঙ্গে