রোজায় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে, সংসদে প্রধানমন্ত্রী

গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সংসদ নেতা বলেন, নানা পদক্ষেপের পরও যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2024, 01:16 PM
Updated : 28 Feb 2024, 01:16 PM

রোজার সময় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামে লাগাম টানা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার সংসদে প্রশ্নোত্তরে আসন্ন রোজার মাসে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণসহ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এসব পদক্ষেপের ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে দরিদ্র পরিবার, বয়স্ক, বিধবা, স্বামী নিগৃহীতা মহিলাসহ নিম্নআয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় যেমন স্বস্তি আসবে, তেমনি পবিত্র রমজান মাসে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে থাকবে এবং বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামে লাগাম টানা সম্ভব হবে।"

সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আলী আজমের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন সরকারপ্রধান।

এর আগে বিকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, “বর্তমান সরকার জনগণের সরকার। তাই জনগণের কষ্ট লাঘবে সরকার সবসময় সচেষ্ট। সরকার নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সকল কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

“ইতিমধ্যে আমরা ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি অনেকাংশে সংযত করতে পেরেছি। বিশ্ববাজারে কয়েকটি পণ্য যেমন- জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল, গম, সারসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য, ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের দেশে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ অনুভূত হচ্ছে।”

মূল্যস্ফীতি কমাতে বিভিন্ন শুল্কছাড় দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান

নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়েও কোনো গুজবে কান না দিতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আলী আজমের সম্পূরক প্রশ্নে তিনি বলেন, “সকলকে অনুরোধ করব গুজবে কান দেবেন না। সকলে সচেতন থাকলে আর গুজবে কান না দিলে তাহলে গুজব ছড়িয়ে কেউ সমস্যা তৈরি করতে পারবে না।

সংসদ নেতা বলেন, “মজুদ যাতে করতে না পারে তার জন্য কী কী করণীয় আগেই জানিয়েছি। অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে মানুষের খাদ্য নিয়ে খেলতে না পারে সেজন্য যথেষ্ট সচেতন রয়েছি। সেই সাথে বলতে চাই বহু পণ্য আমাদের আমদানি করতে হয়। আমরা পরনির্ভশীলতা কাটিয়ে উঠতে চাই। নিজেদের উৎপাদন বাড়াতে চাই।”

জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুর সম্পূরক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা মোবাইল কোর্টসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। তারপরও যদি ইচ্ছাকৃতভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে একটা কথা বলি। রমজান হচ্ছে কৃচ্ছ্রতা সাধনের মাস। রমজানে মানুষ যেন কম খাবার গ্রহণ করে, খাদ্য সংরক্ষণ করে। কিন্তু আমাদের এখানে দেখি যেন খাবার গ্রহণের বিষয়টি একটু বেড়েই যায়।

“প্রকৃতপক্ষে সেজন্য তো রজমান নয়। রমজান হচ্ছে সংযমের মাস। সংযম করতে হবে। বিশেষ কোনো একটা জিনিস না খেলে হবে না, রোজা রাখা যাবে না বা ইফতার করা যাবে না- এই মানসিকতাটা বদলাতে হবে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “…ইদানিং দেখা যাচ্ছে প্রত্যেকটি জিনিসের দাম কিন্তু কমেছে। একেবারেই কমেনি তা নয়। কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের দাম যদি বেশি হয়ে যায় তহলে কৃষক ন্যায্যমূল্য পায় না। আবার যদি দাম বেশি বেড়ে যায় তাহলে নির্দিষ্ট আয়ের লোকের কষ্ট হয়। ভোক্তার জন্য কষ্ট হয়। এজন্য আমাদের দুটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হয়। এ ব্যাপারে সরকার যথেষ্ট সচেতন।

“শুধু সরকারই সব দেখেবে সেটা তো নয়। যারা নির্বাচিত প্রতিনিধি আছেন তাদেরও একটা দায়িত্ব রয়েছে। বাজার মনিটরিংয়ে সকলে সহযোগিতা করলে এই অসাধু ব্যবসায়ীরা এভাবে নিত্যপণ্যের মূল্য অসৎ উপায়ে বাড়াতে পারবে না। জনগণকে আহ্বান করব তারা এ বিষয়ে নজর রাখলে সবকিছু সহজ হয়ে যায়। আর আমরা সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি।  আরো পদক্ষেপ নেব। মোবাইল কোর্ট বসিয়ে শাস্তি দিচ্ছি। আমাদের যথাসাধ্য করে যাচ্ছি।”

নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশ ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির সঙ্গে মানুষের জীবনমানেরও উন্নয়ন ঘটেছে। তাই অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি জ্বালানি, প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদাও ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। ফলে গ্যাস চাহিদার সরবরাহ সামঞ্জস্যপূর্ণ করা সম্ভব হচ্ছে না।”

জ্বালানি খাতের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা এ সময় তুলে ধরেন তিনি।

স্বতন্ত্র সংসদ সংসদ সোহরাব উদ্দিনের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেবল আইন প্রয়োগ ও শাস্তির মাধ্যমে দুর্নীতি রোধ সম্ভব নয়। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে দুর্নীতি মূলোৎপাটন করা হবে।