ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি আটকে আছে জিএমজির নামে

প্রায় তিন বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া জিএমজি এয়ারলাইন্স কয়েকটি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি ‘ধরে রাখায়’ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অপারেশনে থাকা অন্য বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো।

আশিক হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Dec 2014, 02:25 PM
Updated : 31 Dec 2014, 03:03 PM

আন্তর্জাতিক রুটে বিমান পরিচালনার সব প্রস্তুতি নিয়েও তা শুরু করতে না পারার জন্য জিএমজির নামে ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দকে দায়ী করেছে একটি এয়ারলাইন্স। একই কারণে নতুন রুটে ফ্লাইট শুরু করতে না পারার কথা বলছে আরেকটি এয়ারলাইন্স।  

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বলছে, উচ্চ আদালতে একটি মামলা চলতে থাকায় কিছু করতে পারছেন না তারা।

গত ২০ মে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ বরাদ্দকৃত ফ্রিকোয়েন্সির তালিকা অনুসারে, ১০টি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চালানোর জন্য জিএমজির নামে বরাদ্দ রয়েছে মোট ৮১টি ফ্রিকোয়েন্সি।

অর্থাৎ আন্তর্জাতিক এ ১০টি গন্তব্যে সপ্তাহে ৮১টি ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবে জিএমজি, ২০১২ সালে যে প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বাতিল করেছে বেবিচক।

এ তালিকা অনুসারে, বিমান যোগাযোগ থাকা ১৬টি দেশের সঙ্গে চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশের বরাদ্দ পাওয়া ফ্রিকোয়েন্সিগুলো পাঁচটি বিমান সংস্থাকে পুনর্বণ্টন করা হয়েছে, যার মধ্যে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সও রয়েছে।

ভারতের সাথে উড়োজাহাজ চলাচল চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশের প্রাপ্ত ফ্রিকোয়েন্সি সংখ্যা ৬১টি। এরমধ্যে বিমানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১১টি, আর ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ পেয়েছে ১৫টি।

রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ১৪টি ফ্রিকোয়েন্সির জন্য আবেদন করলে তাদের নামে বরাদ্দ হয় সাতটি। আর আন্তর্জাতিকে নতুন লাইসেন্স পাওয়া নভো এয়ার ১০টি ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ চাইলেও তাদের নামে কোনো বরাদ্দ হয়নি।

বেবিচক বলছে, জিএমজির নামে ভারতের বিভিন্ন রুটে চলাচলের জন্য ২১টি ফ্লাইট বরাদ্দ থাকার কারণে রিজেন্টের আরো ৭টি ও নভো এয়ারের ১০টির প্রস্তাব বিবেচনা করা যায়নি।  

একইভাবে বন্ধ থাকা বিমান সংস্থা জিএমজির নামে সিঙ্গাপুর রুটে তিনটি, থাইল্যান্ডে পাঁচটি, মালয়েশিয়ায় ৭টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২১টি, কাতারে ৩টি, ওমানে ৭টি, সৌদি আরবে ৭টি, বাহরাইনে ৩টি এবং চীনে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ৪টি ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

জিএমজির নামে ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ থাকায় থাইল্যান্ডে ১০টি ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি চাইলেও ৫টি বরাদ্দ পেয়েছে নভোএয়ার, আর ওমানে ফ্লাইট চালানোর জন্য সাতটি ফ্রিকোয়েন্সি চেয়ে কোনটিই পায়নি রিজেন্ট এয়ারওয়েজ।

প্রায় এক বছর আগে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট শুরু করার অনুমতি পেয়েও শুরু করতে না পারার একটি কারণ হিসেবে জিএমজি এর নামে বরাদ্দ করা ফ্রিকোয়েন্সিকে দায়ী করছেন নভো এয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রাথমিকভাবে আমাদের পরিকল্পনা ছিল রিজিওনাল গন্তব্যগুলোতে ফ্লাইট শুরু করা। আমরা সেভাবেই আমাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করছিলাম। কিন্তু আমরা যখন ভারতের গন্তব্যগুলোতে ফ্লাইট শুরু করার জন্য আবেদন করলাম তখন বেবিচক থেকে বলা হলো জিএমজি এর নামে ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ থাকার কারণে আমাদের কোনো ফ্রিকোয়েন্সি দেওয়া যাচ্ছে না।”

এদিকে নাম প্রকাশে অনীহা জানিয়ে একটি বেসরকারি বিমান সংস্থার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জিএমজি নামে কোনো বিমান সংস্থার এখন অস্তিত্ব নেই। তারা তাদের নামে বরাদ্দ থাকা ফ্রিকোয়েন্সিগুলো অন্য বিমান সংস্থাগুলোর কাছে বিক্রি করতে চাচ্ছে। আর এ কারণেই একটি মামলা করে পুরো বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

“আর এ পরিস্থিতির সুযোগে ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলো লাভবান হচ্ছে।”

১৯৯৮ সালের এপ্রিলে কার্যক্রম শুরু করা জিএমজি এয়ারলাইন্স ২০০৪ সালে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে। ২০০৯ সালে এয়ারলাইন্সটির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার কিনে নেয় বেক্সিমকো গ্রুপ।

বকেয়া দুইশ কোটি টাকা পরিশোধ না করায় ২০১২ সালেই জিএমজির লাইসেন্স বাতিল করে দেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

একই বছর ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ আদালতে এ সংক্রান্ত একটি আবেদন দাখিল করা হয় জিএমজির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহাব সাত্তারের নামে।

এ মামলাটি বর্তমানে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

মামলায় বলা হয়েছে, অব্যাহতভাবে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি এবং প্রতিযোগিতার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে প্রতিষ্ঠানটি সাময়িকভাবে অপারেশন বন্ধ রেখেছে। নতুন পরিকল্পনাসহ প্রতিষ্ঠানটি পুনরায় ফিরে আসবে।

ততদিন পর্যন্ত বরাদ্দ পাওয়া ফ্রিকোয়েন্সিগুলো যেন বাতিল না করা হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিতে আদালতকে অনুরোধ জানানো হয় তাদের পক্ষ থেকে।

মামলায় বিবাদী করা হয় বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে।

এ বিষয়ে বেবিচকের ফ্লাইট অপারেশন্স অ্যান্ড ফ্লাইট সেফটি বিভাগের পরিচালক এস এম নাজমুল আনাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জিএমজি সংক্রান্ত একটি পিটিশন হাই কোর্টে বিচারাধীন থাকায় জিএমজির নামে বরাদ্দকৃত ফ্রিকোয়েন্সিগুলো অন্য এয়ারলাইন্সগুলোকে দেওয়া যাচ্ছে না। মামলা নিষ্পত্তি হলে এ বিষয়ে অগ্রগতি হতে পারে।”

‘ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ’ করে নিজেদের প্রস্তুত করার কথা বলে ২০১২ সালের ২৮ মার্চ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সবচেয়ে বড় বেসরকারি বিমান সংস্থা জিএমজি।

গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জিএমজি এয়ারলাইন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জীব কাপুরের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, “অস্বাভাবিক হারে তেলের দাম বাড়ায় এবং পরিবর্তিত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নিতে জিএমজি এয়ারলাইন্স নতুন ব্যবসায়িক পরিকল্পনা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে।”

আন্তর্জাতিক ছয়টি রুটে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বোয়িং-৭৬৭ এবং এমডি ৮০ মডেলের কয়েকটি উড়োজাহাজ ছিল জিএমজির। আর দুটি ড্যাশ ৮ উড়োজাহাজ দিয়ে অভ্যন্তরীণ তিনটি রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছিল তারা।

বিমান সংস্থাটির বিরুদ্ধে শেয়ার বাজার থেকে কারসাজির মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

জিএমজির বিরুদ্ধে এ সব অভিযোগের জবাব খুঁজতে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ কোনো কর্মকর্তাকেই পাওয়া যায়নি। তাদের প্রায় সব কর্মকর্তাই বর্তমানে অন্য বিমান সংস্থাগুলোতে কর্মরত আছেন।