মীর কাসেমের বিরুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার বোনের সাক্ষ্য

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামী নেতা মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন প্রসিকিউশনের সপ্তদশ সাক্ষী হাসিনা খাতুন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2014, 07:26 PM
Updated : 19 March 2014, 07:26 PM

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ বুধবার সাক্ষ্য দেয়া ৭২ বছর বয়সী হাসিনার ফুপাত ভাই জসিম ছিলেন একজন কিশোর মুক্তিযোদ্ধা, যাকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়।  

হাসিনা বলেন, মীর কাসেমের নেতৃত্বে আলবদর সদস্যরা জসীমকে ডালিম হোটেলে ধরে নিয়ে নির‌্যাতনের পর হত্যা করে লাশ কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেয়।

ডালিম হোটেলে জসীমের সঙ্গে বন্দি থাকা অন্যদের কাছে বিজয়ের পর এই তথ্য জেনেছেন বলে এই সাক্ষী জানান।

চট্টগ্রাম নগরীর বাসিন্দা হাসিনা বলেন, বাড়ি সন্দ্বীপে হলেও ১৯৭১ সালে জসিম চট্টগ্রাম কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ত এবং তাদের বাড়িতে প্রায়ই আসত।

যুদ্ধের মাঝপথে জসীমের কোনো খবর না পেয়ে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিভিন্ন জায়গায় ভাইয়ের খোঁজ করেন হাসিনা। এক পর্যায়ে ন্যাপ নেতা অ্যাডভোকেট শফিউল আলমের কাছে খবর পান তিনি।

“জসিমের কথা বলতেই তিনি (শফিউল) আমাকে জিজ্ঞেস করেন- তার বাড়ি কি সন্দ্বীপে? আমি ‘হ্যাঁ’ বললে তিনি বলেন, ডালিম হোটেলে তাকে (শফিউল) যে কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল,জসিমকেও সেই কক্ষে আটক করে মীর কাসেমের নেতৃত্বে আল-বদরের সদস্যরা নির্যাতন করে।”

শফিউল তখন হাসিনাকে বলেছিলেন, জসিমকে নির্যাতন করে রেখে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর অনেক কষ্টে চোখের বাঁধন খুলে তাকে মরণাপন্ন অবস্থায় দেখতে পান তিনি এবং এর অল্পক্ষণের মধ্যেই এই কিশোর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

শফিউলের পর সাইফুদ্দিন খান নামে আরেকজনের কাছে গেলে তিনিও একই কথা বলেন বলে হাসিনা জানান।

“জসীমের লাশটি কোথায় আছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন,তার মৃতদেহ পাওয়া যাবে না,কারণ তাকে হত্যা করে কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে।”

সাক্ষ্য দেয়া শেষ হলে হাসিনাকে জেরা করা শুরু করেন মীর কাসেমের আইনজীবী আবু বক্কর সিদ্দিকী। জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় আগামী ২৩ মার্চ পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করা হয়।

গত ৫ সেপ্টেম্বর মীর কাসেমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। তার বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগের মধ্যে আটজনকে নির্যাতনের পর হত্যা, লাশ গুম এবং ৩৪ জনকে অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে।

জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেমকে গত বছর ১৭ জুন গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

মীর কাসেম জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম প্রধান অর্থ জোগানদাতা হিসেবে পরিচিত। তিনি ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এবং রাবেতা আল ইসলামী নামে একটি এনজিও’র সাবেক আবাসিক প্রতিনিধি।

জামায়াত সমর্থক বলে পরিচিত দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশনেরও চেয়ারম্যান তিনি। ওই প্রতিষ্ঠানেরই সংবাদপত্র দৈনিক নয়া দিগন্ত এবং টেলিভিশন চ্যানেল দিগন্ত টেলিভিশন।

১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্রসংঘ নাম বদলে ইসলামী ছাত্রশিবির নামে বাংলাদেশে রাজনীতি শুরু করলে মীর কাসেম তার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন।