যৌথ প্রয়াস এগিয়ে নেয়ার ডাক বিমসটেক সম্মেলনে

সম্মিলিত সমৃদ্ধির জন্য যৌথ প্রয়াস এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয়ে মিয়ানমারের রাজধানী নে পি টোতে অনুষ্ঠিত হলো দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আঞ্চলিক জোট বিমসটেকের তৃতীয় শীর্ষ সম্মেলন।

সুমন মাহবুব নে পি টো থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 March 2014, 03:28 AM
Updated : 4 March 2014, 12:49 PM

নে পি টো আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় শুরু হয় এ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন এই জোটের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের স্বাগত জানান।

শীর্ষ নেতাদের বৈঠক ও তিনটি চুক্তি স্বাক্ষরের পর দুপুরে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোটের চেয়ারপারসনের দায়িত্ব হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে শেষ হয় সম্মেলন।   

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী সেরিং টোবগে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসে, থাইল্যান্ডের বিশেষ দূত ও বিমসটেকের স্থায়ী সচিব সিহাসাক ফুয়াংকেটকো এবং মিয়ানমারে এডিবির মিশন প্রধান পুটু কামায়ানা এই সম্মেলনে অংশ নেন।

সম্মেলনের স্বাগত বক্তব্যে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন ‘সমতা ও অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে’ জোটভুক্ত দেশগুলোর অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা তরান্বিত করার জন্য যৌথ প্রচেষ্টা আরো সংহত করার ওপর জোর দেন।

এবারের শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ছিল - সংহতি ও সমৃদ্ধির জন্য অংশীদারিত্ব। 

এ বিষয়টি উল্লেখ করে থেইন সেইন বলেন, “জলবায়ুর পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুযোগ, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তাসহ নতুন নতুন হুমকি মোকাবিলায় আমাদেরকে নিজেদের শক্তি ও সম্পদ নিয়ে বিমসটেকের ব্যানারে একত্রিত হতে হবে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ সমস্যাগুলোর কথা তুলে ধরতে হবে।”

স্বাগত বক্তব্যের পর শীর্ষ নেতারা সাতটি ‘ক্রিস্টাল বলে’ স্পর্শ করলে তাতে ভেসে ওঠে সাত দেশের পতাকা।এ সময় জোটভুক্ত দেশগুলোর পরিচিতি ও জোটের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে একটি ভিডিও প্রদর্শন করা হয়।

এরপর সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ফটোসেশনের মধ্য দিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে শুরু হয় মূল সম্মেলন।

ঢাকায় বিমসটেকের স্থায়ী সচিবালয় প্রতিষ্ঠা এবং ভারতে আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক বিমসটেক সেন্টার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে দুটি মেমোরেণ্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন এবং ভুটানে বিমসটেক কালচারাল ইন্ডাস্ট্রিজ কমিশন ও বিমসটেক কালচারাল ইন্ডাস্ট্রিজ অবজারভেটরি প্রতিষ্ঠায় একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেন জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।

সম্মেলনে জোটের শীর্ষ নেতারা গত শীর্ষ সম্মেলনের পর অর্জিত অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন এবং সংস্থার যৌথ অঙ্গীকারের বিভিন্ন দিক নিয়ে মতবিনিময় ও ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে আঞ্চলিক যোগাযোগ ও সহযোগিতার মাধ্যমে বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশও ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তেলার স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যাবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, “বিমসটেকের লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশের অঙ্গীকারের কথা আমি পুনর্ব্যক্ত করছি। আমাদের সবাইকে আমাদের সাধারণ লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়ার সম্ভাবনা এই জোটের আছে। বিশেষ করে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার জন্য বাংলাদেশের ‘ভিশন ২০২১’ বাস্তবায়নে এই জোট ভূমিকা রাখতে পারে বলে আমি মনে করি।” 

বিমসটেকের স্থায়ী সচিবালয়ের জন্য বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাকে বেছে নেয়ায় জোটভুক্ত দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানান তিনি।  

 

শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য ও কফি পানের বিরতির পর নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালার হাতে জোটের চেয়ারপারসনের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন মিয়ারমারের প্রেডিডেন্ট থেইন সেইন।

এরপর থেইন সেইনের সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয় তৃতীয় বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন।   

এ সম্মেলনে যোগ দেয়ার পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর সরকার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেও অংশ নেয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

স্থানীয় সময় বেলা ১টায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, বিকাল সাড়ে ৪টায় শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মহিন্দা রাজাপাকসে এবং ৫টায় নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালার সঙ্গে বসবেন তিনি।

বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্যদের মধ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক,প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব আবুল কালাম আজাদ এবং  প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

১৯৯৭ সালে গঠিত বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেকটরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকনোমিক কো-অপারেশনের প্রথম শীর্ষ সম্মেলন ২০০৪ সালে ব্যাংককে এবং ২০০৮ সালে নয়া দিল্লিতে দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, নেপাল ও ভুটানের এই জোটের এ অঞ্চলে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, জ্বালানি, পরিবহন ও যোগাযোগ, পর্যটন, কৃষি, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, আন্তঃযোগাযোগ, সন্ত্রাস ও আন্তঃদেশীয় অপরাধ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কাজ করার কথা।

সফর শেষে রাতে রাত ৮টায় মিয়ানমার ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।