জামায়াতে ইসলামীর এই নেতার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের চতুর্থ সাক্ষী সুনীল কান্তি বর্ধন ওরফে দুলাল সোমবার সাক্ষ্য দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ।
চট্টগ্রামের ডালিম হোটেলে টুনটু সেন ও রনজিত দাশসহ আরো কয়েকজন বন্দিকে হত্যার নির্দেশ দিতে মীর কাসেমকে দেখেছেন বলে জানান ৭২ বছর বয়সী দুলাল।
বর্তমানে চট্টগ্রাম শহরের হাজারী লেনের বাসিন্দা দুলালের বাড়ি পটিয়া উপজেলার পেড়প্যারা গ্রামে।
এই সাক্ষী নিজেও একাত্তরে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে আল বদরের একটি ক্যাম্পে বন্দি ছিলেন। সেই অবস্থায় চাকতাই খালের পাড়ে নিয়ে অনেককে হত্যার ঘটনা দেখেন বলে জানান তিনি।
১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে সপরিবারে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে চাকতাই পাড় হওয়ার জন্য নৌকায় উঠছিলেন দুলাল। সেখান থেকেই সশস্ত্র আল বদর সদস্যরা তাকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়।
“১৩ ডিসেম্বর লক্ষ্য করলাম দোস্ত মোহাম্মদ বিল্ডিংয়ের বাল্ব খুলে ফেলা হচ্ছে। সেদিন কামরুল নামের এক আল বদর আমাকে বলে, তোকে তো বাঁচাতে পারলাম না, আজকে অথবা আগামীকাল তোদেরকে ডালিম হোটেলে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে মীর কাসেম আলী আছে, সে তোদের বাঁচতে দিবে না।”
সাক্ষী জানান, ১৪ ডিসেম্বর ভোরে বন্দিদের চোখ বেঁধে একটি ট্রাকে উঠিয়ে ডালিম হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়।
“সেখানে অন্য বন্দিদের সঙ্গে আমাকেও একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে মীর কাসেম ছিলেন। তিনি আমাদের জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমরা কে কী জান, বল’। কেউ কিছু না বলায় মীর কাসেম বলেন, ‘তোদের সবাইকে মেরে ফেলা হবে’।”
সাক্ষী দুলাল আরো জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় এপ্রিল মাসের দিকে চট্টগ্রাম শহরের আন্দরকিল্লা মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের অফিসের সামনে থেকে তার বাবা বজেন্দ্র লাল বর্ধনকে ধরে গুডস হিলে নিয়ে যায় আল শামস বাহিনীর লোকেরা। পরে ফজলুল কাদের চৌধুরীর এক অনুসারীর মাধ্যমে তাকে ছাড়িয়ে আনা হয়।
সাক্ষ্য দেয়া শেষ হলে দুলালকে জেরা করা শুরু করেন মীর কাসেমের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। পরে জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় সোমবার পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল মুলতবি করা হয়।
এর আগে গত ১১ ডিসেম্বর এ মামলায় প্রসিকিউশনের প্রথম সাক্ষী সৈয়দ মো. এমরান সাক্ষ্য দেন। গত ৫ সেপ্টেম্বর মীর কাসেমের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়।
তার বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগের মধ্যে আটজনকে নির্যাতনের পর হত্যা, লাশ গুম এবং ৩৪ জনকে অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেমকে গত বছর ১৭ জুন গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।