মীর কাসেমের ‘নির্দেশে ও উপস্থিতিতে বন্দি নির্যাতন-হত্যা’

একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামীর নেতা মীর কাসেম আলীর নির্দেশ ও কোনো কোনো সময় তার উপস্থিতিতে স্বাধীনতাকামীদের নির্যাতন ও হত্যা করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Feb 2014, 06:16 PM
Updated : 2 Feb 2014, 06:16 PM

সোমবার  মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত মীর কাসেমের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে দেয়া সাক্ষ্যে এ তথ্য জানান প্রসিকিউশনের দ্বিতীয় সাক্ষী নাসিরুদ্দিন চৌধুরী।

বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ রোববার সাক্ষ্য দেন তিনি।

সাক্ষ্যে নাসিরুদ্দিন বলেন, মুজিব বাহিনী নামে পরিচিত বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সের সদস্য হিসেবে তিনি দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও বাঁশখালী এলাকায় যুদ্ধে অংশ নেন।  ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের শেষ দিকে আলবদর বাহিনীর হাতে আটক হন তিনি।

বর্তমানে ৬০ বছর বয়সী নাসিরুদ্দিন জানান, চট্টগ্রাম শহরে থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাসিরের আন্দরকিল্লার নজির আহমেদ চৌধুরী রোডের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। কোনোভাবে এ গোপন আশ্রয়ের কথা ফাঁস হয়ে গেলে একদিন গভীর রাতে সেই বাড়ি ঘেরাও করে তাকে আটক করে আলবদর বাহিনী।

আটকের পরে চোখ বেঁধে মারধর করতে করতে তাকে ডালিম হোটেলে নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি কক্ষে নির্যাতন ও জিজ্ঞাসাবাদ করার পরও কোনো তথ্য বের করতে না পেরে আলবদর সদস্যরা কক্ষ থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় চোখের বাঁধন খুলে দিয়ে যায়।

“কিছুক্ষণ পরে সেখানে মীর কাসেম আলী আরো কয়েকজনকে নিয়ে হাজির হয় এবং তথ্য বের করার জন্য আরো নির্যাতন নির্দেশ দেন। কিছুক্ষণ পরে মীর কাশেম আলী নিজেই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন।”

“আলবদরদের পঙ্কজ বা স্বপন নামের একজন কাজের ছেলে ছিল। সে জানায়, ডালিম হোটেলের ছাদের উপর হাজারী গলির টুনটু সেন, রনজিত দাশ এবং জসিম নামের সন্দ্বীপের একজন মুক্তিযোদ্ধাকে অত্যাচার করে হত্যা করা হয় এবং তাদের লাশ কর্ণফুলি নদীতে ফেলে দেয়া হয়। ওইসময় সেখানে মীর কাসেম আলী উপস্থিত ছিলেন এবং তার নির্দেশেই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় বলে ছেলেটি জানায়।”

সাক্ষ্যে তিনি আরো জানান, ডালিম হোটেল ছাড়াও আলবদরের আরো দুটি টর্চার ক্যাম্প ছিলো। একটি ছিলো দেওয়ানহাট এলাকার দেওয়ান হোটেলে (এখন নেই), আরেকটি চাকতাই এলাকায় চামড়ার গুদামে।

পরে এ সাক্ষীকে জেরা করেন মীর কাসেম আলীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় সোমবার পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল মুলতবি ঘোষণা করা হয়।

এর আগে গত ১১ ডিসেম্বর এ মামলায় প্রসিকিউশনের প্রথম সাক্ষী সৈয়দ মো. এমরান সাক্ষ্য দেন। গত ৫ সেপ্টেম্বর মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়।

তার বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগের মধ্যে আটজনকে নির্যাতনের পর হত্যা, লাশ গুম এবং ৩৪ জনকে অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে।

জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেমকে গত বছর ১৭ জুন গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।