বিরোধী দলের বর্জনের মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচনে ভোটের হার ৪০ শতাংশ পেরুনোতেই সন্তুষ্টি খুঁজছে নির্বাচন কমিশন।
Published : 05 Jan 2014, 09:59 PM
রোববার দিনব্যাপী ভোটগ্রহণ শেষে গণনা চলার মধ্যে রাত ৯টার দিকে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ সাংবাদিকদের বলেন, “৪০ শতাংশ ভোট পড়লেই আমরা খুশি। গ্রেট ব্রিটেনেও এমন ভোট পড়ে। এটাকে সেখানে স্টান্ডার্ড বলা হয়।”
ভোটের হার নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য তখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে।
নবম সংসদ নির্বাচনে ৮৭ শতাংশ ভোটগ্রহণ হয়েছিল। এবার নির্বাচন বর্জনকারী ১৮ দলের ভোট প্রতিহত করার ঘোষণা ছিল।
সংঘাতে ২১ জনের প্রাণহানির মধ্যে ৫৯ জেলার ১৪৭ আসনে ভোটগ্রহণ চলে। বাকি ১৫৩ আসনের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এই নির্বাচনে ভোটের হার নিয়ে শুরু থেকেই শঙ্কা ছিল নির্বাচন কমিশনারদের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে। ভোট শেষে বিরোধী দল দাবি করেছে, জনগণ ভোট প্রত্যাখ্যান করেছে।
নির্বাচন কমিশনার হাফিজ বলেন, “চট্টগ্রাম ও উত্তরবঙ্গে অনেক জায়গায় ভালো ভোট পড়েছে। চট্টগ্রামে ভালো ভোট হয়েছে, কোথাও ৫০ শতাংশ, আবার কোথাও ৭০ শতাংশ।
“তবে উত্তরাঞ্চলে বেশ ভায়োলেন্স হয়েছে। যেখানে হামলা-থ্রেট ছিল, সেখানে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল।”
ভোটের হার জানতে চাইলে সে জন্য অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “ফাইনাল ফল না আসা পর্যন্ত ভোটার উপস্থিতি নিয়ে তেমন কোনো ধারণা না দেয়াই ভালো।”
বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন করার পর ‘অতৃপ্তির’ কথাও তুলে ধরেন আবু হাফিজ।
“সব দলকে ভোটে পেলে খুশি হতাম। খুবই খুশি হতাম যদি সব দলই আসত। এজন্যে তফসিল ঘোষণার পর আমরা অপেক্ষাও করেছিলাম। সমঝোতা হলে রি-শিডউল করা যেত।”
“কিন্তু হয়নি, দুর্ভাগ্য আমাদের। এজন্য কারো দোষ দেই না।”
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪০ দলের মধ্যে এই নির্বাচনে ১২টি দল অংশ নেয়।
নির্বাচন শেষ হলেও রাজনৈতিক সমঝোতার আশা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনার বলেন, “প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সমস্যা কোথায়, আমরা জানি না। নিশ্চয় কোথাও সমস্যা আছে। সঠিক সময়ে সমঝোতা হবে আশা করি।”
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এই নির্বাচনকে প্রহসন আখ্যায়িত করে তা বাতিলের দাবি জানালেও হাফিজ বলেন, “এ নির্বাচনকে মানতেই হবে। এটাই বাস্তবতা। আমাদের সামনে সংবিধান রয়েছে। তা আমাদের অনুসরণ করতেই হবে।”
এই প্রসঙ্গে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিরোধী দলবিহীন নির্বাচনে ২৬ শতাংশ ভোট পড়ার কথাও বলেন এই নির্বাচন কমিশনার।
“ওই নির্বাচনে ২৬ শতাংশ ভোটের পরও যে সংসদ হয়, তা সবাইকে মেনে নিতে হয়েছে। নির্বাচনকে অস্বীকার করতে পারেনি কেউ।”
ভোট নিয়ে নিজের অনুভূতির কথা তুলে ধরতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হাফিজ বলেন, “এ দেশটার জন্য যুদ্ধ করেছি, দেশকে রক্ষা করেছি। এ দেশকে ধ্বংস করতে দেখতে কষ্ট লাগে। আমি বুঝি দেশ, মানুষ, মাটি। রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুঝি না।
“এ দেশকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। তখন ব্যথা লাগে। এর চেয়ে বেশি কিছু কী ফিল করব।”
“নির্বাচন হবে, সুন্দরভাবে হবে। কেনো পুড়তে হবে মানুষকে। এটা বোধগম্য নয়।”
ইসি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়ই এই নির্বাচন কমিশনারের কাছে একটি ফোন আসে। এপাশ থেকে ইসির কঠোর অবস্থানের কথা বলতে শোনা যায় তাকে।
তিনি বলছিলেন, “ভোটে কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। রেজাল্টকে এক থেকে দুই করা যাবে না- এটাই আমাদের নির্দেশ। কেউ প্রভাব খাটাতে চাইলে এরেস্ট করে পুলিশে দিতে হবে। বল প্রয়োগ করলে হাজতে ঢুকতে হবে। এ আমাদের নির্দেশ।”
এ নির্বাচনের শতাধিক ভোটকেন্দ্রে ভোট স্থগিত হয়। এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তার লিখিত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে বলেন তিনি।
“কটি কেন্দ্রে ভোট বন্ধ, তা জানাতে একটু সময় লাগবে। ফোনে এতক্ষণ তথ্য সরবরাহ হয়েছিল। কোথাও কোথাও আবার কিন্তু ভোট হয়েছে। শেষ পর্য ন্ত সঠিক সংখ্যাটাই গণমাধ্যমে সরবরাহ করতে হবে। এজন্য আমরাও অপেক্ষা করছি।”
সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ তার কার্যালয়ে রয়েছেন। নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক, ইসি সচিব মোহাম্মদ সাদিকও রয়েছেন কার্যালয়ে।