তিস্তা চুক্তির সম্ভাবনা দেখছেন না খলীকুজ্জমান

ভারতের সঙ্গে বহুল আলোচিত তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2022, 11:26 AM
Updated : 4 June 2022, 11:26 AM

শনিবার নদী ব্যবস্থাপনা ও পানির ওপর অধিকার নিয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “তিস্তার কথা আমরা সবাই জানি। সব ঠিক হয়ে গেল। চুক্তিপত্র লেখা হল। এরপর মমতা ব্যনার্জি বললেন, তিনি মানেন না। এটা কী এত সহজ? এত সোজা?”

খলীকুজ্জমান বলেন, “তিস্তা চুক্তি হয়নি। হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে আমার মনে হয় না। আমরা যেটা করতে পারি, যা আছে সেটা নিয়ে পরিকল্পনা করতে পারি। পরিকল্পনায় আমাদের সংকট নেই।

“পরিকল্পনা, নীতি এসব নিয়ে সমস্যা নেই। আমাদের নীতিগুলো দূরদর্শী। আমরা আন্দোলন করছি। আন্দোলন ঠিক জায়গায় পৌঁছাচ্ছে না। যার ওপর অভিঘাত পড়বে তাদের সম্পৃক্ত করতে না পারলে হবে না।”

ওয়ার্কার্স পার্টির এ আলোচনা সভায় সরকারের পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান খলীকুজ্জমান বলেন, “আমার তো মনে হয়, আগে থেকে এটা ঠিক করা ছিল। অঙ্গরাজ্য করবে না, কেন্দ্রীয় রাজ্য করতে চায়, চুক্তি খসড়া করে নিয়ে এসছে।

“এটা হওয়ার কথা বলে আমার মনে হয় না। আগে ঠিক করে আসা উচিত ছিল বলে আমার মনে হয়। এ ধরনের ড্রামা আগে হয়েছে।”

২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের আগে দুই দেশের পানি সম্পদ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়ে দুপক্ষ একমত হয়েছিল।

মনমোহন সিংয়ের সফরেই বহু প্রতীক্ষিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় তা আটকে যায়।

নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকার ভারতের ক্ষমতায় আসার পর তিস্তা চুক্তি নিয়ে আশার কথা শোনা গেলেও মমতার মত বদলায়নি। বাংলাদেশের তরফ থেকে এই চুক্তি নিয়ে বারবার বলা হলেও ভারত সবসময় বলছে তারা আশাবাদী।

গত বছরের মার্চ মাসেও ঢাকা সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশার বাণী শুনিয়ে যান।

তিস্তা চুক্তি নিয়ে আশ্বাসের পাশাপাশি ফেনী নদীর পানি বণ্টন নিয়ে অন্তর্বতী চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশকে ভারত অনুরোধ করেছে।

আলোচনা সভায় দর্শক সারিতে উপস্থিত ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন অববাহিকা উন্নয়ন নিয়ে খলীকুজ্জমান আহমদের কাছে জানতে চান।

সেসময় খলীকুজ্জমান বলেন, “অববাহিকা উন্নয়ন নিয়ে শেখ হাসিনা অনেক চেষ্টা করছেন। মনমোহন সিংয়ের সময়ও কাজ করেছেন। কিন্তু এগোয়নি। আমাদের সব নদী উজানে। উপরে। অববাহিকতার বড় একটা অংশ সেদিকে। তারা কোনো কাজ করছে না।

“চীন যখন ব্রহ্মপুত্র নদীতে বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করছে, তখন মাত্র তারা আমাদের কাছে এসেছিল। কারণ তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানের বাস্তব সমস্যাভিত্তিক পরিকল্পনা করতে হবে বলে জানান তিনি।

খলীকুজ্জমান বলেন, “দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার চেয়ে আমার মনে হয়, আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, বর্তমানের সমস্যাকে প্রাধান্য দিতে হবে। পাঁচ বছরের পরিকল্পনা আমরা করি। কিন্তু কাজ করি বার্ষিক পরিকল্পনা করে। এজন্য বর্তমানের সমস্যাকে গুরুত্ব দিতে হবে।”

বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “মূল্যস্ফীতি যেভাবে বাড়ছে যদিও তা অন্য অনেক দেশের চেয়ে কম। তবে এটা সামনে বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দেবে।

“মূল্যস্ফীতির কারণে কৃষক-শ্রমিকদের প্রকৃত আয় কমে যাবে। এখানে সামাজিক বেষ্টনী কর্মসূচি বাড়াতে হবে। শুনলাম সেটি বাড়ানো হবে না। কিন্তু যারা দেশের সমমালিক তাদের অর্থনীতির বিধ্বস্ত হয়ে গেলে সমস্যা। এজন্য ১০ টাকার চালের যে যে আওতা আছে তা বাড়াতে হবে।” 

‘গঙ্গা, তিস্তা, যমুনা, মেঘনা নদীর ব্যবস্থাপনা ও পানির উপর কৃষক ও আদিবাসীদের অধিকার’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য মাহমুদুল হাসান মানিক।

দলের সধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার মূল প্রবন্ধ পাঠ করার কথা থাকলেও তিনি উপস্থিতি ছিলেন না। পরে তার পক্ষে প্রবন্ধ পাঠ করা হয়। নদী বিষয়ক অলাভজনক উদ্যোগ ‘রিভাইরান পিপল’ এর মহাসচিব শেখ রোকন সভায় উপস্থিত ছিলেন।