বিতরণ কোম্পানির টাকায় গ্যাসের প্রিপেইড মিটার স্থাপনের সুপারিশ

দেশীয় গ্যাস কোম্পানিগুলোর নিজস্ব অর্থায়নে প্রিপেইড মিটার বসানোর সুপারিশ করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Sept 2021, 10:24 AM
Updated : 20 Sept 2021, 04:05 PM

সোমবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে বিদ্যুতের উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে সন্ধ্যা ৬টা থেকে চার ঘণ্টা সারাদেশে সিএনজি ফিলিং স্টেশন বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনার সময় এ সুপারিশ আসে।

সংসদীয় কমিটি মনে করছে, প্রিপেই্ড মিটার স্থাপনের জন্য বিদেশি অর্থায়নের প্রয়োজন নেই। দেশের গ্যাস বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নেই এ কাজ করা সম্ভব।

গ্যাসের অপচয় রোধে আবাসিক শ্রেণীতে ২০১১ সাল থেকে প্রি–পেইড মিটার স্থাপন কার্যক্রম শুরু হয়। আবাসিক শ্রেণীতে গ্যাসের গ্রাহক মোট ৪২ লাখ ৯৯ হাজার ৮৫৯।

গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদেশি অর্থ নিয়ে কয়েকটি প্রকল্পের আওতায় পেট্রোবাংলার আওতাধীন ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানির দুই লাখ ৭৩ হাজার ১০০ আবাসিক শ্রেণির গ্রাহকের প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের জন্য সিএনজি স্টেশনগুলোতে রেশনিং করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে এটা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে গ্যাস সরবরাহ ঠিক রাখতে হলে অপচয় রোধ করতে হবে।

“এজন্য প্রিপেইড মিটার জরুরি। আমাদের গ্যাস কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা রয়েছে। তাদের যে আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে তাতে নিজস্ব অর্থায়নেই প্রিপেইড মিটার বসাতে পারবে। এর জন্য কোনো উন্নয়ন সহযোগীর সহায়তার দরকার নেই। এটা করতে পারলে গ্যাসের সাশ্রয় হবে।”

বিদ্যুতের উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে সন্ধ্যা ৬টা থেকে চার ঘণ্টা সারাদেশে সিএনজি ফিলিং স্টেশন বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর শুরু হয় রোববার।

গ্যাস বিতরণ নেটওয়ার্কে সম্ভাব্য স্বল্প-চাপ পরিস্থিতি নিরসনে বিদ্যুতের দৈনিক চাহিদার পিক আওয়ারে স্টেশনগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হবে।

শুরুতে বিকাল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সিএনজি স্টেশনগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দেওয়া হলেও সিএনজি ফিলিং স্টেশন মালিকদের আপত্তির কারণে তা দুই ঘণ্টা কমিয়ে আনা হয়।

তেলের পরিবর্তে পানি, দুদক থেকে প্রতিবেদন আনার তাগিদ

গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর কৈলাশটিলা এমএসটিই প্ল্যান থেকে রশিদপুর কনডেনসেট ফ্রাকশনেশন প্লান্টে কনডেনসেটের পরিবর্তে পানি সরবরাহ সংক্রান্ত অনিয়ম নিয়ে আলোচনা হয় হয় কমিটিতে।

ওই ঘটনা বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তদন্তাধীন।

কমিটির কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, ওইদিন কনডেনসেট খালাসের সময় সাড়ে ৪ হাজার লিটার কনডেনসেটের পরিবর্তে প্রায় তিন হাজার ৬০০ লিটার পানি পাওয়া যায়। ওই ঘটনার পর তদন্ত শেষে কনডেনসেট বহনকারী লরির চালককে কালো তালিকাভূক্ত করা হয়। লরি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।

গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়।

রোববারের বৈঠকের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে কমিটিকে মন্ত্রণালয় জানায়, বিষয়টি বর্তমানে দুদকের তদন্তাধীন রয়েছে।

ওয়াসিকা আয়শা বলেন, “মন্ত্রণালয়কে আমরা বলেছি, দুদকের কাছ থেকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন এনে বিষয়টির সুরাহা করতে। আর যে প্রতিষ্ঠান এই ঘটনায় জড়িত তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণও আদায় করা হয়েছে। আমরা বলেছি দুদকের প্রতিবেদন সংগ্রহ করে সংসদীয় কমিটিকে জানাতে হবে।”

গত বছর ৩ ডিসেম্বর প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজে ধীর গতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। তখন এই কমিটির সভাপতি ছিলেন শহীদুজ্জামান সরকার।

সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের আওতাধীন চলমান প্রকল্পগুলোর বাস্তব অগ্রগতি ও আর্থিক অগ্রগতি বিষয়ক প্রতিবেদন পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করার সুপারিশ করা হয়।

এছাড়া বাপেক্সের সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য করণীয় বিষয়ে প্রতিবেদন পরবর্তী সভায় উপস্থাপন, পেট্রোবাংলার অধীন ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানির গ্যাসের বকেয়া আদায়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং যত দ্রুত সম্ভব গ্যাস ব্যবহারকারী প্রতিটি গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার সুপারিশ করে কমিটি।

ওয়াসিকা আয়শা খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, মো. আলী আজগার, মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার, মো. আছলাম হোসেন সওদাগর, খালেদা খানম এবং নার্গিস রহমান বৈঠকে অংশ নেন।