রওশন যে কাজী আরেফ হত্যার আসামি, জানত না সন্তানরা

সহযোগীদের কয়েকজন ঝুলেছেন ফাঁসিতে, কেউবা খাটছেন সাজা। কিন্তু হত্যা মামলায় মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে তিনি দিব্যি আত্মগোপনে ছিলেন বছরের পর বছর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2021, 08:49 AM
Updated : 19 August 2021, 08:55 AM

নাম-পরিচয় আর ঠিকানা পাল্টে সংসারও পেতেছিলেন, করেছেন ব্যবসা-বাণিজ্যও। কিন্তু কলেজপড়ুয়া দুই ছেলে-মেয়ে জানতই না যে, তাদের বাবার মাথার ওপর ফাঁসির দণ্ড ঝুলছে।

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নেতা কাজী আরেফ হত্যা মামলায় ফাঁসির আসামি রওশন ওরফে 'আলী' ওরফে ‘উদয় মণ্ডলকে’ গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য।

র‌্যাব-৫ এর একটি দল বুধবার রাতে রাজশাহী মহানগরের শাহ মখদুম থানার ভারালীপাড়া থেকে রওশনকে গ্রেপ্তার করে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নাম পাল্টে ‘আলী’ নামে রাজশাহীতে বসবাস করছিলেন।

তিনি বলেন, “আসল বাড়ি মেহেরপুরে গাংনীতে হলেও রওশন রাজশাহীতে সবাইকে বলত তার গ্রামের বাড়ি গাজীপুর। এছাড়া নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম দিয়েছে উদয় মণ্ডল।

“নাম-পরিচয় পরিবর্তন করায় রওশনকে শনাক্ত করতে সমস্যা হয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর। তাই এতদিন আত্মগোপনে থাকতে সম্ভব হয়েছে।”

তিনি বলেন, “রাজশাহীতে গরুর খামার ছাড়াও জায়গা জমি বেচাকেনার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন রওশন। কলেজ পড়ুয়া এক ছেলে ও এক মেয়ে থাকলেও সন্তানরাও তার প্রকৃত নাম আর খুনের কথা জানত না ।তবে রওশনের স্ত্রী সব ঘটনা জানত।”

১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের কালিদাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে একটি সভা চলার সময় ব্রাশফায়ারে জাসদের পাঁচ নেতা নিহত হন।

এতে কাজী আরেফ আহমেদ ছাড়াও নিহত হন তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সভাপতি লোকমান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী, স্থানীয় জাসদ নেতা ইসরায়েল হোসেন ও শমসের মণ্ডল।

ওই ঘটনায় দায়ের হওয়ার মামলায় ২০০৪ সালে ১০ জনের ফাঁসি ও ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় কুষ্টিয়ার আদালত।

রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে ২০০৮ সালে হাই কোর্ট নয়জনের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন, একজনকে খালাস দেন ও ১২ জনের সাজা মওকুফ করেন।

২০১৬ সালে ৮ জানুয়ারি তিন খুনির ফাঁসি কার্যকর হয়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নয়জনের মধ্যে রওশনসহ পাঁচজন পলাতক ছিলেন। একজন কারাগারে থাকা অবস্থায় মারা যান।

র‌্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রওশন জানিয়েছে, কাজী আরেফ ছাড়াও আরও কয়েকটি হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল সে।”

তিনি জানান, রওশন ১৯৯২ সাল থেকে সীমান্তে চোরাচালান, হাট ইজারাসহ বিভিন্ন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের কাজে জড়িয়ে পড়েন হয় এবং এলাকায় সন্ত্রাসী চক্র গড়ে তোলেন। সে সময়ই তার সঙ্গে চরমপন্থী দলের সখ্যতা তৈরি হয়।