মগবাজার বিস্ফোরণ: ৫ হাসপাতালে অন্তত ৪০০ জনের চিকিৎসা

রাজধানীর মগবাজারে বিস্ফোরণ ও ভবন ধসে আহত অন্তত ৪০০ জন ৫ টি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে অনেককেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হলেও গুরুতর আহতদের হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2021, 07:50 PM
Updated : 27 June 2021, 07:50 PM

রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওয়্যারলেস গেইট এলাকায় বিস্ফোরণের বিকট শব্দের পর তিনতলা একটি ভবন ধসে পড়ে। এসময় আশপাশের ডজনখানেক ভবনের কাচ চৌচির হয়ে ভেঙে পড়ে। সড়কে থাকা দুটি বাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এ ঘটনায় আহতদের দ্রুততার সঙ্গে কাছাকাছি ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতাল, আদ-দ্বীন হাসপাতাল ও হলিফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। গুরুতর আহতদের পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট হাসপাতালে।

বিস্ফোরণস্থল থেকে তিন-চার মিনিটের হাঁটা দূরত্বে ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতাল। আহতদের অনেককেই এই হাসপাতাল নেওয়া হয়। তাদের সংখ্যা তিনশর কাছাকাছি বলে জানিয়েছেন আউটডোর ইনচার্জ আ জ ম রহমতউল্লাহ সবুজ।

সবুজ বলেন, কমিউনিটি হাসপাতালে আসা বেশিরভাগেরই শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটাছেঁড়া, মাথায় আঘাত ছিল। দুজন হাসপাতালে আনার পরই মারা গেছেন। চারজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, “বিস্ফোরণে বেশিরভাগেরই কাঁচের আঘাতে কেটে গেছে। অনেকে মাথায় আঘাত পেয়েছেন।

“অবস্থা খুবই বাজে ছিল। আমাদের চিকিৎসকরা খুব দ্রুত সবাইকে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এখন আর কেউ ভর্তি নেই।”

দুর্ঘটনার পর আহতদের অনেকেই বিস্ফোরণস্থল মগবাজার ওয়্যারলেস গেইটের কাছাকাছি বেসরকারি আদ-দ্বীন হাসপাতালে ছুটে যান।

আদ-দ্বীন হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাহিদ ইয়াসমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, দুর্ঘটনার পর আদ-দ্বীন হাসপাতালে ৪০ থেকে ৫০ জনের মতো রোগী হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ছুটে আসেন।

আহতদের বেশিরভাগই শরীর পোড়া অথবা মাথায় আঘাত নিয়ে এসেছিলেন। একজন হাসপাতালের আনার সঙ্গে সঙ্গেই মারা যান। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অন্যান্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, “বার্ন নিয়ে এসেছিল অনেকে, অনেক রোগীর হেড ইনজুরি ছিল। দগ্ধ রোগীদের মধ্যে যারা সিভিয়ার তাদের এখানে রাখতে পারিনি। যেটুকু প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া যায় দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সে করে পাঠিয়ে দিয়েছি।

“যাদের মাইনর ইনজুরি ছিল তাদেরকে আমাদের এখানে চিকিৎসা দিয়েছি আমাদের জরুরি বিভাগে। এখনও তিন-চারজন আমাদের এখানে ভর্তি আছেন।”

হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে ১০ জনকে। তাদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪ জন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের একজন চিকিৎসক জানান, মাথায় আঘাত নিয়েই এসেছেন বেশিরভাগ রোগী।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় সেখানে ১৭ জন রোগী এসেছে। তাদের মধ্যে দুইজনকে মৃত অবস্থায় নেওয়া হয়।

তিনি বলেন “একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। বাকিদের মধ্যে তিনজন দগ্ধ রোগী। এদের দুজনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। দুজনেরই ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাদের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক।”

বাকিদের সবাই আহত এবং তাদের শরীরে ভাঙা ও কাটাছেঁড়া জখম রয়েছে। তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে এবং পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. আলাউদ্দিন জানিয়েছেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সোয়া ১০টার দিকে জান্নাত (২৩) নামে এক নারী মারা গেছেন।

তিনি বলেন, “ঢাকা মেডিকেল কলেজে আসা রোগীদের অনেকেরই মাথায় আঘাত ছিল। অর্থোপেডিক রোগীও ছিল কয়েকজন। তাদের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

“এদের মধ্যে অনেকের শরীর পোড়া ছিল, তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বার্ন ইউনিটে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, মগবাজারের ঘটনায় ৪৪ জন ঢাকা মেডিকেলে এসেছেন।

“তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। চারজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। যারা ভর্তি আছেন তাদের অবস্থা স্থিতিশীল। বাকীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।” –বলেন ঢাকা মেডিকেলের পরিচালক।