ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে ‘সেশন ফি’ নিয়ে হাই কোর্টের রায় স্থগিত

ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর পুনরায় ভর্তি বা সেশন ফির নামে অর্থ আদায় নিষিদ্ধ করে প্রায় চার বছর আগে হাই কোর্ট যে রায় দিয়েছিল, তা স্থগিত করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Jan 2021, 01:46 PM
Updated : 3 Jan 2021, 01:56 PM

তবে প্রত্যেক জাতীয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় এবং দেশীয় কৃষ্টি-সংস্কৃতির আবহে পালন করা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামসহ প্রখ্যাত বাঙালি কবি-সাহিত্যিকদের রচনাবলীর সঙ্গে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের পরিচয় ঘটাতে যে নির্দেশনা ছিল, সেটি বহাল রাখা হয়েছে।

হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে গ্রিন ডেল ইন্টারনেশনাল স্কুলের অধ্যক্ষের আপিলের আবেদন গ্রহণ করে রোববার এ আদেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চ।

এদিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আনিসুল হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস।

আইনজীবী আনিসুল হাসান পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০১৭ সালের ২৫ মে হাই কোর্ট ১৭ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দিয়েছিল। এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরই লিভটু আপিল করেন গ্রিন ডেল ইন্টারনেশনাল স্কুলের অধ্যক্ষ।

“সেটি আজ শুনানির জন্য ছিল। আপিল বিভাগ লিভ টু আপিল গ্রহণ করেছেন এবং ১৭ নম্বর নির্দেশনাটি বাদে রায়টি স্থগিত করে দিয়েছে। ফলে হাই কোর্টের রায় মেনে চলার বাধ্যবাধকতা আর থাকছে না।”

অভিভাবকদের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ২৩ এপ্রিল হাই কোর্ট ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পুনঃভর্তি ফি বা সেশন চার্জ আদায় থেকে সংশ্লিষ্টদের বিরত রাখার নির্দেশ দিয়েছিল।

শিক্ষা সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ওই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছিল।

বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চ রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন ওই আদেশ দেয়।

তার আগে ২০১৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর একটি দৈনিকে ‘ফ্রিস্টাইলে চলছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন তুলে ধরে নীতিমালা করার নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে আরেকটি রিট আবেদন করেন দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক।

ওই আবেদনের শুনানি করে আদালত রুল দেয়। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে মাসিক বেতন, পুনঃভর্তি ফি বা সেশন চার্জ আদায়ের বিষয়ে নীতিমালা তৈরি এবং তদারক সেল গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় সেখানে।

শিক্ষা সচিব, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তদরের মহাপরিচালকসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

দুটি রুলের ওপর একসঙ্গে চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ২৫ মে রায় দেয় হাই কোর্ট।

ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর পুনরায় ভর্তি বা সেশন ফির নামে অর্থ আদায় নিষিদ্ধ করা হয় রায়ে।

পাশাপাশি এ ধরনের স্কুল পরিচালনায় ম্যানেজিং কমিটি গঠন, জাতীয় দিবস পালন, দেশীয় সংস্কৃতিসহ বাংলাকে গুরুত্ব দিতে ১৭ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়।

যেসব নির্দেশনা ছিল রায়ে

>> বেসরকারি স্কুল নিবন্ধন অধ্যাদেশ ১৯৬২ অনুসারে স্কুলগুলোতে অভিভাবকসহ শিক্ষক প্রতিনিধিদের নিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করতে হবে।

>> অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন করতে হবে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। ওই অভিভাবক প্রতিনিধির বক্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।

>> ‘পেছনের দরজা দিয়ে’ শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে না। শিক্ষক ও কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যাচাই-বাছাই করে যোগ্য ও মেধাবীদের নিয়োগ করতে হবে। তাতে মালিকপক্ষের কোনো প্রাধান্য থাকবে না।

>> এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি ফি, সেশন ফি বা অ্যাকাডেমিক ফির নামে কোনো ‘ফি’ আদায় করা যাবে না।

>> ভর্তি ফি, টিউশন ফি নির্ধারণ করবে ম্যানেজিং কমিটি। তাতে অভিভাবক প্রতিনিধিদের মতামত প্রাধান্য পাবে। ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করতে হবে।

>> ইংরেজি মাধ্যমের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অডিট রিপোর্ট ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে এবং প্রত্যেক অভিভাবককে ওই রিপোর্ট সরবরাহ করতে হবে।

>> প্রত্যেক জাতীয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় এবং দেশীয় কৃষ্টি-সংস্কৃতির আবহে পালন করতে হবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামসহ প্রখ্যাত বাঙালি কবি-সাহিত্যিকদের রচনাবলীর সঙ্গে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের পরিচয় ঘটাতে হবে।

>> জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ভাষা শহীদ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরবগাথা ও স্বাধীনতার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস শিক্ষার্থীদের জানাতে হবে।

>> প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এখন যেভাবে বাংলা পড়ানো হচ্ছে তার চেয়ে ‘আরও ভালোভাবে’ শিক্ষার্থীদের বাংলা ভাষার চর্চা করাতে হবে, যাতে তারা শুদ্ধভাবে বাংলা লিখতে, পড়তে ও বলতে পারে।

 এ রায়টি স্থগিত চেয়ে ওই বছরের ২ নভেম্বর লিভ টু আপিল করেন গুলশান-২ এর গ্রিন ডেল ইন্টারনেশনাল স্কুলের অধ্যক্ষ। সে আবেদনটি গ্রহণ করে হাই কোর্টের রায় স্থগিত করল দেশের সর্বোচ্চ আদালত।