ভিআইপিদের জন্য আলাদা হাসপাতাল হচ্ছে না: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ‘আলাদা হাসপাতাল’ নিয়ে দিনভর ফেইসবুকে আলোচনার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, সরকারের ভাবনায় এমন কিছু নেই।

ওবায়দুর মাসুম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 April 2020, 07:09 PM
Updated : 22 April 2020, 07:17 PM

কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ভিআইপিদের জন্য ঢাকার শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল প্রস্তুত হচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে বুধবার দিনভর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা চলে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাহিদ মালেক বুধবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোভিড-১৯ চিকিৎসায় কারও জন্য আলাদা হাসপাতালের চিন্তা তারা করছেন না।

“সবার চিকিৎসা সব হাসপাতালে হবে। এখানে ধনী-গরিব, সাধারণ-ভিআইপি বলে কিছু নেই।”

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা যেসব হাসপাতালে কোভিড-১৯ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি সবার চিকিৎসা সেখানেই হবে। মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে এটা আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি। আমরা কোনো মন্ত্রী, এমপি বা কোনো শিল্পপতির জন্য আলাদা হাসপাতাল প্রস্তুত করার কথা বলিনি। এরপরও বিষয়টি নিয়ে যদি কেউ কিছু বলে থাকেন তাহলে তিনি তার নিজ দায়িত্বে বলেছেন। এটা মন্ত্রণালয়ের অবস্থান নয়।”

জাহিদ মালেক বলেন, বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশিরা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে তাদের চিকিৎসা আলাদা দেওয়ার একটা প্রস্তাব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হয়েছিল।

“পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে অনুরোধ করেছিল, বিদেশি কেউ আক্রান্ত হলে কোথায় চিকিৎসা করাবে, তাদের জন্য আলাদা একটা হাসপাতালে ব্যবস্থা করা যায় কি না। তাদের একটা ডিমান্ড ছিল। এজন্য আমরা প্রাথমিকভাবে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কথা বলেছিলাম। হাসপাতালটি নতুন, পরিচ্ছন্ন আছে। এখনও সেভাবে ব্যবহার করা হয়নি। এজন্য তাদের দেখানো হয়েছে। সেখানে সব কিছু ঠিকঠাক করে অন্যান্য রোগীর পাশাপাশি বিদেশিরাও চিকিৎসা নেবেন।”

একজন কর্মকর্তা ‘ভুল তথ্য দেওয়ায়’ ভিআইপিদের জন্য আলাদা হাসপাতাল নিয়ে এই আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে কর্মকর্তা ভিআইপিদের জন্য আলাদা হাসপাতাল হচ্ছে বলেছেন তিনি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের নয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের। তিনি বিষয়টি জানেন না, এ বিষয়ে বলার জন্য অথোরাইজড তিনি নন।

“ডিপ্লোম্যাটরা ফরেন মিনিস্ট্রির কাছে জানতে চেয়েছিল, তারা যদি অসুস্থ্ হয়ে পড়েন তাহলে কোথায় যাবেন। আমরা চাচ্ছিলাম যে, কূটনীতিকরা যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে ঢাকা শহরের নানা হাসপাতালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে না রেখে একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিক। এ কারণেই গ্যাস্ট্রোলিভারের কথা বলা হয়েছিল।”

হাবিবুর রহমান জানান, কূটনীতিকরা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন কি না সে বিষয়েও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চেয়েছিলেন।

“আমরা বলেছি, তারা সেখানে চিকিৎসা করাতে চাইতেই পারেন। করপোরেট হাসপাতাল তারা টাকা নেবে চিকিৎসা দেবে। সেখানে যদি তারা কোভিড-১৯ রোগী না নেয় তাহলে হয়ত একটা আলাদা ইউনিট খোলার জন্য আমরা তাদের বলতে পারি।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ভিআইপিদের চিকিৎসার জন্য আলাদা হাসপাতাল প্রস্তুত করার ওিই খবর প্রকাশের পর ক্ষোভ জানিয়ে অনেকেই ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছেন।

একটি দৈনিক পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক গাজী নাসিরউদ্দিন খোকন বিষয়টি নিয়ে এক পোস্টে লেখেন, “সকলের সুরক্ষা আমাদের কাম্য। কিন্তু ভিআইপিদের জন্য আলাদা হসপিটাল করলে আপনারা স্রেফ গণশত্রুতে পরিণত হবেন। ইতরামির কিন্তু সীমা আছে।”

খাইরুল বাবুই নামে একজন লেখেন, “ভিআইপিদের জন্য আলাদা হাসপাতাল হচ্ছে... শুনে অনেকেই নাখোশ। কিন্তু আমি এর পক্ষে। কারণ হাই কোর্ট অনেক আগেই বলেছেন, রাষ্ট্রপতি আর প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কেউ ভিআইপি নয়, বাকি সবাই রাষ্ট্রের কর্মচারী। তাই আমজনতা শান্ত হোন। আর কাঁঠালজনতা, মানে যারা নিজেকে ভিআইপি ভাবছেন, নিয়মিত হাত ধোন, মাস্ক পরুন। আর অদৃশ্য মুখোশটা খুলে ফেলে দিন, চিরতরে!”

জাহানারা পারভীন নামে একজন লেখেন, “সামান্য সর্দি-জ্বরেও আমাদের ভিআইপিরা সিঙ্গাপুর-থাইল্যান্ড যান। করোনায় দেশের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। করোনা কিন্তু ভিআইপি, দরিদ্র চেনে না। এটা সাম্যবাদী রোগ।”

তার মতে, এ অবস্থায় ভিআইপিদের জন্য হাসপাতাল না বানিয়ে বয়স্কদের চিকিৎসায় প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

সানাউল সানি নামে একজন ব্যঙ্গ করে লেখেন, “ভিআইপিদের জন্য খোলামেলা জায়গা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কবর চাই।”

রিবেল মনোয়ারের মতে, দেশে অনেক জায়গায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য বাড়তি সুবিধা থাকে। এ কারণে চিকিৎসার বেলায়ও তা হতে পারে।

“ভিআইপিদের জন্য তো সব কিছুতেই আলাদা ব্যবস্থা আছে বাংলাদেশে। বিমানবন্দরের টার্মিনাল আলাদা, রাস্তায় চলাফেরার সময় প্রটেকশন আলাদা- সে হিসাবে হাসপাতাল আলাদা বিচিত্র কিছু না। তবে সংবিধান কী বলে?”