দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যা মঙ্গলবার ঢাকায় কমিশনের এক নম্বর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এ মামলা দায়ের করেন বলে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য জানান।
দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে দায়ের করা এ মামলার এজাহারে বলা হয়, অবৈধ সম্পদ অর্জনের ‘দায় থেকে বাঁচার জন্য’ ডিআইজি মিজানুর অসৎ উদ্দেশ্যে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে খন্দকার এনামুল বাছিরকে ‘প্রভাবিত করেন’ বলে অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়েছে।
এক নারীকে জোর করে বিয়ের পর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠায় গত বছরের জানুয়ারিতে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় মিজানকে।
এর চার মাস পর তার সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুদক; এক হাত ঘুরে সেই অনুসন্ধানের দায়িত্ব পান কমিশনের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির।
সেই অনুসন্ধান চলার মধ্যেই ডিআইজি মিজান গত ৮ জুন দাবি করেন, তার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন দুদক কর্মকর্তা বাছির।
এর সপক্ষে তাদের কথপোকথনের কয়েকটি অডিও ক্লিপ একটি টেলিভিশনকে দেন তিনি। ওই অডিও প্রচার হওয়ার পর দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা।
অভিযোগটি অস্বীকার করে বাছির দাবি করেন, তার কণ্ঠ নকল করে ডিআইজি মিজান কিছু 'বানোয়াট' রেকর্ড একটি টেলিভিশনকে সরবরাহ করেছেন।
অন্যদিকে ডিআইজি মিজান বলেন, সব জেনেশুনেই তিনি কাজটি করেছেন ‘বাধ্য হয়ে’।
ঘুষের অভিযোগ ওঠার পর তাদের দুজনকেই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পাশাপাশি দেশত্যাগে জারি করা হয় নিষেধাজ্ঞা।
অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ফানাফিল্যাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করে দুদক।
ফানাফিল্যার দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, “খন্দকার এনামুল বাছির সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে কমিশনের দায়িত্ব হতে অর্পিত দায়িত্ব পালনকালে অসৎ উদ্দেশ্যে নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় ক্ষমতা অপব্যবহারের মাধ্যমে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ডিআইজি মিজানুর রহমানকে অবৈধ সুযোগ প্রদানের হীন উদ্দেশ্যে ডিআইজি মিজানুর রহমার থেকে তার অবৈধ পন্থায় অর্জিত অপরাধলব্ধ ৪০ লাখ টাকা উৎকোচ/ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করে উক্ত টাকার অবস্থান গোপন করেন।”
আর ডিআইজি মিজান সম্পর্কে মামলায় বলা হয়, “তিনি সরকারি কর্মকর্তা হয়ে নিজের বিরুদ্ধে আনীত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার আশায়, অর্থাৎ অনুসন্ধানের ফলাফল নিজের পক্ষে নেওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে খন্দকার এনামুল বাছিরকে অবৈধভাবে প্রভাবিত করার জন্য অবৈধ পন্থায় অর্জিত অপরাধলব্ধ আয় থেকে ৪০ লাখ টাকা উৎকোচ/ঘুষ প্রদান করেন।”
কোথায় কীভাবে ওই ঘুষ লেনদেন হয়েছিল, তার একটি বর্ণনাও মামলার এজাহারে দেওয়া হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, ডিআইজি মিজান গত ১৫ জানুয়ারি একটি বাজারের ব্যাগে কিছু বই ও ২৫ লাখ টাকা নিয়ে রমনা পার্কে যান এবং সেখানে এনামুল বাছিরের সঙ্গে তার আলোচনা হয়।
এরপর তারা রমনা পার্ক থেকে বেরিয়ে শাজাহানপুর এলাকায় যান, সেখানে বাছিরের কাছে ২৫ লাখ টাকার ব্যাগ হস্তান্তর করেন মিজান। ব্যাগ নিয়ে বাছির তার বাসায় চলে যান।
দশ দিন পর একইভাবে মিজান একটি শপিং ব্যাগে করে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে রমনা পার্কে যান। সেখানে বাছিরের সঙ্গে আলোচনা শেষ করে তারা দুজনে যান শান্তিনগর এলাকায়। সেখানে মিজানের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকার ব্যাগ নিয়ে বাছির বাসায় চলে যান।
এজাহারে বলা হয়, “অনুসন্ধানকালে বিশেষজ্ঞ মতামত, প্রত্যক্ষ সাক্ষীদের বক্তব্য, অডিও রেকর্ডে উভয়ের কথোপকথন ও পারিপার্শ্বিক বিষয়াদি পর্যালোচনা করে প্রমাণিত হয় যে, নিজে অভিযোগের দায় থেকে বাঁচার জন্য ডিআইজি মিজানুর অসৎ উদ্দেশ্যে উৎকোচ/ঘুষ প্রদান করে খন্দকার এনামুল বাছিরকে প্রভাবিত করেন।”