দক্ষিণাঞ্চলে হবে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র: প্রধানমন্ত্রী

দেশের দক্ষিণাঞ্চলে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Oct 2018, 03:03 PM
Updated : 8 Oct 2018, 03:03 PM

সোমবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।

পাবনার রূপপুরে রাশিয়ার সহায়তায় দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে।

সরকার আশা করছে, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে রূপপুরের ৫০ বছর আয়ুর ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ যোগ হবে জাতীয় গ্রিডে। পরের বছর চালু হবে সমান ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট।

গণভবনের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছি রূপপুরে। পরবর্তী যেটা করব সেটা আমার পরিকল্পনা এভাবে আছে যে, বরিশাল অঞ্চলে কয়েকটি দ্বীপ আমরা সার্ভে করেছি। সেখানে একটি দ্বীপ আমরা বেছে নেব, যেখানে নতুন আরেকটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র আমরা করব।”

বরিশালসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চল এখন আর অবহেলিত জনপদ নয় বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “দেশের দক্ষিণাঞ্চল ছিল সবচেয়ে অবহেলিত। না রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, না কোনো কিছু। বরিশালকে একসময় বলা হত বাংলার ভেনিস, সে গৌরবও হারিয়ে গিয়েছিল। সম্পূর্ণ অবহেলিত অঞ্চলে পরিণত হয়েছিল গোটা দক্ষিণাঞ্চল।

“আমরা সরকার গঠনের পর যেসব এলাকা অবহেলিত ছিল সেসব এলাকার উন্নয়নের জন্য ব্যপকভাবে কাজ শুরু করি।”

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের সময়ে দক্ষিণাঞ্চল বিশেষ করে বরিশাল বিভাগের সড়ক, সেতুসহ বিভিন্ন অবকাঠামো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল নির্মাণসহ নানা উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরেন।

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা পরিকল্পনা করেছি পদ্মা সেতু থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেল সেতুর ব্যবস্থা করব।”

এছাড়া শিল্পায়নের জন্য ভোলা থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে বরিশালে গ্যাস নেওয়ার সম্ভাব্যতা যাচাইও শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।

হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকাটা ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।  

সরকারপ্রধান বলেন, “এমন এমনও জায়গা আছে, যেখানে অপারেশন থিয়েটার পড়ে আছে কিন্তু অপারেশন করবার মত ডাক্তারও নেই, সার্জন নেই, নার্স নেই; এরকম একটা অবস্থা। আমরা শুধু প্রতিষ্ঠান করে যাব, আর সেগুলো অবহেলিত থেকে যাবে এটা কিন্তু হতে পারে না।

“আমরা ডাক্তার-নার্স সবই নিয়োগ দিচ্ছি, তারপরও দুঃখজনক যে, আমাদের উপজেলায় ডাক্তার থাকে না। কোথাও একজন থাকে, যেখানে দশজন থাকার কথা।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশের মানুষের চাহিদামত সরকারি-সেরকারি মেডিকেল কলেজ, ইনস্টিটিউট সবই করে দেওয়া হচ্ছে। কাজেই মানুষের সেবা দেওয়াটা প্রত্যেকের দায়িত্ব। আমি আশা করি এই সেবাটা মানুষ পাবে।”

সব বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।

এছাড়া বরিশাল মেডিকেলকে ৫০০ শয্যা থেকে ১০০০ শয্যায় উন্নীত করা এবং শিক্ষকদের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ ও ছাত্রীদের হল করে দেওয়ারও আশ্বাস দেন।

দয়াগঞ্জ ও ধলপুরে পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিবাস উদ্বোধন

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকার দয়াগঞ্জ ও ধলপুরে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য নির্মিত আবাসনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

এসময় তিনি বলেন, “মানুষকে আমরা মানুষ হিসেবে দেখি। হরিজন বা অন্য কি সেটা আমরা দেখিনা। আমার বাবা সেটাই শিখিয়েছেন।”

স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি যখন ছিয়ানব্বই সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হলাম, আমার বোন রেহানার মেয়ে আমাকে বলল, এই যে হরিজন সম্প্রদায় তারা খুব অবহেলিত, তাদের থাকার জায়গা নেই। তাদের কয়েকজনকে গণভবনে নিয়ে আসলো।

“তখনই আমরা প্রজেক্ট নিয়েছিলাম হরিজন সম্প্রদায়ের জন্য। কিন্তু আমাদের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর এমনভাবে টাকা পয়সা লুট করে খেয়ে যায় যে, ওখানে চারতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল, কিন্তু থাকার উপযোগী ছিলনা। তখন যিনি মেয়র ছিল- সাদেক হোসেন খোকা, সে সব টাকাই লুট করে খেয়ে চলে যায়, চুরি করে চলে যায়।”

নতুন করে প্রকল্প নেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা জানান, প্রথম প্রকল্পে ১৩টা বহুতল ভবনের পরিকল্পনা ছিল। দয়াগঞ্জে পাঁচটি ভবনে ৪৪০টি ফ্ল্যাট, ধলপুরে পাঁচটি ভবনে ৪৮০টি ফ্ল্যাট এবং সূত্রাপুরে তিনটি ভবনে ২২৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণের প্রকল্প ছিল। মোট ১৯০ কোটি টাকার পরিকল্পনা ছিল।

তার মধ্যে নির্মাণ শেষ হওয়া হওয়া চারটি ভবন সোমবার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, “পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনের কথা আমি মন্ত্রীদের বলে দিয়েছি। তাদের (পরিচ্ছন্নতাকর্মী) জীবনমান যেন সুন্দর হয় সেটা নিশ্চিত করা সরকার হিসেবে আমাদের দায়িত্ব।”

ঢাকার মতো প্রতিটি জেলা-উপজেলায়ও যারা পরিচ্ছন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাদের আবাসনের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন তিনি।