রোববার বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের চিকিৎসক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখানে একটা দুঃখের কথা বলতে চাই। যেখানে ৫০ বেডের আমাদের একটা হাসপাতালে কমপক্ষে ১০ জন ডাক্তার থাকার কথা, কোথাও কোথাও একজন, কোথাও কোথাও খুব বেশি হলে চারজন। সেখানে কিন্তু ডাক্তার থাকে না। মানুষ তাহলে সেবা পাবে কিভাবে? এটা আমার প্রশ্ন।”
জনগণকে অবহেলা না করার অনুরোধ জানিয়ে চিকিত্সকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পদ আমরা সৃষ্টি করে দিয়েছি। কিন্তু সেখানে আমরা ডাক্তার পাই না। নিয়োগও আমরা দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কেন এই অবহেলা মানুষের প্রতি। এটা নিশ্চিয়ই জনগণ আকাঙ্ক্ষা করে না। সেটা আমি আপনাদের ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ করব।”
উপজেলায় চিকিৎসকদের আবাসন সমস্যার বিষয়টি স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটা অসুবিধা আছে সেখানে। সেটা হল থাকার অসুবিধা। ইতিমধ্যে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রতিটি উপজেলায় বহুতল ফ্ল্যাট তৈরি করে দেব। যারাই যাবে তারা যেন ভাড়া থাকতে পারেন।”
গণভবনে রোববার বিকালে এই অনুষ্ঠানে উপজেলা হাসপাতালগুলোকে উন্নত করতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে উন্নতমানে নেওয়ার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সেখানে শত বছরের পুরনো বিল্ডিং, কেউ কেউ এটাকে হেরিটেজ বলেন। কিন্তু হেরিটেজ মাথায় ভেঙে পড়লে কি হবে সেটা আর কেউ ভাবে না।
“আমি নতুন প্ল্যান তৈরি করেছি। অত্যন্ত আধুনিক মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল আমরা নির্মাণ করে দেব। ইতোমধ্যে আমরা শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করেছি। নতুন হাসপাতাল হলে এই শয্যা সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করা হবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের লক্ষ্য চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছি।”
দেশের জনগণের প্রতি তার সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা ১০ বছর পার করছি। এর আগে ছিলাম ৫ বছর। বাংলাদেশের মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। ক্ষমতা আমরা হাতে নিয়েছি এই চিন্তা থেকে যে, জনগণের সেবা করা আমার কর্তব্য, আমার দায়িত্ব। নিজেরা কি পেলাম, না পেলাম সে চিন্তা করি না। চিন্তা একটাই মানুষকে কতটুকু দিতে পারলাম।”
চিকিৎসক ও নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের উন্নত প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রশিক্ষণটা একান্তভাবে প্রয়োজন। ভালোভাবে ট্রেনিং দিয়ে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে চাই।”
স্বাস্থ্য খাতে সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, “দীর্ঘ ২১ বছর পর জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
সরকার গঠন করে। সেসময় আমরা দেশের ইতিহাসে প্রথম ‘বঙ্গবন্ধুশেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা
করি।”
২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও সিলেটে আরো তিনটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “লক্ষ্য আছে প্রতি বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দেব। আবার যদি ক্ষমতায় আসতে পারি নিশ্চয়ই আমরা তা করব।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি ৪২টি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হয়েছে এবং বেসরকারি ৬৯টি মেডিকেল কলেজ বাংলাদেশে আছে।
সরকারি ও বেসরকারি মিলে ২৮টি ডেন্টাল কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি
অ্যান্ড রিহ্যাবিলেশন (নিটোর) এর শয্যা সংখ্যা ৫০০ থেকে উন্নীত করে এক হাজার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “উপজেলা হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৫০ করে দিয়েছি। জেলার জনসংখ্যার ভিত্তিতে জেলা হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা একশ থেকে বৃদ্ধি করে কোথাও পাঁচশ বা কোথাও তিনশ করে দিয়েছি।”
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েনের মহাসচিব মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।