রিজার্ভ চুরি: ফিলিপিন্সে সিআইডির প্রতিবেদনে ‘হ্যাকিং’ উল্লেখ

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি ফিলিপিন্সের আদালতে যে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে, তাতে ‘হ্যাকিং’য়ের কথাই বলেছে।

লিটন হায়দার অপরাধ বিষয়ক প্রধান প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 July 2018, 07:14 PM
Updated : 8 July 2018, 07:14 PM

তবে কোথা থেকে এই হ্যাকিং হয়েছে বা কারা করেছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য ছিল না এই প্রতিবেদনে।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে (ফেড) রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়।

পাঁচটি সুইফট বার্তার মাধ্যমে চুরি হওয়া এ অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া ২ কোটি ডলার ফেরত এলেও ফিলিপিন্সে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার জুয়ার টেবিল ঘুরে হাতবদল হয়। তার মধ্যে দেড় কোটি ডলার ফেরত এলেও বাকি অর্থ উদ্ধারে এখনও কোনো অগ্রগতি নেই।

রিজার্ভ চুরির এই ঘটনা তদন্তের ভার বাংলাদেশে চাপে সিআইডির উপর। ফিলিপিন্সের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় দেশটির সরকারও, যে ব্যাংকটির মাধ্যমেই এই অর্থ স্থানান্তর হয়েছিল। সেখানে আদালতেও চলছে মামলা। 

সিআইডির বিশেষ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ম্যানিলার বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে পাঠানো চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন তারা পাঠিয়েছেন।

“দূতাবাসের চিঠি বাংলাদেশে আসার পর সিআইডি বাংলাদেশের আদালতের অনুমতি নিয়ে একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন তৈরি করে। আমরা সেই প্রতিবেদনটি জমা দিয়েছি। যেখানে হ্যাকিং হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে।”

বাংলাদেশ ব্যাংক সিআইডির ফরেনসিক দল (ফাইল ছবি)

ফিলিপিন্সের আদালতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দুজন সাক্ষ্যও দিয়েছেন।

এই দুজন হলেন সিআইডির অতিরিক্ত সুপার ও বাংলাদেশে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রায়হান উদ্দিন খান ও ফাহিম হোসেন ।

“গত ৫ জুন তারা আদালতে গিয়ে প্রতিবেদন জমা দেন এবং বিচারকের কাছে জবানবন্দি প্রদান করেন,” বলেন মোল্যা নজরুল।

রায়হান উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আদালত তার কাছে জানতে চেয়েছিল এই ঘটনার সঙ্গে আরও কোনো দেশ, কোনো দেশের নাগরিক, ক্যাসিনো এবং আরসিবিসি ব্যাংক জড়িত আছে কি না? উত্তরে তিনি ‘হ্যাঁ’ বলেছেন।

হ্যাকিংই হয়েছিল কি না- ফিলিপিন্সের আদালতের এই প্রশ্নেও ‘হ্যাঁ’ বলে এসেছেন সিআইডি কর্মকর্তারা।

মোল্যা নজরুল বলেন, তাদের তদন্ত এখনও শেষ হয়নি।

“যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে, সেটা অন্তর্বর্তী। তদন্ত চলছে, আরও তথ্য পাওয়া যাবে।”

রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাকাতি শহরের জুপিটার স্ট্রিট শাখা, যার মাধ্যমে লেনদেন হয় বাংলাদেশের রিজার্ভের অর্থ

এ বছরের শেষের দিকে তদন্ত শেষ করা যাবে বলে আশা করছেন মোল্যা নজরুল।

রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর ওই বছরের ১৯ মার্চ মতিঝিল থানায় বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক মো. জোবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।

এই ঘটনার পর গভর্নরের পদ ছাড়তে হয়েছিল আতিউর রহমানকে।

বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলা এই সাইবার চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলেও এ পর্যন্ত তা প্রকাশ করা হয়নি।