সোমবার ঢাকায় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন শহীদুল হক।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে ঝুলে থাকা তিস্তা পানিবন্টন চুক্তিসহ দ্বিপক্ষীয় সব বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বৈঠকের ফলাফল নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট।
বৈঠকে পর এক যৌথ বিবৃতিতে শহীদুল হক বলেন, “ভারত যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যার (তিস্তা চুক্তি) সমাধানে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে, এতে আমি খুবই খুশি।”
অন্যদিকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং তিস্তা চুক্তির অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে বলেন, “এই সমস্যাটির সমাধানে আমরা কঠোর পরিশ্রম করছি।”
এর আগে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে শিক্ষা, সংস্কৃতি, সড়ক অবকাঠামো এবং যোগাযোগ সংক্রান্ত ছয়টি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে নুমালিগড় এবং পার্বতীপুরের মধ্যে মৈত্রী পাইপলাইন স্থাপন, প্রসার ভারতী এবং বাংলাদেশ বেতারের মধ্যে সহযোগিতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইসিসিআর উর্দু চেয়ার প্রতিষ্ঠা এবং জিসিএনইপি-বিএইসির মধ্যেকার চুক্তির বর্ধিতকরণের সমঝোতা।
এছাড়া দুটি অনুদান প্রকল্পের জন্যও সমঝোতা চুক্তি হয়েছে। একটি প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের ৫০৯টি স্কুলে ভাষা গবেষণাগার স্থাপন করবে ভারত। অন্য প্রকল্পটি হল রংপুর শহরের কয়েকটি সড়ক উন্নয়ন।
সমঝোতা স্মরকগুলোর বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “বাংলাদেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, জনকল্যাণ, সড়ক অবকাঠামোসহ বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক খাতের উন্নয়নে আমাদের অংশগ্রহণ প্রচেষ্টার অংশ এটি। এজন্য আমরা ১৬০০ কোটি টাকা দিচ্ছি।”
ভারতকে বাংলাদেশের ‘বিশ্বস্ত উন্নয়ন সহযোগী’ হিসেবে উল্লেখ করে বিজয় গোখলে বলেন, গত সাত বছরে বাংলাদেশকে দেওয়া ঋণের পরিমাণ ৮০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে।
বাংলাদেশ যেহেতু উন্নয়নকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে, ফলে এই ঋণ খুবই কার্যকর হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ যে শুধু ভারতের ঘনিষ্ঠই নয়, বরং দুই দেশের পথচলা একসাথেই- প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে গোখলে বলেন, “২০১৭ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর এবং ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময় যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল, তার প্রায় সব ক্ষেত্রেই আমরা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি।”
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য দ্বিতীয় ধাপে মানবিক সহায়তা পাঠানোরও ঘোষণা দেন।
এর আওতায় রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্য সেবার বিভিন্ন সরঞ্জামের সঙ্গে গুঁড়ো দুধ, শিশুখাদ্য, শুকনো মাছ, রান্নার চুলা ও জ্বালানি, রেইনকোট এবং গামবুটও থাকবে বলে জানান তিনি।
ভারত এর আগে গত সেপ্টেম্বরে তিন লাখ শরণার্থীর জন্য ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়েছিল।
মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ যেভাবে মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে, তা প্রশংসার দাবি রাখে বলেও জানান ভারতের পররাষ্ট্র সচিব।
“বাস্তুচ্যুত লোকজনকে দ্রুত তাদের দেশে ফেরাতে এবং এই সঙ্কট সমাধানে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তার প্রতি ভারতের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।”
মিয়ানমারের রাখাইনেও ভারত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে বলে জানান তিনি। বাংলাদেশ থেকে যারা ফেরত যাবে তাদের জন্য রাখাইনে ঘরবাড়ি নির্মাণে কাজ করছে ভারত।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুই দেশের বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা এবং দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক।
তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে তাদের যে অবস্থান, বিশেষ করে তারা যে এই সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়, তাতে আমরা আমরা খুবই খুশি।”
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগে বিজয় গোখলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও দেখা করার কথা রয়েছে তার।
গত ২৯ জানুয়ারি ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব নেওয়ার পর রোববার প্রথমবারের মত বাংলাদেশে আসেন বিজয় গোখলে।
মঙ্গলবার সকালে ঢাকা ছাড়বেন তিনি।