আগামী ১৫ এপ্রিল সূচনা বক্তব্য ও সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে এ চার আসামির বিরুদ্ধে বিচারিক কাজ শুরুর দিনও নির্ধারণ করা হয়েছে।
সোমবার চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে মামলাটির অভিযোগ গঠন হয়।
প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম ও রেজিয়া সুলতানা চমন অভিযোগ গঠনের শুনানিতে ছিলেন।
আসামি খালেক মণ্ডলের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন এবং আরেক আসামি সাতক্ষীরার রাজাকার কমান্ডার হিসেবে পরিচিত আব্দুল্লাহ হেল বাকীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান।
পলাতক দুই আসামির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী গাজী এম ই এইচ তামিম।
প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত ১৮ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষে আজ তা আদেশের জন্য রেখেছিল আদালত। গ্রেপ্তার আসামিদের উপস্থিতিতে আদালত আজ অভিযোগ গঠন করেছে।”
আটক করে নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনায় আসামিদের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগ আমলে নিয়েছে আদালত। এর মধ্যে রয়েছে ৬ জনকে হত্যা, ২ জনকে ধর্ষণ, ১৪ জনকে শারীরিক নির্যাতন।
অভিযোগ গঠনের সময় আসামিরা তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন।
তদন্ত সংস্থার দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর গত বছরের ২০ মার্চ ট্রাইব্যুনালে এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উপস্থাপন করে প্রসিকিউশন।
২০১৫ সালের ১৬ জুন ভোরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খলিলনগর মহিলা মাদ্রাসায় বৈঠকের সময় খালেক মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ওই বছরের ২৫ অগাস্ট তার বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলার মধ্যে শহীদ মোস্তফা গাজী হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
শিমুলবাড়িয়া গ্রামের রুস্তম আলীসহ পাঁচজনকে হত্যার অভিযোগে ২০০৯ সালের ২ জুলাই খালেক মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন শহীদ রুস্তম আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম গাজী।
এ মামলার চার আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট থেকে তদন্ত শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। তদন্ত শেষ হয় গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি। পরে ৮ ফেব্রুয়ারি এ চার আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এ মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা ও জব্দ তালিকার সাক্ষীসহ মোট ৬০ জন সাক্ষী করা হয়েছে।
সাত অভিযোগ
অভিযোগ-১: ১৯৭১ সালের ১৮ অগাস্ট সকাল ৮টার দিকে বেতনা নদীর পাড়ে বুধহাটা খেয়াঘাটে আফতাবউদ্দিন ও সিরাজুল ইসলামকে রাজাকার কমান্ডার ইছাহাক (মৃত) ও তার সহযোগীরা গুলি করে হত্যা করে। পরে স্থানীয় খলিলুর রহমান, মো. ইমাম বারী, মো. মুজিবর রহমান ও ইমদাদুল হককে রাজাকার বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্র ডায়মন্ড হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।
অভিযোগ-২: ১৯৭১ সালের পহেলা ভাদ্র ধুলিহর বাজার থেকে কমরউদ্দিন ঢালী নামের একজনকে ধরে দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে যায় ১০/১২ জন রাজাকার সদস্য। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন সাতক্ষীরা মহাকুমার রাজাকার কমান্ডার এম আব্দুল্লাহ আল বাকী ও খান রোকনুজ্জামান। পরে ঢালীর মৃতদেহ পাওয়া যায় বেতনা নদীর পাড়ে।
অভিযোগ-৩: ১৯৭১ সালের পহেলা ভাদ্র বুধবার বেলা ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার দিকে রাজাকার কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল বাকী, রোকনুজ্জামান খানসহ ৪-৫ জন মিলে সবদার আলী সরদারকে চোখ বেঁধে পিকআপ ভ্যানে তুলে নিয়ে যায়। পরে আর তার সন্ধান মেলেনি।
অভিযোগ-৪: সোহেল উদ্দিন সানা নামের এক ব্যক্তি তার বড় ছেলে আব্দুল জলিল সানাকে সঙ্গে নিয়ে পহেলা ভাদ্র বুধহাটা বাজার অতিক্রম করার সময় রাজাকার কমান্ডার ইছাহাক (মৃত) ও তার সঙ্গী রাজাকারদের হাতে আটক হন। পরে তাদের ডায়মন্ড হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। সোহেল ও সানার সন্ধান আর মেলেনি।
অভিযোগ-৫: ১৯৭১ সালে ৭ আষাঢ় সকাল ৭টার দিকে আবুল হোসেন ও তার ভাই গোলাম হোসন নিজেদের বাড়ির পাশে হালচাষ করছিলেন। সকাল ৯টার দিকে গোলাম হোসেন বাড়িতে নাস্তা খেতে এলে আসামি আব্দুল খালেক মণ্ডল ও জহিরুল ইসলাম টিক্কা খানসহ ১০/১২ জন রাজাকার সদস্য এসে তাকে পাশের পাটক্ষেতে ধরে নিয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা করে।
অভিযোগ-৬: ১৯৭১ সালের ২ ভাদ্র সকালে বাশদহ বাজারের ওয়াপদা মোড় থেকে মো. বছির আহমেদকে ধরে নিয়ে নির্যাতনের পর তার বুড়ো আঙ্গুলের রগ কেটে দেয় রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা।
অভিযোগ-৭: ১৯৭১ সালের জৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি কোনো এক সময়ে আসামি আব্দুল খালেক মণ্ডল ও রাজাকার কমান্ডার জহিরুল ইসলাম টিক্কা খান একদল পাকিস্তানি সৈন্যকে সঙ্গে নিয়ে কাথণ্ডা প্রাইমারি স্কুলে স্থানীয় গ্রামবাসীদের ডেকে মিটিং করে। সেই মিটিংয়ে বলা হয়, যারা আওয়ামী লীগ করে এবং যারা মুক্তিযুদ্ধে গেছে তারা ‘কাফের’। এরপর তারা কাথণ্ডা ও বৈকারি গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়া ব্যক্তিদের বাড়ি-ঘর লুট করে জ্বালিয়ে দেয়।
সে সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দুই সদস্য মৃত গোলাম রহমানের স্ত্রী আমিরুনকে তার বাড়ির রান্নাঘরের পেছনে আটকে ধর্ষণ করে। এছাড়া বৈকারি গ্রামের ছফুরা খাতুনকে মৃত শরীয়তউল্লাহর ফাঁকা বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করে চার পাকিস্তানি সৈন্য।