শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে গঠিত ওই পর্ষদের সভাপতি হবেন ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার। সেনাবাহিনীর শিক্ষা কোরের কর্মকর্তাদেরও ওই কমিটিতে রাখতে হবে। প্রিন্সিপালও হবেন সেনাবাহিনী থেকে আসা।
লেকহেড গ্রামার স্কুল খুলে দিতে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিলের শুনানি করে অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়ার নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারকের আপিল বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেয়।
স্কুল মালিক ও অভিভাবকদের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এএফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার আখতার ইমাম ও রাশনা ইমাম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
পরে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, “লেকহেড স্কুলটির অনেক অনিয়ম। এটির গভর্নিং বডি নাই, শিক্ষকদের বিজ্ঞাপন দিয়ে নিয়োগ করা হয়নি…। এছাড়া স্কুলটির বিরুদ্ধে সরকারের সবচেয়ে বড় অভিযোগ হল- স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা, অনেক সাবেক শিক্ষক, বর্তমান শিক্ষক, কিছু অভিভাবকের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আছে।
“এ ব্যাপারে আমরা আদালতকে কিছু ক্লাসিফায়েড তথ্য দিয়েছি। এর ভিত্তিতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত আদেশ দিয়েছে, আগামী সাত দিনের ভেতরে শিক্ষা সচিবের অধীনে ঢাকার ডিভিশনাল কমিশনারকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি কমিটি করার জন্য।”
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “এই কমিটি স্কুল পরিচালনার ব্যাপারে দেখভাল করবে। এই কমিটি সেনাবাহিনীর শিক্ষা কোরের কর্মকর্তাদের ভেতর থেকে একজনকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেবে। সাত দিনের মধ্যে এসব হলেই স্কুলটি আবার চালু করা যাবে।”
আপিল বিভাগে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই পরিচালনা পর্ষদের অধীনেই স্কুলটি পরিচালিত হবে জানিয়ে মাহবুবে আলম বলেন, “হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল গ্রহণ করা হয়েছে। এখন আপিল শুনানি হবে। কোন কোন গ্রাউন্ডে শুনানি করব ইতোমধ্যে সে নোট আদালতে জমা দিয়েছি।”
আদেশের পর রাশনা ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, “সাত দিনের মধ্যে কমিটি গঠন করা হলেই স্কুল খুলে দেওয়া যাবে বলে আমরা আশা করছি।”
তিনি বলেন, পরিচালনা পর্ষদে সেনাবাহিনীর দুজন প্রতিনিধিকে রাখতে বলেছে আদালত। তাদের মধ্যে শিক্ষা কোরের কর্মকর্তাকে স্কুলের অধ্যক্ষ করতে বলা হয়েছে। এই কমিটি স্কুলের নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম নিশ্চিত করবে।
জঙ্গি কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতা, ধর্মীয় উগ্রবাদে উৎসাহ দেওয়াসহ কয়েকটি অভিযোগে গত ৬ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঢাকায় লেকহেড গ্রামার স্কুল বন্ধের নির্দেশ দেয়। ঢাকা জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট ইলিয়াস মেহেদী পরদিন ওই স্কুলে গিয়ে সিলগালা করে দেন।
ওই স্কুলের মালিক খালেদ হাসান মতিন এবং ১২ শিক্ষার্থীর অভিভাবক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে যায়। তাদের দুটি রিট আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের হাই কোর্ট বেঞ্চ গত ৯ নভেম্বর রুল জারি করে।
লেকহেড গ্রামার স্কুলের গুলশান ও ধানমণ্ডি শাখা বন্ধের আদেশ কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, কেন স্কুলের মালিককে স্কুল খোলা ও পরিচালনা করতে দেওয়ার জন্য বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়া স্কুলের শিক্ষার্থীদের সকল ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।
১৪ নভেম্বর ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্কুলটি খুলে দেওয়ার রায় দেয় হাই কোর্ট। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে চেম্বার আদালত হাই কোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করে দেয়।
বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে এলে স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও দশ দিন বাড়িয়ে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল করতে বলে সর্বোচ্চ আদালত। এর ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল করলে আপিল বিভাগ শুনানি নিয়ে আদেশ দেয়।