আদালত প্রাঙ্গণে শামসুজ্জামান শামস।

)<div class="paragraphs"><p>আদালত প্রাঙ্গণে শামসুজ্জামান শামস।</p></div>
বাংলাদেশ

শামসের জামিন শুনানিতে যা হল

Byআদালত প্রতিবেদক

রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগে একজন ব্যক্তি কী করে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলেন, সেই প্রশ্ন এসেছে সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসের জামিন শুনানিতে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যেসব ধারায় এই মামলা করা হয়েছে, সেগুলো বিশ্লেষণ করে শামসের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেছেন, “এ ধরনের অভিযোগ তো স্টেটের শোলডারে পড়ে। এ খবরে একজন ব্যক্তি ক্ষুব্ধ হয় কী করে?”

রমনা থানার এই মামলায় প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসের জামিন শুনানি শেষে বিচারক সেই আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

প্রথম আলোয় গত ২৬ মার্চ প্রকাশিত যে প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা চলছে, তার প্রতিবেদক ছিলেন শামস। একজন শ্রমজীবী মানুষকে উদ্ধৃত করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, “পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।”

ওই মন্তব্য ধরে শিরোনাম করা হলেও ছবি দেওয়া হয় আরেক শিশুর, যার কথা প্রতিবেদনের ভেতরে ছিল। ওই ছবি ও শিরোনাম দিয়ে সোশাল মিডিয়ায় একটি কার্ড পোস্ট করা হয়, যা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাত্তর টেলিভিশনে একটি প্রতিবেদনও প্রচার করা হয়।

পরে প্রথম আলো প্রতিবেদনটি থেকে ছবি সরিয়ে শিরোনাম বদলে দেয়। পাশাপাশি তাদের সোশাল মিডিয়ায় দেওয়া পোস্টও প্রত্যাহার করা হয়।

প্রতিবেদন প্রকাশের তিন দিন পর বুধবার সকালে খবর আসে, শামসকে তার সাভারের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ‘সিআইডি’ পরিচয় দিয়ে। প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার সকালে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। 

এদিকে মঙ্গলবার গভীর রাতে একজন যুবলীগ নেতা এবং বুধবার গভীর রাতে এক আইনজীবী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি মামলা করেন শামসের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে রমনা থানায় আইনজীবী মশিউর মালেকের করা মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হল।

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে ‘হুকুমের আসামি’ এবং নাম উল্লেখ না করে একজন ‘সহযোগী ক্যামেরাম্যানকে’ও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।

বাদী মশিউর মালেক এজাহারে অভিযোগ করেছেন, স্বাধীনতা দিবসের দিনে প্রথম আলো ‘অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা ও রাষ্ট্রবিরোধী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে জনমনে ‘অসন্তোষ’ সৃষ্টি হয়েছে এবং দেশে ‘অস্থিতিশীল পরিবেশ’ সৃষ্টি হয়ে ‘আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটার উপক্রম’ হয়েছে। 

শামসকে বৃহস্পতিবার সকালে আদালতে হাজির করার পর তাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। রিমান্ডের কোনো আবেদন তিনি করেননি।

অন্যদিকে শামসের পক্ষে তার আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। সেই আবেদনের শুনানি হয় দুপুরে। শুনানির শুরুতে আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার বলেন, আসামির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা ভিত্তিহীন।

তিনি বলেন, “এ মামলার এজাহারে বর্ণিত ঘটনা, অর্থাৎ প্রতিবেদনটি করা হয়েছে দিনমজুর জাকির হোসেন এবং সবুজ নামের প্রথম শ্রেণির একজন ছাত্রের বক্তব্য দিয়ে। এটিতে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। এখানে দেশের স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়নি।

“ওই প্রতিবেদনের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ছবির সঙ্গে দিনমজুর জাকির হোসেনের বক্তব্য ছিল, তা প্রথম আলোর কাছে অসঙ্গতিপূর্ণ মনে হওয়ায় প্রথম আলো স্ব উদ্যোগে তা প্রত্যাহার করে নেয়। দুঃখ প্রকাশ করে, ক্ষমা চায়। পরে সংশোধনী আকারে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। কোনো স্বাধীনতাবিরোধীর মিথ্যা তথ্য দিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে রিপোর্ট করা হয়নি।”

আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, শুনানির সময় ইউটিউব, ফোইসবুক ও একাত্তর টেলিভিশনের তিনটি লিংক প্রামাণ্য হিসাবে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, তবে সেগুলো আদালতের সামনে উপস্থাপন করা হয়নি। তাই আসামি কী অপরাধ করেছেন– তা ‘নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না’।

এরপর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এজাহারের ধারাগুলো বিশ্লেষণ করে এ আইনজীবী বলেন, “রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের কথা বলা হয়েছে। বাদী কি কোনো রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অথবা রাষ্ট্রের কোনো কর্মচারী? প্রাইমারি রেসপনসিবিলিটি কার?

“এ ধরনের অভিযোগ তো স্টেটের শোলডারে পড়ে। এ খবরে একজন ব্যক্তি ক্ষুব্ধ হয় কি করে? তিনি কীভাবে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষুব্ধ হলেন? আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর বিষয়ে প্রতিকার চাওয়া বা অভিযোগ দেওয়ার অধিকার কীভাবে বাদীর হল?

আইন থেকে পড়ে শুনিয়ে সমাজী বলেন, “যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে ইচ্ছাকৃত বা জ্ঞাতসারে এমন কোনো তথ্য উপাত্ত প্রেরণ করেন, যা আক্রমণাত্মক, ভীতিপ্রদর্শক অথবা মিথ্যা বলে কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত অপমান, অপদস্থ বা হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য প্রেরণ, প্রকাশ প্রচার করেন, তাহলে এ অপরাধ হয়। মামলার বাদীকে কীভাবে হেয় করা হল?”

এরপর আসামির এ আইনজীবী এজাহারের পুরো অংশ আদালতে পড়ে শোনান। তিনি বলেন, “প্রসিকিউশন কেইস ওয়েল ফাউন্ডেড নয়। সেহেতু ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারায় আসামি  জামিন পাওয়ার অধিকারী।”

মাত্র এক মিনিটে এর বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষে বক্তব্য দেন আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কমকর্তা এস আই নিজাম উদ্দিন ফকির।

শুনানির সময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সাংবাদিক শামসকে যুক্তি শুনতে দেখা যায়। তার মধ্যে তেমন কোনো ভাবান্তর দেখা যায়নি।

প্রায় ২৫ মিনিট শুনানি নিয়ে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন।

SCROLL FOR NEXT