সৌদি আরবের মক্কায় মসজিদ আল-হারামে ক্রেইন উল্টে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০৭ জনে দাঁড়িয়েছে, যাদের প্রায় সবাই হজ পালনে গিয়েছিলেন।
Published : 12 Sep 2015, 10:11 AM
নিহতের পাশাপাশি আহতের সংখ্যাও বেড়ে ২৩০ ছাড়িয়েছে। আহতদের মধ্যে ৪০ জন বাংলাদেশি বলে দেশটিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
নিহতদের মধ্যে কোনো বাংলাদেশি নেই বলে সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন।
মসজিদ আল হারামের সংস্কার কাজ চলার মধ্যে হজের কয়েকদিন আগে সংঘটিত এই দুর্ঘটনা তদন্তে মক্কার আমির খালেদ আল-ফয়সাল দুটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছে সৌদি গেজেট।
ধুলি ঝড়ের মধ্যে শুক্রবার জুমার দিনে সন্ধ্যায় মুসলমানদের পবিত্রতম স্থান কাবা শরিফ ঘিরে থাকা মসজিদ আল-হারামে বিরাট একটি ক্রেইন উল্টে পড়ে।
দুর্ঘটনার পরপর নিহতের সংখ্যা ৮৭ জন জানিয়েছিলের মক্কার কর্মকর্তারা। পরে সৌদি সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে রয়টার্স নিহতের সংখ্যা ১০৭ এবং আহতের সংখ্যা ২৩৮ জন বলে জানিয়েছে।
নিহত সবার নাগরিক পরিচয় জানা যায়নি। তবে দুজন ভারতীয় রয়েছেন বলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
সৌদি আরবের সিভিল ডিফেন্সের প্রধান জেনারেল সুলাইমান আল-আমর আল- ইখবারিয়া টেলিভিশনকে বলেছেন, দুর্ঘটনাস্থল পরিষ্কার করে ফেলা হয়েছে।
আহতদের সুচিকিৎসার সর্বোচ্চ বন্দোবস্ত করতে মক্কার আমির নির্দেশ দিয়েছেন বলে তার মুখপাত্র সুলতান আল- দোসারি জানিয়েছেন।
সৌদি রেড ক্রিসেন্টের হজ ও উমরাহ বিষয় বিভাগের প্রধান খালেদ আল-হাবশি জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাস্থল থেকে আহতদের হাসপাতালে নিতে ৬৮টি উদ্ধারকারী দল কাজ করে। যারা অল্প আহত হয়েছেন, দুর্ঘটনাস্থলেই তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
“সন্ধ্যা ৫টা ১৯ মিনিটে দুর্ঘটনার পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমাদের উদ্ধারকারী দল সেখানে পৌঁছে যায়। প্রথমেই ৪৯ জনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল।”
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বাংলাদেশি নাগরিক শামসুদ্দিন আহমেদ টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাগরিবের আগে প্রচণ্ড বালু ঝড় হয়। এ সময় ক্রেইনটি ভেঙে পড়ে। আমাদের চোখের সামনে বহু মানুষকে আহত নিহত হতে দেখেছি।”
প্রতি বছর ৩০ থেকে ৪০ লাখ মুসলমান হজ পালন করতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই মসজিদে সমবেত হন। এবার প্রায় এক লাখ বাংলাদেশির হজে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে, অর্ধেক এরই মধ্যে পৌঁছে গেছেন।
আল আরাবিয়া টেলিভিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রবল ঝড়ের কারণে ক্রেইন উল্টে পড়লে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে। গত কয়েক দিন ধরে সৌদি আরবের পশ্চিমাঞ্চলে শক্তিশালী বালু ঝড় বইছে।
সুলাইমান আল-আমর স্থানীয় একটি টেলিভিশনকে বলেন, ঝড়ে গাছ উপড়ে পড়ায় ক্রেইন স্থানচ্যুত হয়ে আছড়ে পড়ে।
টুইটারে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ছবিতে দেখা যায়, হজের ইহরাম পরিহিত রক্তাক্ত বহু মানুষের দেহ কংক্রিটের স্তূপের মধ্যে পড়ে আছে। ছাদ ভেঙে নেমে আসা লাল রঙের একটি বিশাল ক্রেইনের অংশবিশেষও এসব ছবিতে দেখা যাচ্ছে।
একসঙ্গে ২২ লাখ হাজির স্থান সঙ্কুলানের জন্য গতবছর মসজিদের এলাকা ৪ লাখ বর্গমিটার সম্প্রসারণের কাজ শুরু করে সৌদি সরকার। এই নির্মাণ কাজের জন্য ভারী কয়েকটি ক্রেইনও সেখানে রাখা ছিল বলে রয়টার্সের এক ছবিতে দেখা যায়।
এক প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, পৌনে ৬টার দিকে একটি ক্রেইন মসজিদের পূর্ব অংশের চতুর্থ তলার ওপর আছড়ে পড়ে। হজে আসা মানুষ মাগরিবের নামাজের আগে জড়ো হওয়ায় সে সময় ওই অংশটি ছিল বহু মানুষে পূর্ণ।
গত চল্লিশ বছরে সৌদি আরবে হজ করতে গিয়ে বিভিন্ন দুর্ঘটনা ও রোগ ভুগে অন্তত তিন হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
২০০৬ সালে কাবা শরিফের কাছে একটি বহুতল হোটেল ভবন ধসে ৭৬ জন নিহত হন।
নিকট অতীতে হজ মৌসুমে সবচেয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে ১৯৯০ সালের ২ জুলাই। ওই ঘটনায় একটি সুড়ঙ্গে পদদলিত হয়ে ১ হাজার ৪২৬ জনের মৃত্যু হয়।